ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধ হয়েছে বেশ কিছু সিনেমা হল

প্রেক্ষাগৃহ ব্যবসা চরম সঙ্কটে

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

প্রেক্ষাগৃহ ব্যবসা চরম সঙ্কটে

মনোয়ার হোসেন ॥ সর্বশেষ ১৭ মার্চ প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখেছে দর্শক। এরপর ১৮ মার্চ থেকে দীর্ঘ বিরতি। সাড়ে পাঁচ মাস ধরে অচল হয়ে আছে রূপালী পর্দা। করোনা সংক্রমণের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে সিনেমার প্রদর্শনী। সেই সুবাদে মহামারীর অভিঘাতে বর্তমানে চরম সঙ্কটে পড়েছে প্রেক্ষাগৃহ ব্যবসা। আগে থেকেই লোকসানের বোঝা নিয়ে ধুঁকতে থাকা প্রেক্ষাগৃহ ব্যবসায় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ে পরিণত হয়েছে করোনাকাল। ক্ষতি হয়েছে শত কোটি টাকার। ইতোমধ্যে নিভে গেছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বেশ কিছু সিনেমা হলের আলো। বেকার হয়েছেন হলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েক হাজার কর্মচারী। ভাড়া বকেয়া থাকায় বন্ধ হয়েছে ঢাকার সিনেমাপ্রেমীদের তীর্থস্থান বসুন্ধরা শপিংমলের স্টার সিনেপ্লেক্স। একসঙ্গে বন্ধ হয়েছে মাল্টিপ্লেক্স হলটির ছয়টি প্রদর্শন কক্ষ। বন্ধ হওয়ার এই তালিকায় আরও আছে ঢাকার অভিসার, কুমিল্লার মুন সিনেমা হলসহ আরও কিছু প্রেক্ষাগৃহ। সার্বিকভাবে প্রেক্ষাগৃহের ব্যবসাকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তার অন্ধকার। যেসব হল মালিকের নিজস্ব ভবন নেই তারা পড়েছেন আরও বেকায়দায়। ছবি প্রদর্শনীর মাধ্যমে আয়ের সুযোগ বন্ধ হলেও আছে অনেক খরচ। আটকে আছে কর্মচারীদের বেতন। অনেক পুরনো প্রেক্ষাগৃহের মালিকও বেতন দিতে পারছেন না হলের ক্লিনার থেকে শুরু করে লাইটম্যান, টিকেট বিক্রেতা, গার্ডসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের। বেতন না পাওয়ায় ছুটে গেছে অনেক হলের দক্ষ কর্মচারী। ফলে আগামীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও হল চালাতে হিমশিম খেতে হবে এসব হল মালিককে। এদিকে সিনেমা হল খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর। আগস্টের শেষ সপ্তাহে চলচ্চিত্র প্রদর্শক ও প্রযোজক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তথ্যমন্ত্রীর বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। তবে হল খুললেও মহামারীর কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। সংক্রমণের আতঙ্কে দর্শককে আবার প্রেক্ষাগৃহে ফিরিয়ে আনাকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মনে করছেন হল মালিকরা। একইভাবে সিনেমা হল বাঁচাতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল গঠনের ঘোষণায় অনেকেই আগ্রহী হলেও ব্যবসা না থাকায় ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে না পারার শঙ্কায় অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। মূলত মহামারীর আগে থেকেই দেশের প্রেক্ষাগৃহ ব্যবসায় চলছিল মন্দাভাব। করোনায় সেই পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সারা বছর মানসম্মত ছবি না পাওয়ায় দর্শক খরাকেই এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছেন প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা। একটি হলকে টিকিয়ে রাখতে বছরের ৫২ সপ্তাহে অন্তত দশ-বারোটি বিগ বাজেটের ভাল ছবির প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে বছরজুড়ে দুই-তিনটির বেশি ব্যবসাসফল ছবি পাওয়া যায় না। এমনকি প্রতি সপ্তাহে চালানোর নতুন ছবিও মেলে না। তার ওপর দুই