ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় জমি জবরদখল

প্রকাশিত: ২০:০৩, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

নওগাঁয় জমি জবরদখল

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ৬ সেপ্টেম্বর ॥ মান্দায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাড়ে ৮ বিঘা জমি জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে তারই এক সময়ের বর্গাচাষী খলিলুর রহমান খামারুর বিরুদ্ধে। উপজেলার মান্দা সদর ইউনিয়নের ঘাটকৈর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী সরকার বাড়ির সম্পত্তিগুলোর জাল দলিল সৃষ্টি করে বর্গাচাষী খলিল খামারু দীর্ঘদিন ধরে নিজের কব্জায় রেখেছেন। ওইসব সম্পত্তির ফসল ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকাও আত্মসাত করছেন তিনি। স্থানীয়রা জানান, ঘাটকৈর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী সরকার বাড়ির গৃহবধূ মৃত উমা রানী সরকারের ওয়ারিশরা রীতিমতো খাজনা পরিশোধ করে এলেও জাল দলিল তৈরি করে খলিলুর রহমান খামারু জমির মালিকানা দাবি করছেন। ওইসব সম্পত্তিতে উৎপাদিত ফসলের অংশ দাবি করায় একবার হামলার শিকার হয়েছেন উমা রানীর ওয়ারিশরা। তাদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে খামারুর বিরুদ্ধে। ঘাটকৈর গ্রামের মনছের আলী, ফছির উদ্দিন, খয়বর খামারুসহ আরও অনেকে জানান, গ্রামের অরবিন্দু-উমা রানী দম্পতি নিঃসন্তান। অরবিন্দু সরকারের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী উমা রানী সরকার স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করতেন। বাড়ির দুর্গা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আজও বিদ্যমান। তারা নিজেরাই উমা রানীকে দেখাশোনা ও পাহারা দিয়ে রাখতেন। সেখানে আর কোন পরিবারের বসতি ছিল না। এ কারণে ওই সময় সরকার বাড়িতে মাঝে-মধ্যেই চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে আসছিল। অহরহ এ ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে অরবিন্দুর ভাই শৈলেন্দ্রনাথ সরকার মহাদেবপুর উপজেলার পাঁঠাকাটা গ্রামে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। এসময় বিধবা উমা রানী একাই সরকার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। পরবর্তীতে একই কারণে তিনিও পাঁঠাকাটায় দেবরের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে বসবাস অবস্থায় সাপের দংশনে মারা যান তিনি। পরবর্তীতে অরবিন্দুর ভাতিজা শিবেন্দ্রনাথ সরকার গং ওয়ারিশ সূত্রে ওই সম্পত্তির মালিক হন। কিন্তু বর্গাচাষী খলিলুর রহমান খামারু জাল দলিল সৃষ্টি করে জমিগুলোর মালিকানা দাবি করায় তারা চরম বেকাদায় পড়েন। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এক সময় সরকার বাড়ির ৩০ বিঘা সম্পত্তি শফিউদ্দিন প্রামাণিক, খলিল খামারুসহ এলাকার আরও কয়েক ব্যক্তি বর্গাচাষ করতেন। এসব সম্পত্তিতে উৎপাদিত ফসল হিস্যা অনুযায়ী সরকার পরিবারে পৌঁছে দিতেন বর্গাচাষীরা। এক পর্যায়ে সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা শুরু করেন তারই বর্গাচাষী শফিউদ্দিন ও খলিল খামারু। পরবর্তীতে জাল দলিল সৃষ্টি করে জমির মালিকানা দাবি করেন তারা। এ নিয়ে দুই বর্গাচাষী একে অপরের বিরুদ্ধে মামলায় জড়িয়ে পড়েন। নওগাঁ আদালতে দুইপক্ষের দায়েরকৃত মামলা ও জমির দাখিলকৃত দলিল সন্দেহজনক হওয়ায় আদালত সেগুলো হেফাজতে নেয়। একই সঙ্গে মামলাটিও ডিসমিস করে দেয় আদালত। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত ও সুপ্রীমকোর্টের আপীল শাখায় পরাজিত হয়ে বর্গাচাষী শফিউদ্দিনের হেফাজতে থাকা জমি প্রকৃত মালিককে ছেড়ে দেন। কিন্তু অপর বর্গাচাষী খলিল খামারু এখনও সাড়ে ৮ বিঘা সম্পত্তি নিজের কব্জায় রেখে ভোগদখল করে আসছেন। এদিকে ভূমি আপীল বোর্ড প্রকৃত মালিকের অনুকুলে রায় প্রদান করলেও তা মানছেন না দখলবাজ খলিল খামারু। ক্ষমতা ও ভাড়াটিয়া বাহিনীর দাপট দিয়ে তিনি এখনও জমি জবরদখল করে রেখেছেন। এ বিষয়ে খলিলুর রহমান খামারু বলেন, ওই জমি তিনি মৃত উমা রানী সরকারের নিকট থেকে কিনে নিয়েছেন।
×