ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সমরবিদদের সতর্কতা

যুদ্ধ ঝুঁকিতে ভারত-চীন

প্রকাশিত: ২০:২৭, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

যুদ্ধ ঝুঁকিতে ভারত-চীন

বিশ্বের অন্যতম দুই পরাশক্তি ভারত ও চীনের মধ্যে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে চলা সামরিক টানাপোড়েন দেশ দুটিকে অনিচ্ছাকৃত যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে। পরমাণু সমৃদ্ধ এ চির বৈরী দুই প্রতিবেশী অল্প সময়ের ব্যবধানে কয়েক দফা সামরিক সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এতে ভারতের অন্তত ২০ সৈন্য নিহত হয়েছে। এসব ঘটনায় একাধিক চীনা সৈন্য নিহতের খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। দীর্ঘ ৪৫ বছর ভারত-চীনের মধ্যে বহু লিখিত ও অলিখিত চুক্তির মাধ্যমে হিমালয়ের কাশ্মীর অঞ্চলে উভয় দেশ শান্তি বজায় রেখে আসছিল। তবে দেশ দুটির মধ্যে গত কয়েক মাস একাধিকবার সামরিক মতানৈক্য তৈরি হয়। এতে দেশ দুটির মধ্যে ঠাণ্ডা যুদ্ধকালীন উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর এপির। এ বিষয়ে ভারতের সাবেক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ডি এস হোডা বলেন, সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে উভয় দেশের ওপরই বর্তায়। তিনি বলেন, এর ব্যত্যয় ঘটলে তা ভারত-চীনের জন্যই ক্ষতির কারণ হতে পারে। চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ওয়ান লিয়ান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইন্দো-চীন মুখোমুখি যুদ্ধের সম্ভাবনা নেই। কারণ উভয় দেশই অনেক ক্ষেত্রে ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে আসছে। তবে তিনি বলেন, বর্তমানে ভারত সরকার অভ্যন্তরীণভাবে চীন বিরোধী চাপ সামলাচ্ছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রও ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারপরও আমার মনে হয় না ভারত চীনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে আমার ধারণা উভয়পক্ষই বর্তমানে এ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে ভারত-চীন সামরিক যুদ্ধে জড়ায়। ওই সময় চীনা সৈন্যরা লাদাখের বিশাল অংশে প্রবেশ করে। এরপর এক সামরিক চুক্তির মাধ্যমে এর সমাধান হয়। ভারতের প্রখ্যাত সমর বিশ্লেষক রাহুল বেদি বলেন, গত জুন মাসে সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ভারত ইতোমধ্যে নীতি বদলেছে। স্থানীয় কমান্ডারদের কোন অনাকাঙিক্সক্ষত পরিস্থিতিতে চীনা সৈন্যদের বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এসব দেশ দুটিকে এক পর্যায়ের যুদ্ধে দিকে ঠেলে দিতে পারে। তবে ইন্দো-চীন চলমান উত্তেজনার বরফ গলানোর চেষ্টা করছে উভয় দেশ। শুক্রবার রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় এশিয়ার পরমাণু সমৃদ্ধ এ দুই বৃহৎ পরাশক্তির মধ্যে এক অপ্রত্যাশিত বৈঠক হয়। মস্কোর মেট্রোপোল হোটেলে অনুষ্ঠিত এক ঘণ্টা ২০ মিনিট দীর্ঘ বৈঠকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়ে ফেং লাদাখ পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। গত জুন মাসে চীন ও ভারতীয় সৈন্যের মধ্যে সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় নিহতের পর এই প্রথম উভয় দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। এদিকে চীন-ভারত বিবাদে ফের মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ভারত ও চীনের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত রয়েছে। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ভারত ও চীনের সীমান্ত পরিস্থিতি খুব খারাপ। আমরা সাহায্যের জন্য সব সময় প্রস্তুত। লাদাখে ভারত ও চীনের মধ্যে ফের উত্তেজনা বৃদ্ধির পর ট্রাম্প এমন প্রস্তাব দিলেন। টুইটারে দেয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, আমরা ভারত ও চীন দুই দেশকেই জানিয়েছি, যুক্তরাষ্ট্র তাদের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান সীমান্ত বিরোধে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত। তবে সে সময় ওই প্রস্তাবে দিল্লী বা বেজিং কেউই সায় দেয়নি। শুক্রবারের বৈঠকে রাজনাথ বলেন, বিশ্বাসের আবহ, আগ্রাসী মনোভাব না-নেয়া এবং আন্তর্জাতিক রীতি মেনে মতবিরোধ দূর করার ওপরেই গোটা এলাকার শান্তি এবং নিরাপত্তা নির্ভর করছে। রাজনাথের কথার উত্তরে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়ে ফেং বলেন, উভয়পক্ষকেই শান্ত হওয়া উচিত। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য চীন ও ভারত উভয় পক্ষকে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখা প্রয়োজন।
×