ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলকলির সমাধিসৌধ

হাতির জন্য ভালবাসা স্মৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগ

প্রকাশিত: ২২:০৩, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০

হাতির জন্য ভালবাসা স্মৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগ

জীতেন বড়ুয়া ॥ খাগড়াছড়ি-পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূ-প্রাকৃতিক গঠনের কারণে এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা একসময় বেশ দুরূহ ছিল। পাহাড়বেষ্টিত ভৌগোলিক গঠন এই অঞ্চলকে স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৮শ’ কিমি দীর্ঘ পর্বতশ্রেণীর অংশ। তিন জেলায় কর্ণফুলী ছাড়াও বয়ে গেছে একাধিক পাহাড়ী নদী। ১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসেবে যুক্ত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম বা চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস নামটি ব্রিটিশদের দেয়া। পাহাড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশির ভাগই কৃষিভিত্তিক জীবিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসনিক কার্যক্রমে অন্যতম বড় বাধা দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা। তিন দশক আগেও পাহাড়ে প্রশাসনিক কাজে হাতি ব্যবহার করত জেলা প্রশাসকরা। ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি জেলা ঘোষণার পর থেকেই জেলা প্রশাসকরা প্রশাসনিক কাজে হাতি ব্যবহার করত। হাতির পিঠে চড়ে প্রশাসকরা সরকারী কাজ করত। সর্বশেষ ১৯৯০ সালে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকের ব্যবহৃত সর্বশেষ হাতির নাম ছিল ‘ফুলকলি’। এ সময় অন্য একটি বন্য হাতির আক্রমণে ‘ফুলকলি’ মারা যায়। পরে হাতির স্মৃতি সংরক্ষণে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গোলাবাড়ি এলাকায় ফুলকলিকে সমাধিস্থ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণের অভাবে ‘ফুলকলি’র কবরস্থান প্রায় জরাজীর্ণ এবং পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের লাগায়ো গোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ফুলকলির কবরটি পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে উপেক্ষিত ছিল। ঝোপঝাড় ও জঙ্গলে ঢেকে যায় ‘ফুলকলি’র কবর। বিভিন্ন প্রকাশনায় ‘ফুলকলি’র কবরের কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে কবরটি সংরক্ষণের অভাবে এটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। খাগড়াছড়িতে পর্যটকরা বেড়াতে আসলেও অনেকের ‘ফুলকলি’র ইতিহাস অজানা রয়ে যায়। তবে দীর্ঘদিন পরে ‘ফুলকলি’র কবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি জানান, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে হাতির অভিন্ন সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে একসময়ে পিছিয়ে পড়া জনপদ পার্বত্য চট্টগ্রামের ভৌগোলিক গঠনের কারণে জেলা প্রশাসকরা পোষ্য হাতি ব্যবহার করত। ওই সময়ে হাতির ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। ৯০ দশকের খাগড়াছড়ির তৎকালীন জেলা প্রশাসক খোরশেদ আনসার খাঁন ‘ফুলকলি’র পিঠে চড়ে প্রত্যন্ত এলাকায় যেত। ফুলকলি (হাতি) এর মৃত্যুর পর তিনি পরম মমতায় এটিকে সমাধিস্থ করে। সেই সমাধি সংরক্ষণের অভাবে এতদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল। সেই ফুলকলির স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে হাতি ব্যবহারের ঐতিহ্য পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে তুলে ধরতে ‘ফুলকলির সমাধিসৌধ’ গড়ে তোলা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের নিজস্ব অর্থায়নে আগামী নবেম্বরের মধ্যে ‘ফুলকলি’র সমাধিসৌধ’ নির্মাণের কাজ শেষ হবে। এরপর এটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হবে। নান্দনিক নির্মাণশৈলী কারণে ফুলকলির ইতিহাসের পাঠের পাশাপাশি পর্যটকরা এখানে এসে মুগ্ধ হবে।’ গত ২ সেপ্টেম্বর ফুলকলি সমাধিসৌধের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করে খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। ফুলকলি সমাধিসৌধ নির্মাণে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে গণপূর্ত বিভাগ।
×