ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনা মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংকের বড় সহায়তা চাওয়া হবে

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

করোনা মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংকের বড় সহায়তা চাওয়া হবে

এম শাহজাহান ॥ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের কাছে বড় অঙ্কের অর্থ সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা সামনে রেখে এ সংক্রান্ত একটি বিশদ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে। আগামী ১২ থেকে ১৮ অক্টোবর সংস্থাটির বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারের বৈঠকটি ভার্চুয়ালি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষ। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ সংশ্লিষ্ট সিনিয়র সচিবরা বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে বার্ষিক সভায় সংযুক্ত হবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা সামনে রেখে কাজকর্ম শুরু করেছে। মূল লক্ষ্য, করোনা মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক গ্রুপের কাছ থেকে বড় সহায়তা আদায় করা। জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় এবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কোভিড-১৯ মোকাবেলা। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের সদস্য প্রায় সব দেশগুলোর মানুষ এখন করোনায় আক্রান্ত। এ কারণে সংস্থা দুটি পৃথক পৃথক সহায়তা কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। বিশ্বব্যাংক করোনা মোকাবেলায় জরুরী সহায়তা হিসেবে ১৪ শ’ কোটি ডলার বা ১৪ বিলিয়ন এবং আইএমএফ ৫০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা ঘোষণা করেছে। সব মিলিয়ে জরুরী তহবিল হিসেবে ৬৪ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা রয়েছে সংস্থা দুটির হাতে। এছাড়া বিশ্বব্যাংক গ্রুপ দরিদ্র ও দুর্বলদের সুরক্ষা, ব্যবসায়িক সহায়তা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে জোর দিতে আগামী ১৫ মাসের মধ্যে আরও ১৬০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা করবে। এ কারণে করোনা মোকাবেলায় সংস্থা দুটির ফান্ডে এখন ২২৪ বিলিয়ন ডলারের অর্থ রয়েছে। এই অর্থ সহায়তা হিসেবে গরিব দেশগুলোকে ঋণ ও অনুদান হিসেবে দেয়া হবে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বিভিন্ন সংস্থা, আইআরবিডি, আইডিএ, আইএফসি করোনা মোকাবেলায় পৃথক তহবিল গঠন করতে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় এসব সহায়তা গঠন ও কোন কোন দেশে কতটুকু দেয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জানা গেছে, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন হবে বাংলাদেশের। বিশেষ করে করোনার টিকা আমদানি, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন এবং বাজেট ঘাটতি মেটানো। চলতি বাজেটে বিদেশী সহায়তা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা যা, গত অর্থবছরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। এই অর্থ সংগ্রহে বিশ্ব্যাংক গ্রুপ ও আইএমএফের সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া করোনা মোকাবেলায়ও সরকারের বিপুল অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন হবে। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আজিজুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করতে হবে। এ অর্থ আসবে দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে। ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ অর্থ সহায়তা দিয়েছে। তবে বাজেট বাস্তবায়নেও বিদেশী সহায়তা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক গ্রুপ এবং আইএমএফ দেশের উন্নয়নে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সংস্থা দুটির বার্ষিক সভায় অর্থ সহায়তা চাওয়া হবে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আর এ কারণে আশা করা হচ্ছে, বিশ্ব্যাংক গ্রুপের কাছ থেকে বড় সহায়তা পাওয়া যাবে। জানা গেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক সহায়তা দিচ্ছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে নীতিগত বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা দিচ্ছে। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ১০০ মিলিয়ন ডলার ও খাদ্য নিরাপত্তায় আরও ২০ কোটি ডলার এবং সহায়তা দিয়েছে। এছাড়া আইএমএফ ৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ৬ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকার জরুরী সহায়তা দিয়েছে। এদিকে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রভাবে বিপর্যস্ত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জরুরী ভিত্তিতে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বা ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা তহবিল অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস সম্প্রতি এই তহবিল ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এ তহবিল করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও তাদের কর্মীদের অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটাতে সাহায্য করবে। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, জরুরী এই সহায়তা ঋণ ও অনুদান আকারে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোকে দেয়া হবে। সদস্য দেশগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, মহামারী প্রতিরোধ ব্যবস্থা, জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসহ অর্থনীতির ক্ষতিরোধে বেসরকারী খাতের সঙ্গেও কাজ করবে বিশ্বব্যাংক। জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের ভার্চুয়াল বৈঠকটির প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু করা হয়েছে। আগামী ৬ অক্টোবর থেকে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বার্ষিক সভা শুরু হবে। তবে মূল বৈঠকটি শুরু হবে ১২ অক্টোবর। আগামী ২৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। এ বৈঠক ঘিরে বিশ্বব্যাংকের সদস্য সবগুলো রাষ্ট্র এখন অর্থপ্রাপ্তির জন্য মুখিয়ে আছে।
×