ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবার শুরু ক্রিকেটারদের অনুশীলন

টেস্ট খেলার স্বপ্ন দেখছেন বিপ্লব

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০

টেস্ট খেলার স্বপ্ন দেখছেন বিপ্লব

মিথুন আশরাফ ॥ ক্রিকেটে হঠাৎ করেই করোনার হানা দেখা দেয়। তাতে করে পাঁচদিন ক্রিকেটারদের অনুশীলন বন্ধ থাকে। এরপর কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা শেষে আবার ক্রিকেটারদের অনুশীলন শুরু হয়। শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত অনুশীলন বন্ধ থাকার পর বুধবার থেকে আবার শুরু হয়েছে। করোনা পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ হওয়া ক্রিকেটাররা বুধবার অনুশীলন করেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে অনুশীলন। অনুশীলন শেষে লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব নিজের স্বপ্নের কথা জানান। তিনি টেস্ট খেলার স্বপ্ন দেখেন। গত বছর অক্টোবরে ঢাকা মেট্রোপলিসের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছেন বিপ্লব। এই একটি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচই খেলেছেন। ২২ ওভার বোলিং করে ১টি মাত্র উইকেট শিকার করতে পেরেছেন। সাত টি২০ ম্যাচ খেলা হলেও ওয়ানডে ও টেস্ট এখনও খেলা না হওয়া বিপ্লব বলেছেন, ‘প্রত্যেক খেলোয়াড়েরই একটা লক্ষ্য থাকে যে লাল বলের (টেস্ট) ক্রিকেট খেলার জন্য। আমারও সেই স্বপ্ন আছে। যদি সুযোগ হয়, তাহলে নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করব।’ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সামনেই শ্রীলঙ্কা সফর আছে। এ মাসের শেষ সপ্তাহেই শ্রীলঙ্কা সফরে যাবেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। ২০ ক্রিকেটার নিয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়া হতে পারে। তিন ধাপে কোভিড-১৯ পরীক্ষার পর ‘নেগেটিভ’ হওয়া ক্রিকেটাররা ২০ সেপ্টেম্বর একসঙ্গে হোটেলে উঠবেন। এরপর দেশের মাটিতে এক সপ্তাহের অনুশীলন ক্যাম্প শেষে শ্রীলঙ্কা সফরে যাবেন। শ্রীলঙ্কা সফরকে সামনে রেখে ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফে থাকা কোচদের করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। প্রথম ধাপে ১৭ ক্রিকেটার ও ৭ সাপোর্ট স্টাফের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে দুইজন ‘পজিটিভ’ এসেছেন। ক্রিকেটারদের মধ্যে ওপেনার সাইফ হাসান করোনা আক্রান্ত। তার করোনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ এসেছে। কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছেন দলের ইংলিশ ট্রেনার নিক লিও। এই দুইজনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আটজন সাপোর্ট স্টাফের সবাই করোনা ‘নেগেটিভ’ হয়েছেন। আবার কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হবে। অনুশীলন ক্যাম্পের আগে ১৮ সেপ্টেম্বর ক্রিকেটারদের সর্বশেষ পরীক্ষা করানো হবে। আগে জানা গিয়েছিল, ১৮ সেপ্টেম্বর ক্রিকেটারদের করোনা পরীক্ষা হবে। কিন্তু ক্রিকেটাররা যখনই গ্রুপভিত্তিক ব্যক্তিগত অনুশীলন শুরু করেন, তখন করোনা পজিটিভ হন বাংলাদেশি ট্রেনার ইয়াকুব আলী চৌধুরী। একজন গ্রাউন্সম্যানও কোভিড-১৯ পজিটিভ হন। এরপরই পাঁচদিন অনুশীলন বন্ধ রাখা হয়। ক্রিকেটারদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার পর আবার অনুশীলন শুরু হয়েছে। ক্রিকেটাররা আবার গ্রুপভিত্তিক অনুশীলন শুরু করে দিয়েছেন। যে ক্রিকেটারদের অবস্থা বুঝে নিতে চায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), তাদেরই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুশীলনে রাখা হচ্ছে। মেহেদী হাসান