ঈদকে কেন্দ্র করে প্রেক্ষাগৃহ কিছুটা চাঙ্গা থাকলেও করোনার কারণে দুটি উৎসবে ছবি চালাতে না পারায় পরিস্থিতি হয়েছে আরও শোচনীয়। চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা দেয়া হলেও বিদ্যুত বিল প্রদান থেকে যন্ত্রপাতি আমদানি কোন কিছুতেই মেলে না সেই সুবিধা। সবকিছুই দিতে হয় বাণিজ্যিক হারে। ফলে চলচ্চিত্রশিল্পের ক্রমাগত ক্ষতির মুখে ক্রমশ কমেছে সিনেমা হলের সংখ্যা। ঢাকাই ছবির সোনালি সময়ে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ১২ শতাধিক। এখন সেটা ধূসর স্মৃতি। করোনার আগেও মৌসুমি হল বাদে দেশব্যাপী বছরজুড়ে চালু থাকা সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল প্রায় ৮০টি। করোনাকালে সেই সংখ্যা আরও কমে ৭০টিতে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় হল ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে দেশী ছবির পাশাপাশি বলিউড-হলিউডসহ বিভিন্ন দেশের ছবি উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন অনেকে। বিদেশী ছবির আমদানির প্রতিবন্ধকতা তুলে দেয়ার কথা বলছেন তারা। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হল মালিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে এসেছে সিনেমা হলের নানা সঙ্কটের কথা। দেড় দশকের পথচলায় রাজধানীর সিনেমাপ্রেমীদের তীর্থস্থানে পরিণত হয় মাল্টিপ্লেক্স প্রেক্ষাগৃহ বসুন্ধরা শপিংমলের স্টার সিনেপ্লেক্স। সাড়ে পাঁচ মাস হল চালাতে না পারায় ভাড়া জমে যাওয়ায় পহেলা সেপ্টেম্বর বন্ধ হওয়ার ঘোষণা আসে ছয়টি প্রদর্শনকক্ষের এই বৃহৎ প্রেক্ষাগৃহের। এ বিষয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, করোনা না হলে এমনটা ঘটত না। মহামারীর কারণে ব্যবসা না থাকায় নিভে গেল ষোল বছরের শ্রম আর ভালবাসায় গড়া এই সিনেপ্লেক্সের আলো। ছয় মাসের ভাড়া বকেয়া পড়ায় বসুন্ধরা শপিংমল কর্তৃপক্ষ হলের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। কোভিডের উপদ্রবে হল চালু না থাকায় মোটা অঙ্কের ভাড়া টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। আর সিনেপ্লেক্সে এই শাখা বন্ধ হওয়ায় চাকরি হারালেন ১৫০ জন কর্মী। পাশাপাশি এই কয়েক মাসে কর্মচারীদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণসহ গুনতে হয়েছে দুই কোটি টাকার লোকসান। চলচ্চিত্রশিল্পের মন্দাবস্থায় লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে করোনাকালে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে টিকাটুলি এলাকার অর্ধশত বছরের পুরনো প্রেক্ষাগৃহ অভিসার। ২৬ কাঠার হলের জায়গাটিতে গড়ে তোলা হবে কমিউনিটি সেন্টার। শুধুমাত্র অভিসারের নামটি ধরে রাখতেই সেই ভবনে ছোট্ট করে একটি প্রেক্ষাগৃহ রাখার কথা জানিয়েছেন হলটির অন্যতম মালিক সফর আলী ভূঁইয়া। ২০০১ সালে কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় গড়ে ওঠে মুন সিনেমা হল। করোনাকালে থমকে গেছে এই প্রেক্ষাগৃহের উনিশ বছরের পথচলা। আক্ষেপ করে হলটির মালিক জাহাঙ্গীর আলম শিকদার বলেন, আগে থেকেই ব্যবসা খারাপ ছিল। তারপরও দীর্ঘদিন লোকসান গুনে কোনমতো প্রেক্ষাগৃহটি টিকিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু করোনাকালে আর পারিনি। আগে থেকেই ভাল ছবির অভাবে দর্শক হলে আসত না। বছরে একটা দুইটা ছাড়া ব্যবসাসফল ছবি পেতাম না। শিল্পী সমিতিসহ চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের কোন্দলের কারণে ঢাকাই ছবির অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। বর্তমানে হল চালানোর মতো ভাল ছবির জোগান