ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইভ্যালির প্রতারণা

প্রকাশিত: ২১:০২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০

ইভ্যালির প্রতারণা

বিভিন্ন পণ্য বিক্রেতা কোম্পানি হরেক রকম অফারের প্রলোভন সাজিয়ে বাজার সরগরম করা ছাড়াও ক্রেতা ঠকানোর হটকারিতা সংশ্লিষ্টদের হতাশ ও বিপন্ন অবস্থায় ফেলে দেয়। মূল্যছাড় থেকে শুরু করে নগদ ক্যাশ ব্যাক ছাড়াও সমপরিমাণ পণ্যের দাম ফেরত দেয়ার অফারও থাকে। হরেক রকম ছাড়ের গ্যলভরা নামও দেয়া হয় ‘সাইক্লোন’ কিংবা ‘থান্ডারড স্ট্রং’। ফাঁদ পাতা হয় লোভনীয় সব ছাড়ের গল্প বানিয়ে। প্রলুব্ধ ও আকৃষ্ট ক্রেতা অতি সহজেই তেমন জালে আটকে যেতে সময় নেয় না। ইভ্যালিও এমন একটি হায়-হায় কোম্পানি যেখানে ক্রেতা চরম লোকসানের শিকার হয়ে ভুলের মাশুল গুনছে। অর্ডারকৃত পণ্যের দামের চাইতে বেশি টাকা কেটে নেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। দুই হাজার ছয় শ’ পঞ্চাশ টাকার একটি পণ্য ক্রয় করে একজন ক্রেতার ১০ বারে ২৬ হাজার টাকা কেটে নেয়ার বিপত্তিও সামলাতে হচ্ছে ক্রেতাকে। কাস্টমার কেয়ারে অভিযোগ করেও কোন কূলকিনারা করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট গ্রাহক। ইভ্যালির কর্তৃপক্ষ সমাধানের আশ্বাস দিলেও কোন কার্যকারিতা এখন অবধি দেখা যায়নি। এভাবে মাস গড়িয়ে গেলেও ক্রেতা তার প্রাপ্য অর্থ ফেরত পেতে ব্যর্থ হন। কর্তৃপক্ষ অবশ্য আশ্বস্ত করেছে ইভ্যালির পদ্ধতিগত বিভ্রাটের কারণে উদ্ভূত অর্থ অচিরেই মিটিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু গ্রাহকের অস্বস্তিকে জিইয়ে কোন যৌক্তিক সমাধান এখন অবধি হয়নি। এভাবে বহু ক্রেতা অভিযোগ তুলেছেন তারা তাদের অর্ডারকৃত পণ্য পর্যন্ত পাননি। অনলাইনভিত্তিক কেনাকাটার এই অনিশ্চিয়তার ফাঁদে আটকা পড়েছেন ৩৭ লাখ গ্রাহক। ই-কমার্সের নামে ফাঁদ পাতা এই প্রতারণার বিরুদ্ধে ঘোরতর অভিযোগ তুলেছে ক্রেতাগোষ্ঠী। তারা মনে করছেন- এই প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরীই শুধু নয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির নিশ্চিত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ আইনী বিধি না থাকাসহ জবাবদিহির কার্যক্রমের অনুপস্থিতিতেই এত গ্রাহক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছেন। সরকারী বিভিন্ন সংস্থা ইতোমধ্যে ইভ্যালি কোম্পানির কার্যক্রম খতিয়ে দেখা শুরু করেছে। এ ছাড়া ইভ্যালির বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়েরও মারাত্মক অভিযোগ আনা হয়েছে। অর্থাৎ, নীতি-নৈতিকতাবহির্ভূত অসৎ কর্মকাণ্ডে ইভ্যালির যে নগ্ন অপতৎপরতা ক্রমান্বয়ে তা প্রকাশ পেতেও সময় লাগছে না। এ ব্যাপারে জোর তদন্ত শুরু করা হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কোন বাধা থাকবে না। উপযুক্ত শাস্তি তো হবেই এবং পাচারকৃত সমস্ত অর্থ ফেরত দিতেও বাধ্য করা হবে। আর গ্রাহক প্রতারণার প্রাসঙ্গিক প্রমাণাদি পাওয়া গেলে অপরাধীকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইভ্যালির সব ব্যাংক এ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। তাদের হিসাব সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। গ্রাহক কর্তৃক পাওয়া অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ইভ্যালির কার্যক্রম শুরুর দুই বছরও পার হয়নি। এরই মধ্যে তারা ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার পণ্য গ্রাহকের কাছে বিক্রি করেছে। কিন্তু কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন নাকি মাত্র এক কোটি টাকা। ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদকের মতে, ইভ্যালির ব্যবসায়িক মডেল কতখানি যৌক্তিক কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ তাও বিশেষভাবে অনুসন্ধান করা হবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ক্রেতারা যাতে প্রতারণার খপ্পর থেকে বের হয়ে আসতে পারে, সেদিকেও কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে। তাদের আর্থিক ক্ষতি পোষানোর যৌক্তিক ব্যবস্থাও নেয়া হবে।
×