মিরাজকেও যেমন বুধবার থেকে মিরপুরে অনুশীলনে রাখা হয়েছে। এতদিন খুলনায় অনুশীলন করেছেন মিরাজ। ক্রিকেটারদের আবাসিক ক্যাম্পের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিসিবি। ক্যাম্পে যোগ দিতে কোচরাও চলে এসেছেন। প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো, ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক ও বোলিং কোচ ওটিস গিবসন দেশে চলে এসেছেন। প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর তত্ত্বাবধানেই ক্রিকেটারদের অনুশীলন ক্যাম্প হবে। শ্রীলঙ্কায় তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। এর আগে তিন সপ্তাহের অনুশীলন ক্যাম্প হবে শ্রীলঙ্কাতেও। সেখানে হাই পারফর্মেন্স (এইচপি) ইউনিটের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। একটা সমস্যা ছিল, কোচরা যে যার যার দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছেন, নিয়ম অনুযায়ী ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কিন্তু বিসিবি থেকে সরকারের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে, যেন এই নিয়ম কোচদের বেলাতে শিথিল করা হয়। করোনা পরীক্ষা করিয়ে ‘নেগেটিভ’ হলে তারা যেন অনুশীলন করাতে পারে। না হলে তো অনুশীলন ক্যাম্প শুরু হয়ে গেলেও কোচদের কোয়ারেন্টাইনেই থাকতে হবে আরও কিছুদিন। বিসিবি তাতে সবুজ সংকেত পেয়েছেও। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজনই যেমন বলেছেন, ‘আমরা এক ধরনের সবুজ সংকেত পেয়েছি। ওনাদের হয়তো কোয়ারেন্টাইন করতে হবে না। তবে আমরা লিখিত অনুমতি চাইব; সেটার অপেক্ষায় আছি।’ দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে অনুমতি তো মিলবেই। এটাই স্বাভাবিক। অনুমতি মিললেই কোচরা শুরু থেকেই ক্যাম্পে ক্রিকেটারদের অনুশীলন করাবেন। অবশ্য ক্রিকেটাররা এরমধ্যেই নিজেদের ভালভাবেই ঝালিয়ে নিচ্ছেন। জুলাইয়ের ১৯ তারিখ থেকে ক্রিকেটাররা ব্যক্তিগত অনুশীলন করছেন। এখন চলছে গ্রুপভিত্তিক অনুশীলন। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মূল উইকেটেও ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন চলছে। শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য ক্রিকেটাররা নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছেন। দীর্ঘ চার মাসের বিরতি কাটিয়ে এখন ছন্দেও ফিরবেন ক্রিকেটাররা। অনুশীলনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধও করছেন। বিপ্লবই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার কথা বলেছেন। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের বোলিং করতে পেরে তো অনেক আনন্দিতও বিপ্লব। জানিয়েছেন, ‘সাধারণত ব্যাটসম্যান ছাড়া বোলিং করলে নিজের ব্যাপারে জানা যায় না। ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে বোলিং করলে বোঝা যায় নিজের শক্তি। কোথায় বোলিং করতে হবে, আমার কোন জায়গাগুলোতে দুর্বলতা আছে, এগুলো বোঝা যায়। ব্যাটসম্যানদের বোলিং করতে পেরে আমার কাছে অনেক ভাল লাগছে। শুরুতে সবারই মানিয়ে নিতে একটু সমস্যা হয়েছিল। তবে ধীরে ধীরে যখন আমরা অনুশীলন নিয়মিত করা শুরু করলাম, এখন সবকিছুতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘লকডাউনে বোলিং নিয়ে আসলে তেমন কাজ করা হয়নি। নিজের বোলিংয়ের ভিডিওগুলো দেখতাম। কোথায় দুর্বলতা আছে, তা দেখতাম। জায়গাগুলোতে কিভাবে উন্নতি করা যায়, যা সামনে আমার ক্রিকেটের জন্য ভাল হবে, তা নিয়ে ভাবতাম। যখন আমরা ধীরে ধীরে অনুশীলন শুরু করি, তখন আমি শুরুতে লেগ স্পিনই করেছি। তারপর গুগলি, ফ্লিপার, এগুলো নিয়ে কাজ করা শুরু করেছি। আশা করছি সামনে ভাল কিছুই হবে।’
×