ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সচেতনতা

প্রকাশিত: ২১:০৪, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সচেতনতা

পৃথিবীতে যত প্রজাতির প্রাণী আছে এর প্রত্যেকটি জীবজন্তু বা প্রাণীর প্রকৃতি ও আচরণ ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। এসব জীবের অনেক শ্রেণীর আচরণ ও বিচরণ অনেকটাই আমরা বাস্তবে দেখতে পাই। আর সব জীবজন্তুর মধ্যে মানুষের স্থান অন্যতম। মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের দিকটি বিভিন্ন ধর্মে বলা হয়েছে। আর বাস্তবেও এর প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। কারণ মানুষ পৃথিবীতে সবকিছুই এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। পৃথিবীর অন্য একটি বিষয় এখানে উল্লেখযোগ্য, আর তা হলো পৃথিবীর তিন ধরনের প্রাকৃতিক অবস্থা যথা জল, স্থল ও শূন্য। এ তিন ক্ষেত্রেও মানুষের প্রাধান্য বা শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। মানুষ আদিকাল থেকে ধর্মজ্ঞান, বাস্তবতা, বিজ্ঞানের চর্চা ও উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে জলসীমায় কোথায় কি সম্পদ বা জিনিস আছে তা অজানা নয়। অনুরূপভাবে স্থল ভাগে বিভিন্ন স্থানে কি প্রাকৃতিক সম্পদ আছে তাও মানুষের হিসাবের বাইরে নেই। আর তিনটি প্রাকৃতিক অবস্থানের মধ্যে শূন্যে কি আছে তা বলা কঠিন। তবে শূন্যে আমরা প্রাথমিকভাবে বাতাস, সূর্যরশ্মি, চন্দ্রালোক, ইথার ইত্যাদি আছে বলে জানি। উল্লেখ্য, বাতাস যা দেখতে না পারলেও বাতাসের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী বেঁচে থাকতে বাতাসের অবদান খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। শূন্যে কোন প্রাণী আছে কিনা তা আমরা দেখতে পারি না। তবে শূন্যে পাখি জাতীয় প্রাণীর বিচরণ আদি কাল থেকেই রয়েছে। বর্তমান বিশ্বে শূন্যে বিমান চলাচলের মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। আর এই শূন্যেই তথা মহাশূন্যে অন্য গ্রহ ও নক্ষত্র অবস্থিত এবং সেখানে মানুষ হিসেবে আমাদের যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। বিশ্বের মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানের জন্য যে অহংকার করে থাকে, তার মূলে বিভিন্ন ধর্মগ্রস্থ থেকে আহরিত জ্ঞান, বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান বিষয়ে অনুশীলনের শতসহ¯্র বছর ধরে মানুষের সাধনা ও এর ক্রম উন্নতির ফল। বিজ্ঞানের সাধনার মাধ্যমে শূন্য বা মহাশূন্যের ওপর যে জ্ঞান অর্জিত হয়েছে যা প্রধানত বিশ্বের মধ্যে সীমিত। যদিও মহাশূন্য সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বৈজ্ঞানিকরা দিতে পেরেছে। তবে এ সময়ের মধ্যে যে বিষয়টি মানুষের জন্য গৌরবের তা হলো, পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদে মানুষের পদার্র্পণ। পৃথিবীর পার্শ্ববর্তী ও অন্য গ্রহে মহাশূন্য যান পাঠিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে বৈজ্ঞানিকরা সক্ষম হয়েছে। মানুষ সেখানকার অবস্থা কি এবং কখন যেতে পারবে তা অনিশ্চিত। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শূন্য বা মহাশূন্যের গুরুত্ব ও অবস্থান অনেক অনেক বিস্তৃত ও ব্যাপক। যা আমরা মানুষ হিসেবে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ও তার বাণী থেকে জানতে পারি। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী কোরআন, খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল ও সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রেরিত অন্য ধর্মগ্রন্থ তৌরিদ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া হিন্দু ধর্মের ধর্মগ্রন্থ বেত, গীতা, মহাভারত ও বৌদ্ধ ধর্মের গ্রন্থ ত্রিপিটক এর মাধ্যমে ও শূন্য বা মহাশূন্য ও মানুষের ধর্মনীতি সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়। প্রাচীন কাল থেকে মানুষ ধর্মনীতিতে দৃঢ় বিশ্বাস ও বাস্তব জীবনে তার প্রতিপালন করে আসছে। তার প্রতিফলন এখন স্থানে দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া ধর্মনীতি অনুসারে পৃথিবীতে মানুষের নিজ নিজ ধর্ম অনুসরণে কর্মক্ষেত্রের ফলাফল অনুযায়ী মানুষের স্বর্গ, নরক ভোগ করতে হবে যা প্রতিটি মানুষের মৃত্যুর পর বিচারের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। যদিও