নাই। বছরজুড়ে হাতেগোনা কয়েকটি বিগ বাজেটের ছবি আসে। প্রতিষ্ঠিত প্রযোজকের অনুপস্থিতিতে এমন ঘটেছে। এই ধারায় নতুনরা যুক্ত হলেও একটি-দুটি ছবির পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। ধারাবাহিকভাবে ছবি করবে এমন প্রযোজকের অভাব দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু হল ব্যবসা চালাতে বছরে কমপক্ষে ৫০টি নতুন ছবির প্রয়োজন হয়। এখন কুড়িটি দর্শকটানা ছবি পেতেই হিমশিম খেতে হয়। স্বল্প বাজেটের কিংবা পুরনো ছবি নিয়ে হল চালানো সম্ভব নয়। দুই ঈদ ছাড়া সারাবছর হল চালানোর ছবি নাই। প্রেক্ষাগৃহটি পুনরায় চালু করতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বিশেষ তহবিলের ঋণ গ্রহণ করবেন কিনাÑএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেখানে ভাল ছবির অভাবে দর্শক হয় না; সেখানে ঋণ নিয়ে নতুন করে বোঝা বাড়াতে চাই না। হলের জায়গায় অন্য কিছু করার চিন্তা করছি। এই প্রেক্ষাগৃহ মালিক জানান, বর্তমানে পুরো কুমিল্লা জেলাতেই কোন সিনেমা হল নেই। কয়েকটি টিমটিম করে চললেও করোনাকালে বন্ধ হয়েছে। বন্ধ হয়েছে দাউদকান্দি উপজেলার ঝুমকা ও ঝরনা সিনেমা হল এবং চান্দিনার পালকি। কুমিল্লা জেলা শহরে বন্ধ হয়েছে রূপালী, মধুমতি, দীপিকা ও গীতালী সিনেমা হল। কিছুদিনের মধ্যে সিনেমা হল খুললেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে বলে জানান মতিঝিলের মধুমিতা সিনেমা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তিনি বলেন, মানুষ এখনও করোনাজনিত ভয় ও আতঙ্কে আছে। তাই হল খুললেই দর্শক আসবেÑএমন নয়। আগামী বছরের জুন-জুলাই পর্যন্ত এমন অবস্থা চলতে পারে। তার ওপর আরেক সমস্যা হলো হল খুললেই দর্শক টানার মতো ছবি পাওয়ার গ্যারান্টি নেই। এই অবস্থায় বর্তমানে আয় না থাকলেও ব্যয় ঠিকই আছে। নিজের পকেট থেকে কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে। সর্বশেষ জুন মাস পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। আমরা বড় প্রেক্ষাগৃহগুলো চালিয়ে নিতে পারলেও ছোট সিনেমা হলগুলোয় দুর্দশার শেষ নেই। কর্মচারীদের বেতন জমে থাকার পাশাপাশি না পেরে অনেকে হল বন্ধ করে দিচ্ছেন। বিশেষ করে যেসব হলের নিজস্ব ভবন নেই সেগুলোর অবস্থা শোচনীয়। আর প্রেক্ষাগৃহের ব্যবসা পড়ে যাওয়ার মূল কারণটি হচ্ছে ভাল ছবি না থাকা। আগে যৌথ প্রযোজনার মাধ্যমে কিছু ভাল ছবি পাওয়া যেত। কিন্তু শর্তের বেড়াজালে থেমে গেছে এই ধারার ছবি নির্মাণ। দর্শককে হলমুখী করতে হলে মুক্ত বিশ্বায়নের দুনিয়ায় বিদেশীয় ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেক্ষেত্রে হলিউড ও বলিউডের ছবি প্রদর্শনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। আমাদের নিজস্ব প্রডাকশন কম তাই বাধ্য হয়েই এটা করতে হবে। দর্শক ফিরে পাওয়ার জন্য এটা দরকার। বিশেষ তহবিল গঠনের ঘোষণার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী যখন আমাদের ব্যথাটি অনুভব করেছেন তখন তিনি এটাও বুঝবেন যে হল বাঁচাতে ছবির আমদানি দরকার। উপযুক্ত প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতার অভাবে দেশী ছবির মানহীনতার কারণেই এমনটা ঘটেছে। বাড়ছে প্রেক্ষাগৃহের দৈন্যদশা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা করা হলেও বিদ্যুত বিল প্রদানের ক্ষেত্রে আরা শিল্প-কারখানার মতো সুবিধা পাই না। বিল দিতে হয় বাণিজ্যিক হারে। যন্ত্রপাতি আমদানিতেও এই সুবিধা মেলে না। তাই হল চালিয়ে এখন আর মুনাফার চিন্তা করা যায় না। বরং গত পাঁচ বছর ধরে ভর্তুকি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব