ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়াউদ্দিন তারিক আলী আর নেই

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

জিয়াউদ্দিন তারিক আলী আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জিয়াউদ্দিন তারিক আলী আর নেই। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে সোমবার বেলা এগারোটায় বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। রেখে গেছেন স্ত্রী, পুত্র-কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী। সোমবার বিকেলে জিয়াউদ্দিন তারিক আলীর মরদেহ স্বল্প সময়ের জন্য তার প্রাণপ্রিয় কর্মক্ষেত্র মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে আনা হয়। সেখানে তার বন্ধু, সহকর্মীরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে জানাজা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। তিনি মরণোত্তর দেহদান করেছিলেন। কিন্তু কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করায় সংক্রমণের আশঙ্কায় তাঁকে দাফন করার সিদ্ধান্ত হয়। জিয়াউদ্দিন তারিক আলীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে ছুটে আসেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, ডাঃ সারওয়ার আলী, সারা যাকের ও মফিদুল হক। এছাড়াও শ্রদ্ধা জানান সংস্কৃতিজন রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, কবি তারিক সুজাত, চিত্রশিল্পী মনিরুজ্জামান। জিয়াউদ্দিন তারিক আলীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকবাণীতে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে জিয়াউদ্দিন তারিক আলীর অবদানের কথা স্মরণ করেন। এছাড়াও শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সাংগঠনিকভাবে শোক জানিয়েছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সংগঠন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউদ্দিন তারিক আলী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার মৃত্যুতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবহ কর্মকা- এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হলো। তার কর্মের প্রেরণায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যাবে। সেই অগ্রযাত্রার মাঝেই জিয়াউদ্দিন তারিক আলী রয়ে যাবেন। রয়ে যাবেন জাতির স্মৃতিতে ও কর্মে। ১৯৭০-৭১ সালে গণসঙ্গীত দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে তিনি রাজপথে গান গেয়ে বেড়িয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে লড়াইয়ে যোগ দেন। মুক্তিসংগ্রামী শিল্পীদলের সদস্য হয়ে শরণার্থী শিবির, মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প, মুক্ত এলাকায় যোদ্ধাদের গানের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণে এই দলের ছিল বিশেষ ভূমিকা। লিয়ার লেভিন ধারণকৃত সেই দলের সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের ফুটেজ কয়েক দশক পর উদ্ধার করেন তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ এবং তাদের সাথী ছিলেন নিউজার্সিতে সেই সময় কর্মরত তারিক আলী। পরে তারেক মাসুদ নির্মিত ‘মুক্তির গান’ প্রামাণ্যচিত্র তরুণদের বিপুলভাবে আলোড়িত করে এবং তারিক আলী ছিলেন এই প্রামাণ্যচিত্রের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব। ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী আট ট্রাস্টির অন্যতম ছিলেন তারিক আলী। সেই থেকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হয়ে ওঠে তার সকল কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু। আগারগাঁওয়ে বিশালাকার নতুন জাদুঘর নির্মাণ কাজের তিনি ছিলেন প্রধান সমন্বয়ক। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অবকাঠামো ও কর্মধারার সবখানে জড়িয়ে রয়েছে তার হাতের স্পর্শ। পেশায় প্রকৌশলী তারিক আলী যৌবনের শুরু থেকেই ছিলেন সঙ্গীতের প্রতি নিবেদিত। বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে তার সঙ্গীতশিক্ষণ এবং ছায়ানটের সঙ্গে আজীবন সম্পৃক্ততা। আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতিমনা এই ব্যক্তিত্ব জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ ও ছায়ানটের নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন তার আরেক কর্মক্ষেত্র। তিনি সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
×