ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইসির ক্ষমতা কমিয়ে দিতে চায় সরকার: ফখরুল

প্রকাশিত: ১৭:২১, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০

ইসির ক্ষমতা কমিয়ে দিতে চায় সরকার: ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকার একতরফাভাবে ক্ষমতায় থাকার পথ পরিষ্কার করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা কমিয়ে দিতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। ফখরুল বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশনে শেষ পেরেক ঠুকেছে। কমিশনের ক্ষমতা কমিয়ে নিজেকের ক্ষমতা একতরফা করতে চায় সরকার। প্রস্তাবিত আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) এর মাধ্যমে আগামীতে নির্বাচন কমিশনবিহীন প্রহসনের নির্বাচন করতে চায় সরকার। নির্বাচনী আইন (আরপিও) সংশোধনের নামে বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও দুর্বল করছে। এভাবে আইন প্রণয়নে ইসির উদ্যোগ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নির্বাচনী আইন সংশোধনে কমিশনের উদ্যোগের বিষয়গুলো নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, আইনের দ্বারস্থ তখনই হওয়া যাবে, যখন আইন থাকবে দেশে, যখন বিচার পাওয়া যাবে দেশে। আমি কি বিচার পাচ্ছি বিচারালয়গুলোতে। আমার জুডিশিয়ারি কি আমাকে সেই বিচার দিচ্ছে? অনেকগুলো ইস্যু কোর্টে গিয়ে চুপ করে আছে। কারণ আমরা জানি যে, ওসবের রেজাল্ট কি আসছে। বার বার বলছি, হোল সিস্টেম ইজ কলাপস। গণতন্ত্রের, মানুষের অধিকারের আর কোনো রাস্তা নেই। তাহলে নির্বাচনে যাচ্ছেন কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, গণতান্ত্রিক পথেই সরকার পরিবর্তনে আমরা বিশ্বাসী। এটার কারণে আমরা সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। নির্বাচনে অংশ নেওয়াটা আমাদের আন্দোলনের অংশ। আপনি যখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে পারছেন না, আপনি যখন ডেমোনেস্ট্রেশন করতে পারেন না, তখন তো সেই সুযোগগুলো নিতে হবে যে সুযোগে আপনি কিছুটা হলেও জনগণের কাছে যেতে পারবেন, জনগনকে নিয়ে এগিয়ে আসতে পারবেন, কথাগুলো বলতে পারবেন। সেই কারণে আমাদের সব অ্যাকশন গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য, আমাদের আন্দোলনটা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমানে নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি দেশের মানুষ ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কোনো রাজনৈতিক দলের ন্যূনতম শ্রদ্ধা কিংবা আস্থা নেই। এ জন্য বর্তমান নির্বাচন কমিশনই দায়ী। আমরা বলতে চাই, এই নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে হবে। একটি নিরপেক্ষ সরকারের তত্বাবধায়নে এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের ভোটাধিকার নিশ্চিত করে জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য গণ আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। ফখরুল বলেন, কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়েছে। এই সময়কালে এই কমিশন একটিও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে পারেনি। এই অবস্থায় তারা নির্বাচনী আইন সংশোধনের চেষ্টা করছে, এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন-২০২০ প্রণয়ন, নির্বাচনী আইন সংশোধনী প্রস্তাব এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনী আইন-২০২০ প্রণয়নে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, এই উদ্যোগ অস্বাভাবিক, অনভিপ্রেত, অগ্রহণযোগ্য এবং মহল বিশেষের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অপকৌশল বলে আমরা মনে করি। তাই বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের উচিত নির্বাচনী ব্যবস্থার যে ক্ষতি তারা করেছে. সেই ক্ষতি পূরণ করা এবং নতুন কোনো সর্বনাশের হাত থেকে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনাকে রক্ষা করা। তিনি বলেন, আরপিও সংশোধনের প্রস্তাবে যেসব বিধান বাদ দেয়া হয়েছে তার অন্যতম হল কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা ও প্রিসাইডিং অফিসার কর্তৃক ভোট গ্রহণ বন্ধ করা। সর্বোপরি আইনের গুরুতর লংঘনের জন্য প্রার্থীতা বাতিলের (৯১ ই ধারা) ক্ষমতা রোধ। এসব ক্ষমতা রোধ করলে কমিশন একটি ঠুটো জগন্নাথে পরিণত হবে, এতে কার স্বার্থ সিদ্ধি হবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। ফখরুল বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে। ভবিষ্যতে একটি ভালো নির্বাচন কমিশন পাওয়ার পথ রুদ্ধ করতে চায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন। রকিব উদ্দিন কমিশন থেকে শুরু করে গত ১০ বছরে কমিশন নির্বাচন ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ইসি নির্বাচন করেছে রাজনৈতিক দলবিহীন নির্বাচন। ২০১৮ সালে করেছে ভোটারবিহীন ‘নৈশ’ নির্বাচন। আর প্রস্তাবিত আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে আগামীতে করবে নির্বাচন প্রহসনের নির্বাচন। মির্জা ফখরুল বলেন, আইন হচ্ছে একটি রক্ষাকবচ। আইন পরিবর্তনের কাজে কমিশন হাত দিতে পারে না। সরকার চাইলে নির্বাচন কমিশন সরকারকে আইন করার ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু স্বপ্রণোদিত হয়ে কমিশন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা অনেকটা আত্মহত্যার শামিল। ফখরুল বলেন, আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান নির্বাচন কমিশন জনগনের কাছে আরো ঘৃণিত হিসেবে গণ্য হবে। বর্তমান আইনে মনোনয়ন পত্র বাতিলের এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। কমিশন এই ক্ষমতা নিজেদের কাছে রাখতে চায় না। ফলে কমিশন বিড়ালে পরিণত হবে বলে একজন নির্বাচন কমিশনার মন্তব্য করেছেন। ফখরুল বলেন, ভোটার তালিকা তৈরির ক্ষমতা জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রকল্প কমিশন সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। এটা হলে ভোটার তালিকা তৈরির ক্ষমতা সরকারের কাছে চলে যাবে। ফলে সরকার নিজের ইচ্ছামতো ভোটার তালিকা প্রণয়নের সুযোগ পাবে। সেই তালিকায় প্রকৃত ভোটার নয়, সরকারি দলের পছন্দের লোকজনকে স্থান করে দেয়া হবে। এটা জাতির জন্য একটি অশনি সঙ্কেত। ফখরুল বলেন, সমালোচনার মুখে নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের(আরপিও) নাম পরিবর্তন এবং প্রার্থীতা বাতিলে ইসির ক্ষমতা বাদ দেওয়ার প্রস্তাবনা থেকে পিছু হটে আসছে বলে জানতে পেরেছি। তারপরও উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। কারণ, এই কমিশনের কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। তারা কি কারসাজিতে যুক্ত তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তাদের অতীত কর্মকান্ডে বরং এটি স্পষ্ট যে, নির্বাচন কমিশন সরকারের নীল নকশা বাস্তবায়নেই তৎপর রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও বর্তমান কমিশন এখন আর স্বাধীন নেই। তারা সরকারের হুকুম তামিলের জন্য আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সরকার নির্র্িেশত প্রক্রিয়ায় কমিশন সকল কাজ করছে। ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশকে (রিপ্রেজেন্টেশন অব পিপলস অর্ডার-১৯৭২) এর নাম পরিবর্তন করে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ-২০২০ আইন করার প্রস্তাব একটি কান্ডজ্ঞানহীন, ঐতিহাসিক দলিলের নামসহ খোলনলচে বিবর্তনের প্রস্তাব, যা মোটেও গ্রহনযোগ্য নয় বলে বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ফখরুল বলেনস, ভারতের মূল নির্বাচনী আইনের নাম রিপ্রেজেন্টেশন অব পিপলস এ্যাক্ট-১৯৫১ যা বহুবার সংস্কার হয়েছে কিন্তু সেই নামটি পরিবর্তন হয়নি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের আগেই দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ জেলায় অফিস বা কমিটি করার যে কথা বলা হয়েছে তা মোটেই বাস্তব সম্মত নয় এবং গ্রহণযোগ্য নয়। এই নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় যেটা সমস্যা তা হচ্ছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার যিনি আছেন তার কোন মেরুদন্ড নেই।
×