রশীদ বলেন, সিনেমা হল খুলে দেয়ার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরে হয়তো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানা যাবে। তবে হল খুললেও সহসাই প্রেক্ষাগৃহে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরবেÑএমনটা আশা করা যায় না। কারণ, মানুষের ভীতি কাটতে সময় লাগবে। সবার কাছে আগে জীবন পরে বিনোদন। তাই আমাদের এখন উভয় সঙ্কট। না খুললেও বিপদ, আবার খুললে রয়েছে দর্শকশূন্যতার আশঙ্কা। সব মিলিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে সিনেমা হলের ব্যবসা। অনেকদিন ধরেই আইসিউতে থাকা সিনেমা হল করোনাকালে চলে গেছে লাইফ সাপোর্টে। ইতোমধ্যে এ ব্যবসায় প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। হল খুললে প্রযোজকরাও নতুন ছবি দিতে পারবে কিনা সন্দেহ। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা করা হলেও আমরা সেটার বেনিফিট পাই না। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে গেছে শিল্প সুবিধা। ১৯৯৮ সালে গড়া যশোরের বিখ্যাত ময়ূরী সিনেমা হলের মালিক আশরাফুল বাবু বলেন, করোনার কারণে ইতোমধ্যে কয়েকজন স্টাফ কমাতে হয়েছে। অনেক দক্ষ কর্মীই বেতন না পেয়ে নিজেরা চলে গেছে। এখন হল খুললেও হল চালাতে কষ্ট হবে। তার ওপর দর্শক উপস্থিতি নিয়েও শঙ্কা আছে। এই মুহূর্তে দর্শক নিয়ে আসার জন্য যে ধরনের ছবি দরকার সেটা আসলে পাইপলাইনে নেই। বর্তমানে লোকসান দিয়ে হল চালাচ্ছি। আয় না থাকায় কর্মচারীদের বেতন সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বিশেষ তহবিলের ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সঙ্কট উত্তরণে প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশ উন্নয়নে স্বল্প সুদে ঋণ দিতে হবে। পাশাপাশি ছবি বাংলা, হিন্দি কিংবা ইংরেজি যে ভাষারই হোক, ভাল ছবি হলে প্রদর্শনের সুযোগ করে দিতে হবে। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় যেমন যুদ্ধ করা যায় না, তেমনি ভাল ছবি ছাড়া প্রেক্ষাগৃহের ব্যবসা হয় না। দুইটা সুপারহিট দেশী ছবির সঙ্গে আমদানিকৃত পাঁচটি বিদেশী সুপারহিট ছবি চালাতে পারলে একটি বছর চলে যায়। করোনায় বন্ধ হয়েছে অর্ধশত বছরের পুরনো নওগাঁর বিখ্যাত তাজ সিনেমা হল। প্রেক্ষাগৃহটির মালিক সুমন কুমার সাহা বলেন, দর্শক হয় না বলে গত নবেম্বর থেকেই হল বন্ধ রাখতে বাধ্য হই। এরপর জানুয়ারিতে আবার চালিয়েও দর্শক না পাওয়ায় পুরোদমে বন্ধ হয়েছে। সব মিলিয়ে ৯ মাস ধরে বন্ধ হয়েছে। সরকারীভাবে হল খোলার সিদ্ধান্ত এলে আবার চালানোর চেষ্টা করব। ভাল মানের ছবি না থাকায় এবং সংক্রমণের ভয়ে দর্শক আসবে কিনাÑ সেটা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। নিজের লাভের জন্য শুধুমাত্র স্টাফদের বাঁচাতেই হল খুলতে চাই। সিনেমা হল চালুসহ প্রধানমন্ত্রীর তহবিল ঘোষণার বিষয়ে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, আমাদের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রযোজক ও প্রদর্শকদের বৈঠকে হল খুলে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সিনেমা হল খুল গেলে আশা করি সকল সঙ্কটও কেটে যাবে। চাইলেই দুর্দশাগ্রস্ত হল মালিকরা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল থেকে সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নিতে পারবেন। এছাড়া আমরা প্রযোজকরাও বেশ কিছু বিগ বাজেটের ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা করছি। সেসব ছবি হবে বিষয়ভিত্তিক ও সাহিত্যনির্ভর। ফলে রূপালী পর্দার সোনালি অতীত আাবার ফিরে আসবে।
×