ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফখরুলের ঘোষণা

আগামীতে সব নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি

প্রকাশিত: ২৩:০০, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

আগামীতে সব নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উপনির্বাচন, স্থানীয় নির্বাচনসহ আগামীতে সব নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বরাবরই সিদ্ধান্ত ছিল নির্বাচনে অংশ নেয়ার। উপজেলা নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশ নেবে বিএনপির সেই সিদ্ধান্ত আছে। এ সময় তিনি নারায়ণগঞ্জের মসজিদের এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত তমিটি গঠনের দাবি জানান। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শুধু কোভিড-১৯ এর কারণে গত দুটি উপনির্বাচনে (যশোর ও বগুড়া) যোগ দিয়েও পরবর্তীকালে প্রচারে যাইনি, সরে দাঁড়িয়েছি। উপজেলা নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে আমরা অংশগ্রহণ করব সে সিদ্ধান্তই আছে। সে অনুযায়ী ঢাকা-৫, ঢাকা-১৮, নওগাঁ-৫ ও সিরাজগঞ্জ-১ উপনির্বাচনে অংশ নেবে। আগামী ১০ তারিখে নমিনেশন ফরম বিক্রি করা হবে। ১২ তারিখে পার্লামেন্টারি বোর্ড সাক্ষাতকারে বসবে প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য। সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ মসজিদের এসি বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, এটা কি শুধু বিদ্যুতের জন্য, গ্যাসের জন্য, এসির জন্য, নাকি ইচ্ছাকৃত সাবোটাজ করা হয়েছে বা নাশকতামূলক কি না, এ বিষয়ে জাতি জানতে পারছে না। বিএনপি মনে করে এই বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি দিয়ে তদন্ত কমিটি করা দরকার। এটার সঠিকভাবে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, মসজিদের বিস্ফোরণ ঘটনা নিয়ে সরকারের বেশ কিছু বক্তব্য বিভ্রান্তিকর। ফায়ার ব্রিগেড প্রথম দিন একরকম কথা বলেছে, পরে বিদ্যুত বিভাগের লোক একরকম কথা বলেছে, গ্যাসের লোক গিয়ে আরেক রকম কথা বলেছে। বেআইনীভাবে সরকারী জায়গার ওপর গ্যাসলাইনের ওপর মসজিদ করা হয়েছে, এটা তো এই মুহূর্তে বিবেচ্য বিষয় নয়। এই মুহূর্তের বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, বিস্ফোরণ ঘটল কীভাবে? এই বিস্ফোরণের প্রকৃতিটা কী, তার চরিত্রটা কী? ইতোমধ্যে ২৬ জনের প্রাণ চলে গেছে। বাকিদের শ্বাসনালীসহ পুরো শরীর দগ্ধ হয়েছে। আরও যে কতজন মারা যাবে তা বলা মুশকিল। দুর্ভাগ্যজনক যে, এ ঘটনাকে সেই রকম গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার নির্দেশ দিয়ে কোভিড টেস্টিং কমিয়ে দিয়েছে। এখন টেস্ট বন্ধ। দিনাজপুর থেকে বলছে যে, আপাতত বন্ধ রাখ। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কোন জায়গায় চলে গেছে। আজকে লক্ষ্য করে দেখেন, প্রতিদিনের ব্রিফিং বাদ দিয়েছে। কারণ আর কত মিথ্যা কথা বলবে। এখন একটা প্রেস রিলিজ দিয়ে দেয় অনলাইনে। সংক্রমণ তথ্য লুকিয়ে লাভ কী? সরকারের ব্যর্থতার কারণে, তাদের উদাসীনতার কারণে কোভিড ছড়িয়ে গেছে। এই অবস্থা হলে সরকারের প্রয়োজনটা কী? সিনহা হত্যার বিষয় উল্লেখ করে বলেন, এখানে অনেকগুলো বিষয় সামনে চলে এসেছে। একটা হচ্ছে-বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-। পুলিশকে এই অথরিটি কে দিয়েছে? এখন পর্যন্ত আমাদের জানা নেই যে, পুলিশ মুহূর্তের মধ্যে কাউকে গুলি করে হত্যা করতে পারে। দুই নম্বর হচ্ছে যে, হত্যার দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে কি না। আমরা জানি না, এই ধরনের দায়মুক্তি পুলিশের আছে কি না কাউকে গুলিকে হত্যা করতে পারে। মেজর সিনহার এই ঘটনা চোখ খুলে দিয়েছে, বিষয়টাকে একেবারে সামনে নিয়ে এসেছে। কিন্তু বহু আগে থেকে ২০০৮ সালে এই আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর থেকে কিন্তু এসব ঘটনা ঘটছে। অবিলম্বে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বন্ধ করে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন। দিনাজপুরের ইউএনওর ওপর হামলার প্রসঙ্গে বলেন, ‘দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে ইউএনওকে রাতে তাকে হত্যার জন্য এভাবে আহত করা হলো। র‌্যাব একটা প্রেস কনফারেন্স করে বলে দিল যে, চুরির জন্য এই আক্রমণ করা হয়েছে। যেটা আমরা মনে করি যে, একেবারেই দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক প্রতিচ্ছবি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থাগুলোকে কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না বলেই চট করে একটা সংবাদ সম্মেলন করে বলে দেয় যে, চুরির জন্য ঘটনা ঘটছে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের কথা তুলে ধরে বলেন, বিশ্বে রাষ্ট্রচিন্তা, অর্থনৈতিক চিন্তা, দর্শন, সমাজনীতির একটা পরিবর্তন আসবে। তবে সেটা কী আসবে, জানি না। আর আমাদের দেশে রাজনীতির ক্ষেত্রে পরিবর্তনটা খুব বেশি জরুরী হয়ে গেছে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য, তার নিশ্চয়তার জন্য, সাংবিধানিক অধিকার, নিশ্চিত করার জন্য। তিনি বলেন, এই মহামারীর সময়ে কতগুলো খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। কোথাও কোন জবাবদিহি নেই। যা খুশি তা-ই করা হচ্ছে। এই কথাগুলো আমাদের না। নিরপেক্ষ সংস্থার। টিআইবি বলেছে, এই মহামারীতে বাংলাদেশে যতটা দুর্নীতি হয়েছে, এমন দুর্নীতি মনে হয় পৃথিবীর কোথাও হয়নি। এই কোভিডের মধ্যেও আমরা আমাদের কাজ করেছি। কাজ করার চেষ্টা করছি। একটা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে রয়ে যাচ্ছি। এই বিষয়টা আপনাদের সবারই বিবেচনার মধ্যে নিতে হবে। সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, দেশের এই অবস্থা কি শুধু বিএনপির সমস্যা, না দেশের সমস্যা? মানুষের অধিকারের যে নিশ্চয়তা, আদালতের যে স্বাধীনতা, এটা কি শুধু বিএনপির সমস্যা? এই সমস্যা দেশের সব মানুষের। প্রেসের কথাই চিন্তা করেন। আপনারা না বললেও আমরা জানি, কীভাবে প্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এই বিষয়গুলো সুরাহা করতে তরুণ মধ্যবিত্ত মানুষদেরই সামনে এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরই এই দেশটাকে রক্ষা করতে হবে। বিএনপিকে রক্ষা করার দরকার নাই তো, দেশটাকে রক্ষা করেন।
×