ধর্মমত অনুসারে মানুষের মধ্যে এর প্রতিফলন এখন খুবই কম পরিলক্ষিত হয়। পৃথিবীতে এত ঐশ্বর্য, ভোগসম্ভার, অগণিত সম্পদ এবং বৈজ্ঞানিক আবিষ্কৃৃত উপকরণের মাধ্যমে যা কেবল মানুষ ভোগ দখল করছে। এক শ্রেণীর মানুষ বিশ্বের সব মূল্যবান ধন সম্পদ তাদের ভোগ দখলে ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সকল সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে উপভোগ করছে। অধিকন্তু বিত্তশালী এবং ক্ষমতাশালী হিসেবে বিশ্বে গণ্য হচ্ছে। এর জন্য সব কিছুর নিয়ন্ত্রক সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বা স্মরণ করার প্রতি তেমন কোন গুরুত্ব নেই। উপরে উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করে শেষ করা যাবে না। তবে বর্তমান বিশ্বে আমাদের যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হতে হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর অনৈতিক কার্যকলাপ। এর মধ্যে যে দিকটি মানুষের জন্য তথা সকল জীব ও প্রকৃতির জন্য সর্বনাশী তা হলো পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা ও বিস্তার লাভের প্রচেষ্টা। উল্লেখ্য যে, প্রতিযোগিতার পিছনে যে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহৃত হচ্ছে তা হিসাব এতই বিশাল যে পৃথিবীর অনুন্নত দেশের উন্নয়নে ব্যবহার করলে তা সহজে উন্নত হতে পারত। এছাড়া পারমাণবিক অস্ত্রের প্রভাবে অনগ্রসর রাষ্ট্রের প্রতি প্রাধান্য বিস্তার ছাড়াও নানা কৌশল অবলম্বনে গোপনীয়ভাবে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে অনৈতিক অর্থবিত্তের প্রবৃদ্ধির গুপ্ত কার্যক্রম। মানুষ সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ঠ জীব। তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিফলন হিসেবে পৃথিবীর সবকিছু মানুষের নিয়ন্ত্রণে। এ প্রেক্ষিতে কিছু উল্লেখ করার আগে বলা যায় যে, সবক্ষেত্রেই দায়িত্ব পালনের সফলতা, বিফলতা, ন্যায্যতা, অন্যায্যতা, জবাবদিহিতা অবশ্যই মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। প্রকৃতি তথা স্থলাভূমি ও জলাশয় এর মধ্যে যা কিছু আছে, যথা পশু, পাখি, জীব জন্তু, গাছপালা, পাহাড় পর্বত, খনিজ সম্পদ, নদীনালা, আবহাওয়া, জলবায়ু ইত্যাদি। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রাকৃতিক সম্পদের কথা এসে যায়, যার পরিমাণ সীমিত। কিন্তু বাস্তবে এর অপরিকল্পিত ও এক তরফা ব্যবহার চলছে। অর্থাৎ ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রয়োজনের কথা হিসেবে না আনা এবং যথোচ্ছার ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি এবং ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক অস্ত্রের পিছনে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে প্রকৃতির ওপর বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ আজ যে অভাবনীয় সমস্যার সম্মুখীন ও সারা বিশ্ব তথা পৃথিবীর সব এলাকার মানুষকে যা ভাবিয়ে তুলেছে তা হচ্ছে সাম্প্রতিক একটি দুর্যোগ। এ ধরনের বিশ্বব্যাপী সমস্যা বা দুর্যোগের ইতিহাস জানা যায় না, শুধু বিশ্বযুদ্ধ ছাড়া। পরাশক্তির দেশগুলো এ সমস্যার কোন কূল কিনারা বা সমাধান করতে পারছে না। মানব জীবন সংহারমারী, মহামারী করোনা মোকাবেলায় বিশেষজ্ঞরা অক্লান্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। রোগীর বিভিন্ন উপসর্গের ওপর প্রচলিত ওষুধ প্রয়োগ করে চিকিৎসা চলছে। এর মধ্যে আশার বাণী এই যে, পরিসংখ্যানে জানা যায় এই ভাইরাসে রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা কম। এসব অবস্থার আলোকে মহান সৃষ্টিকর্তার একটি নেয়ামতের কথা আমাদের মনে রাখা উচিত, তা হলো পৃথিবীর শূন্য পরিগ্রহের মধ্যে অন্যতম বাতাসের কথা। মানুষ প্রকৃতিতে নির্মল বায়ু নিশ্চিত করতে যদি আরও বেশি সচেষ্ট হয় তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ তুলনামূলক অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করা যায়। জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করলে সর্বাধিক ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন-বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের বিষয়ে জোর তৎপর রয়েছে বলে দেখা যায়। লেখক : অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা
×