ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চাঞ্চল্যকর সিনহা হত্যা

এসপি মাসুদকে আসামি করার আবেদন

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

এসপি মাসুদকে আসামি করার আবেদন

চট্টগ্রাম অফিস, স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় কক্সবাজারের এসপি এবিএম মাসুদ হোসেনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বৃহস্পতিবার আদালতে আবেদন করেন বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। শুনানি শেষে আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন। দুপুরে কক্সবাজারের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট তামান্নার ফারাহর আদালতে বাদীর আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, পুলিশ সুপারকে সিনহা হত্যা মামলায় আসামি করার আবেদন আদালত নামঞ্জুর করে আদেশে লিখেছে, মামলার তদন্তকালীন কেউ হস্তক্ষেপ ও প্রভাব বিস্তার করলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার তদন্তকারী কর্মকর্তার রয়েছে। তাই এই আবেদনটি নামঞ্জুর করা হলো। আদালত সূত্র জানায়, সিনহা হত্যা মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস তার আবেদনে পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের বিরুদ্ধে ১০টি অভিযোগ আনেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন মেজর সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেই চলেছেন। তিনি সিনহা হত্যা মামলার আসামি বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকতকে কারাগারে ডিভিশন দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন। আসামিদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। অর্থাৎ এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন তার দাফতরিক কার্যক্ষমতা আসামিদের পক্ষে কাজে লাগাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, এসব কারণে তাকে মেজর সিনহা হত্যা মামলার আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি ফৌজদারি আবেদন করা হয়। আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মামলার বাদী সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। তিনি বলেন, আমার ভাইকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ভিকটিম সিনহার বিরুদ্ধে অশ্রদ্ধা, অবমাননাকর ও মানহানিকর প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে চলেছেন। আসামিদের মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদানের জন্য কুপরামর্শ দিয়ে চলেছেন। শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন ঘটনার শুরু থেকেই আসামিদের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। উনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। মেজর সিনহার মানহানি করেছেন। হত্যা ঘটনার পর এসপি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন সিনহার গাড়িতে ইয়াবা ও মাদকদ্রব্য পেয়েছিলেন। একজন পুলিশ সুপার হিসেবে তিনি এটি বলতে পারেন না। তিনি তদন্ত কাজে প্রতিনিয়ত বাধা সৃষ্টি করে চলেছেন। তাই এসপিকে এ মামলায় আসামি হিসেবে অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রদীপের বিরুদ্ধে আরও ২ মামলা ॥ টেকনাফের বাহারছড়ার আবদুল আমিন ও হোয়াইক্যংয়ের মুফিজ আলম নামের দুইজনকে ক্রসফায়ারের নামে হত্যার অভিযোগে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি ওসি প্রদীপসহ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলার আবেদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ( টেকনাফ-৩) হেলাল উদ্দীনের আদালতে এই দুই মামলার আবেদন করা হয়। নিহত বাহারছড়ার আবদুল আমিনের ভাই নুরুল আমিন ও মুফিজ আলমের ভাই মোঃ সেলিম বাদী হয়ে এই দুই মামলার আবেদন করেন। বাদী পক্ষের আইনজীবী আবু মুছা সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন। দুটি মামলার একটি ৩৮ জন ও অন্যটিতে ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। টেকনাফের বাহারছড়ার আবদুল আমিন মামলার আবেদনে বাদী উল্লেখ করেন, সুপারি ব্যবসায়ী আবদুল আমিনের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে টেকনাফ থানা পুলিশ। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর সকালে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় একদল পুলিশ। থানায় নিয়ে গিয়েও ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ওসি প্রদীপসহ পুলিশ সদস্যরা। শেষে বাধ্য হয়ে ৫০ হাজার টাকা দেয় তার পরিবার। বাকি টাকার জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর ভিকটিমসহ তার বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে স্ত্রীর কাছ থেকে বাকি টাকা দাবি করে পুলিশ। এতে অস্বীকৃতি জানানো হলেই একদল পুলিশ আবদুল আমিনকে গুলি করে হত্যা করে। মুফিজ আলমের মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, টেকনাফ থানা পুলিশ মুফিজ আলমের কাছে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। কিন্তু তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এক পর্যায়ে টাকা না দিলে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেয়। তাই বাধ্য হয়ে ২০১৯ সালের ১২ জুলাই পুলিশকে ৬ লাখ টাকা দেয়া হয়। টাকা নেয়ার পরদিনই মুফিজ আলমকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। আইনজীবী আবু মুছা মোহাম্মদ জানিয়েছেন, ফৌজদারি মামলার এজাহার দুটি আমলে নিয়েছে আদালত এবং ওই ঘটনা সংক্রান্ত অন্য মামলা আছে কিনা তা আগামী ধার্র্য দিনের মধ্যে আদালতকে জানাতে টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন সাংবাদিক ফরিদের অবস্থার অবনতি ॥ টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার বাহিনীর সদস্যদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক ফরিদুল আলম খানের শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। প্রদীপের রোষের শিকার হয়ে এ সাংবাদিক ৬টি মিথ্যা মামলায় ১১ মাস ৫ দিন কারান্তরীণ ছিলেন। গত ২৭ আগস্ট জামিন পেয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। দ্রুত চিকিৎসায় তিনি কিছুটা সুস্থ হলেও বৃহস্পতিবার থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তার পায়ুপথে রক্তক্ষরণ, বুকে ব্যথা, মাথায় যন্ত্রণা, দৃষ্টিশক্তির সমস্যাসহ আনুষঙ্গিক আরও কিছু বিষয়ে চিকিৎসা চলছে। কিন্তু অর্থের অভাবে তিনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারছেন না। অথচ তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।
×