ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়ং বাংলার ‘লেটস টকে’ সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরলেন দুই মন্ত্রী

করোনাপরবর্তী পাঠদান আধুনিকায়ন ও কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

করোনাপরবর্তী পাঠদান আধুনিকায়ন ও কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ইয়াং বাংলা আয়োজিত ‘লেটস টক’ নামে ভার্চুয়াল সংলাপে অংশ নিয়ে মহামারী-পরবর্তী সরকারের শিক্ষাদান পরিকল্পনার কথা তুলে ধরলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। করোনাভাইরাস মহামারীর পর পাঠদান প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন করে কারিগরি শিক্ষার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রযুক্তির ব্যাপক পরিবর্তন হবে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারাটা আমাদের নতুন চ্যালেঞ্জ। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পাঠদান আধুনিকায়নসহ কারিগরি শিক্ষার গুরুত্বের কথা বলেছেন প্রবাসী কল্যাণ-বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদসহ অন্যরাও। শনিবার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআইয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইয়াং বাংলা আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ রিকভারি : ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক সিরিজ ‘লেটস টকে’র দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। বিশ্বব্যাংকের পলিসি প্রকিউরমেন্টের পরামর্শক মোঃ ফারুক হোসেইনের সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও যুক্ত হয়েছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ক সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান, এসবিকে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সোনিয়া বশির কবির, আইএলওর জাতীয় প্রোগ্রাম অফিসার তানজিলুত তাসনুবা, বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের এজাজ আহমেদ, ইয়াং বাংলার কো-অর্ডিনেটর হাবিবুর রহমান এবং জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ইমরান মৃধা। প্রাণঘাতী করোনায় তরুণদের ওপর পড়া প্রভাবের কথা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের যুব সমাজ খুবই সংবেদনশীল। তাদের মনে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকমের প্রশ্নের জন্ম নেয়। পরিবার, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তারা বিভিন্নভাবে হয়রানির ও শিকার হয়। এজন্য তারা বিভিন্ন রকমের মানসিক সমস্যায় ভোগেন। যেমন বিষণœতা ও হতাশা। ফলে অনেক সময় তারা আত্মহত্যার মতো পদ্ধতিও বেছে নেয়। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের প্রত্যেক উপজেলায় একজন করে চাইল্ড সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে চিন্তা করছে। যারা প্রত্যেক স্কুলে একজন শিক্ষক ও একজন শিক্ষিকাকে মানসিক সমস্যা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করবে যেন শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মানসিক সমস্যা কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে সমাধান করতে পারেন। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রত্যেক জেলায় একজন করে চাইল্ড সাইকোলজিস্ট নিয়োগ করা হবে। পরবর্তীতে উপজেলায় একজন করে চাইল্ড সাইকোলজিস্ট নিয়োগ করা হবে। করোনাভাইরাস মহামারীর পর পাঠদান আধুনিকায়ন করে কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়ার কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা ও ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট অর্জনের জন্য নজর রাখতে হবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে। সামনে ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশনের জন্য, বিগ ডেটা, ব্লক চেইন...ছু ট্রান্স জেনেটিক টেকনোলজি... এগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রযুক্তির টোটাল ট্রান্সফরমেশন হবে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারাটা আমাদের নতুন চ্যালেঞ্জ। আমাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো কারিগরি শিক্ষা। ২০১০ সালে প্রণয়ন করা ন্যাশনাল পারসপেকটিভ প্ল্যান আধুনিকায়ন করার পাশাপাশি শিক্ষা আইনও চূড়ান্ত করা হবে। আমরা সাধারণ শিক্ষাকে পুরোপুরি ট্রান্সফর্ম করার জন্য চেষ্টা করছি এমন মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সবাই রিয়েলাইজ করছি... একটা কারিকুলাম আমাদের আছে সেটাকে আমার ক্রমাগত আপডেট করতে হবে। কারণ বিশ্ব খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। কারিকুলামে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করছি। ২০২১ সালে নতুন কারিকুলামে পাঠ্যপুস্তক বিদ্যালয়গুলোতে দেয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে তা পিছিয়ে ২০২২ সালে নিয়ে যেতে হচ্ছে। কারিগরি শিক্ষার নতুন ধরনটি কেমন