ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি

‘যতীন, সূর্যরা যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন আমরা তা সম্পন্ন করেছি’

প্রকাশিত: ২৩:১০, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

‘যতীন, সূর্যরা যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন আমরা তা সম্পন্ন করেছি’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদ কৃতী সন্তান বিপ্লবী বাঘা যতীনের ১০৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার আয়োজন করেছে। বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৭৯-১৯১৫), যিনি বাঘা যতীন নামে খ্যাত। তিনি জন্মগ্রহণ করেন কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর কয়া গ্রামে তাঁর মাতুলালয়ে। ছাত্রজীবনেই তিনি অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন এবং দেশমাতৃকার মুক্তির শপথ গ্রহণ করেন। ১৯১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তিনি ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে ওড়িশার বালাশোরে শহীদ হন। বিপ্লবী বাঘা যতীনের জীবনের মূলমন্ত্র ছিল ‘আমরা মরব, দেশ জাগবে।’ মাতৃভূমির মুক্তির জন্য তাঁর মহান আত্মত্যাগ যুগে যুগে স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত করেছে বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষের তরুণ সমাজকে। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তরুণদের এই আত্মদান অনিবার্য করেছে নৃশংস পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অবিস্মরণীয় বিজয়ে। ‘ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক নির্মূল কমিটির ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি লেখক, সাংবাদিক ও প্রামাণ্যচিত্রনির্মাতা শাহরিয়ার কবির। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শহীদ বাঘা যতীনের পৌত্র ইন্দুজ্যোতি মুখোপাধ্যায় (পশ্চিমবঙ্গ), বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সমাজকর্মী আরমা দত্ত এমপি, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম, গবেষক অরিন্দম মুখোপাধ্যায় (মহাসচিব, ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল এ্যান্ড কালচারাল হিস্ট্রি, ভারত), নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল এবং সংগঠনের আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শাখার নেতৃবৃন্দ। সভাপতির বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান দুই ধারা- মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন অহিংস অসহযোগ আন্দোলন এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের সশস্ত্র সংগ্রামের ধারার সমন্বয় করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় বিজয় অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১-এর মার্চের ১ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সাফল্যের যেমন কোন দ্বিতীয় নজির নেই, প্রবল পরাক্রমশালী পাকিস্তানী নৃশংস বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাসের যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন করাও ছিল বিশ্বের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের এক অতুলনীয় ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর স্বাধীন বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, বাঘা যতীন, সূর্য সেনরা স্বাধীনতার যে সংগ্রাম আরম্ভ করেছিলেন, আমরা তা সম্পন্ন করেছি।’ সভায় অন্য বক্তারা বলেন, অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের ব্রিটিশরা এমনকি অনেক গান্ধীবাদী ঐতিহাসিক সন্ত্রাসী বলেছেন। অথচ তাঁরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে মাতৃভূমি স্বাধীনতার জন্য তরুণদের অকাতরে জীবনদানে উদ্বুদ্ধ করেছেন। বাঘা যতীনদের দেশপ্রেম ও মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করার সংগ্রামে তরুণ সমাজকে আলোকিত করার আহ্বান জানান বিভিন্ন বক্তা। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া গ্রামে শহীদ বিপ্লবী বাঘা যতীনের জন্মভিটায় কয়া মহাবিদ্যালয়ে নির্মূল কমিটির শাখা ও বাঘা যতীন থিয়েটার যৌথভাবে শহীদ বিপ্লবী বাঘা যতীনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভার আয়োজন করেছে।
×