ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন

এবার পাওয়ার গ্রিডে আগুন, ময়মনসিংহে চার জেলা অন্ধকারে

প্রকাশিত: ২৩:১০, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

এবার পাওয়ার গ্রিডে আগুন, ময়মনসিংহে চার জেলা অন্ধকারে

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ এবার পাওয়ার গ্রিডের সার্কিট ব্রেকারে অগ্নিকা-ের ফলে মাত্র একদিনের ব্যবধানে আবারও দিনভর ভোগান্তির শিকার হয়েছেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগীসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর ও ময়মনসিংহ এই চার জেলার মানুষ। বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর কেওয়াটখালি পাওয়ার গ্রিডের ৩৩ কেভি সাব স্টেশন থেকে পল্লী বিদ্যুত সমিতি ময়মনসিংহ-১ মুক্তাগাছা ফিডারে বিদ্যুত সরবরাহ করার সময় বিকট শব্দে সার্কিট ব্রেকারে আগুন ধরে যায়। এ সময় ৩৩ কেভি সার্কিট ব্রেকারসহ কন্ট্রোলরুমের প্যানেল বোর্ড ও এর ক্যাবল পুড়ে গেলে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বন্ধ হয়ে যায় পুরো ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা। শেরপুর, নেত্রকোনা ও জামালপুরে বিকল্প ব্যবস্থায় দুপুরের মধ্যে সরবরাহ চালু করা হলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পুরো ময়মনসিংহে সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। এর আগে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট কেওয়াটখালির গ্রিডে যাওয়ার আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে পিজিসিবির কর্মীরা। এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে শর্ট সার্কিট থেকে কেওয়াটখালি পাওয়ার গ্রিডে আগুনে পাওয়ার ট্রান্সফরমার ও ব্রেকারসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি পুড়ে গেলে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পুরো সরবরাহ চালু হয় প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর। মাত্র একদিনের ব্যবধানে আবারও অগ্নিকা-ের ঘটনায় গ্রিডের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কেওয়াটখালি পাওয়ার গ্রিডের ৩৩ কেভি সাব-স্টেশন থেকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তাগাছা পল্লী বিদ্যুত সমিতিকে বিদ্যুত সরবরাহ দেয়ার জন্য সুইচ অন করার সঙ্গে সঙ্গেই শর্ট সার্কিট থেকে ৩৩ কেভির সার্কিট ব্রেকারে আগুন ধরে যায়। পরে এই আগুন মুহূর্তেই ক্যাবল হয়ে কন্ট্রোল রুমের প্যানেল বোর্ডে ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত সময়ে পিজিসিবির কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও এরইমধ্যে কন্ট্রোলরুমের সবকটি প্যানেল বোর্ড, ডিসি ও রিলে সিস্টেম পুড়ে অকার্যকর হয়ে যায়। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি-পিজিসিবি এর কেওয়াটখালিস্থ গ্রিডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল হক জানান, বৃহস্পতিবার সকালে মুক্তাগাছা পল্লী বিদ্যুত সমিতিকে সরবরাহ দেয়ার সময় শর্ট সার্কিট থেকে সার্কিট ব্রেকারে আগুন ধরে যায়। এ সময় প্যানেল বোর্ড, ডিসি ও রিলে সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুতের সরবরাহ। তবে দুপুর ১টার পর নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুরে সরবরাহ চালু করা গেলেও সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পুরো ময়মনসিংহ জেলায় বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক করতে পারেনি পিজিসিবি। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবি ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, দুপুরের দিকে বৃষ্টিতে কাজের কিছুটা বিঘœ ঘটলেও পিজিসিবি ও পিডিবি কর্মীদের অক্লান্ত চেষ্টায় দুপুরের মধ্যে শেরপুর, জামালপুর ও নেত্রকোনায় সরবরাহ দেয়া হয়েছে। দুপুরের পর ভালুকা গ্রিড থেকে ময়মনসিংহের ত্রিশাল এবং শেরপুর গ্রিড থেকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এবং ফুলপুর উপজেলায় বিদ্যুত সরবরাহ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ময়মনসিংহের চরপাড়া ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় সন্ধ্যার কিছু আগে বিদ্যুত সরবরাহ দেয়া হলেও নগরীর অন্যসব এলাকা রয়েছে অন্ধকারে। রাতের মধ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ করছে পিজিসিবির সঙ্গে পিডিবির কর্মীরা। কেওয়াটখালি কন্ট্রোলরুমের প্যানেল বোর্ড পুড়ে যাওয়ায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে প্যানেল বোর্ড আনা হচ্ছে। এটি স্থাপনের পর পুরো সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে জানায় পিডিবি। দিনভর বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ থাকায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। এ সময় অপারেশন, সিটি স্ক্যান, এক্সরেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ ব্যাহত হয়। এদিকে গত মঙ্গলবার দুপুরে কেওয়াটখালি পাওয়ার গ্রিডে শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের পর ফের বৃহস্পতিবার সকালে অগ্নিকা-ের ঘটনায় গ্রিডের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
×