ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় প্রথম গ্লোবাল সেন্টার অন এ্যাডাপটেশনের দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক অফিস স্থাপনের বিষয়টি অত্যন্ত গৌরবের এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য একটি অনন্য অর্জন। এর মাধ্যমে সারা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে ঢাকার আন্তরিকতারই বহির্প্রকাশ ঘটেছে। আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদফতরের নতুন ভবনে জিসিএ আঞ্চলিক অফিস ভার্চুয়াল মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জিসিএর সভাপতি ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন। অনুষ্ঠানে আরও যুক্ত ছিলেন নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট। এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পরস্পরকে সহায়তাসহ এ অঞ্চলের অভিযোজন সমাধান এবং জলবাযু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর উপায় উদ্ভাবনে সেন্টার অব এক্সলেট। বান কি মুন বলেন- যেটি তিনি আগেও বলেছেন, সমগ্র বিশ্বের মানুষ জানে সাফল্যজনকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ একটি রোল মডেল। আর এ কারণেই ঢাকায় জিসিএ আঞ্চলিক অফিস স্থাপন। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বের সব দেশের প্রতি অনুদান বাড়ানোর আহ্বান জানান, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রসহ কোন কোন দেশের আগ্রহের অভাব রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন যে, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং এর মোকাবেলায় দায়িত্ব রয়েছে বিশ্বের সব দেশের। ইতোপূর্বে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৫-এ যোগদান করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে যা বলেছেন জোরালো কণ্ঠে, তা সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমানে বিশ্বের জন্য একটি কঠিন বাস্তবতা। এটি মানবজাতি, পরিবেশ, প্রতিবেশ সর্বোপরি বিদ্যমান প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে। সেই প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে পৃথিবী বসবাসযোগ্য থাকবে না। মানবজাতিসমূহ ধ্বংসের মুখোমুখি হবে। আর সেটি যদি অনিবার্য হয়, তা হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। সেই অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই; যা করার সে সবই করতে হবে জরুরী ভিত্তিতে। প্রকৃতপক্ষে এই সত্য ও সাহসী উচ্চারণের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সুইডেনের ১৮ বছর বয়সী কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরই তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে। উল্লেখ্য, গ্রেটা ২০১৮ সালের আগস্টে প্রথম এককভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বনেতৃবৃন্দের অবহেলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও অবরোধের ডাক দেন। একই বছর ডিসেম্বরে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের পর এই আন্দোলন আরও বেগবান হয় এবং ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশসহ ১১২টি দেশের ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন শিক্ষার্থী গ্রেটার ডাকে সাড়া দিয়ে অংশগ্রহণ করে জলবায়ু কর্মসূচীর বিক্ষোভে। দুঃখজনক হলো, এর পরও বিন্দুমাত্র টনক নড়েনি কারও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবারও সম্মেলন বয়কট করেছেন। বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিলে অর্থ দিতেও অস্বীকার করেছেন তিনি। অনেকটা এই প্রেক্ষাপটেই প্রধানমন্ত্রীর এই সতর্কবার্তা বিশ্ববাসীর প্রতি। বিশ্বের ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রপ্রধানদের বোধোদয়সহ দায়িত্বশীল ভূমিকা এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রত্যাশিত। তা না হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম ক্ষমা করবে না কোনদিন।
×