হবে তার ধারণা দিয়ে তিনি বলেন, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নবম-দশম শ্রেণীতে অন্তত পক্ষে দুটি ট্রেড বাধ্যতামূলক সবাই শিখবে। অঞ্চল ভেদে যে ট্রেড যেখানে বেশি যৌক্তিক, তাদের পছন্দমতো তারা দুটি ট্রেড বেছে নেবেন। এটি ২০২১ এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু হওয়ার কথা ছিল। তবে আমরা ৬৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তা চালু করেছি। কারিকুলামের একদিকে নজর দিচ্ছি। কারিকুলাম সফট স্কিলস ইনকর্পোরেট করার চেষ্টা করছি। নতুন কারিকুলাম প্রণয়নের জন্য বাজার অর্থনীতির দিকে নজর রাখতে হবে। আপডেটিংটা খুব দ্রুত হতে হবে। সেজন্য মার্কেট রিসার্চ মাস্ট, আমাকে করতেই হবে। মার্কেট ডিমান্ডের কথা বলা হয়েছে। আমরা মনে করি, আজকে যে কারিকুলাম আছে সেটা তো কালকে রিডানডেন্ট হয়ে যাবে। সেজন্য আমাদের কন্টিনিউওয়াজ এডুকেশন ব্যবস্থা রাখতে হবে। সেজন্য মডুলার এডুকেশনের কথা আমরা বারবার বলছি। আমরা বলছি, রি স্কিলিং, আপ স্কিলিংয়ের জন্য আমাদের এই যে অনলাইন এডুকেশন, পোস্ট কোভিডের পর তা চলে যাবে না। সেটাকে আপডেট করার সুযোগ তৈরি করতে হবে। কারিকুলাম প্রণয়নের পাশাপাশি দক্ষ শিক্ষক তৈরিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এগিয়ে যাবে বলেও জানান দীপু মনি। সবার জন্য উচ্চশিক্ষা প্রয়োজনন কিনা তা ভাবার সময় এসেছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর ২০ থেকে ২৬ লাখ তরুণ শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। এ বিপুলসংখ্যক তরুণ শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ হয়ে শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে কিনা তা দেখার সময় এসেছে। আমাদের জাতীয় স্বপ্ন ২০৪১ সালের উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক কমিটমেন্ট এসডিজি বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মানসম্মত ও দক্ষতা নির্ভর কারিগরি শিক্ষার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকার কারিগরি শিক্ষাকে মেইনস্ট্রিমিং করার লক্ষ্যে নবম ও দশম শ্রেণীতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি করে ট্রেড কোর্স বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রবাসী কল্যাণ-বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে এক লাখ ২ হাজার মানুষ ফেরত এসেছেন। তার মন্ত্রণালয় বিপুলসংখ্যক শ্রমিককে আবার প্রশিক্ষিত করে বিদেশে পাঠাতে নজর রাখছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি যে ফিল করি, যেখান থেকে ট্রেনিং হোক না কেন, আমরা ওদের প্রশিক্ষিত করে ওদের আবার বিদেশে পাঠাই। কারণ দেশে অত শর্ট টার্মে অত কর্মসংস্থান করতে পারছি না। যারা যারা রেডি হবে, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আমি দ্রুত দেশের বাইরে পাঠাতে চাই। যত তাড়াতাড়ি পাঠাতে পারব, সরকার এটাতে সফল হয়েছে। তবে এখানে রিসার্চের দরকার আছে কোন দেশে কি হবে না হবে... ৩০টা দেশে লেবার কনস্যুলার আছে। আমি বলেছি ওখান থেকে খবর দিতে... ওই দেশে মানুষ, কি ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন আছে। ইমরান আহমদ বলেন, দেশে এখন ৬৪টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার-টিটিসি আছে। আরও ৪০টি টিটিসি ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে চালু হবে বলে আশা করা যায়। আগামী ২/১ সপ্তাহের মধ্যে আরও ৭১টি টিটিসির জন্য ডিপিপি সাবমিট করবে প্রবাসী কল্যাণ-বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রত্যক উপজেলাতে একটা করে টিটিসি আমরা করব। এটা কিন্তু আমাদের প্রয়োজন আছে বিদেশ মানুষ পাঠানোর জন্য। আমাদের লক্ষ্য, আমরা প্রতিটি উপজেলা থেকে অন্তত ১ হাজার মানুষকে প্রশিক্ষিত করে বিদেশে পাঠাব। টিটিসির কারিকুলাম প্রণয়নে মার্কেট স্টাডি করায় গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমাদের যে ট্রেডগুলো চালু আছে, সেগুলো রিভাইজ করতে হবে, যে তা বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে। আমাদের যে সার্টিফিকেট আছে, তার গ্রহণযোগ্যতা যেন বিদেশেও থাকে সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। একটা মিউচুয়াল রিকগনিশন থাকতে হবে। ওদের সার্টিফিকেট আমরা এ্যাসসেপট করলে, ওরা কেন করবে না? আজ কোভিড-১৯ মহামারী পরবর্তী সময়ের পরিকল্পনা ও তরুণদের উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে শেষ হবে তিন দিনের ‘লেটস টক’ আয়োজন। সমাপনী আয়োজনে নবনিতা চৌধুরীর সঞ্চালনায় কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে তরুণদের উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনা করবেন ইয়াং বাংলার আহ্বায়ক নাহিম রাজ্জাক। থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ড. আহমেদ কায়কাউস ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান। সমাপনী বক্তব্য রাখবেন সূচনা ফাইন্ডেশনের চেয়ারপার্সন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।
×