ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এটি গর্বের এবং সম্মানের ॥ কৃষিমন্ত্রী

এফএও ৩৬তম এশিয়া প্যাসিফিক সম্মেলন হবে বাংলাদেশে

প্রকাশিত: ২২:২০, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

এফএও ৩৬তম এশিয়া প্যাসিফিক সম্মেলন হবে বাংলাদেশে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ৩৬তম এশিয়া-প্যাসিফিক আঞ্চলিক সম্মেলনের আয়োজক হয়েছে বাংলাদেশ। চারদিনব্যাপী ৩৫তম সম্মেলনের সমাপনী শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে শুক্রবার এই ঘোষণা দেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ৪৬ সদস্য দেশের মন্ত্রীসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা এই সম্মেলনে অংশ নেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে এবং স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বছরের প্রাক্কালে এই অর্জন দেশের জন্য বিরাট গর্বের এবং সম্মানের বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। শুক্রবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও’র) ৩৫তম এশিয়া ও প্যাসিফিক আঞ্চলিক সম্মেলনের সমাপনী শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী। এ সময় কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান, খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম এবং এফএও’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পসন উপস্থিত ছিলেন। ৩৫তম সম্মেলনের আয়োজক ছিল ভুটান। দুই বছর পর পর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তাই ২০২২ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘের এফএও সংস্থায় যোগদানের পর এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ এই সম্মান পেয়েছে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় ৩৬তম অধিবেশন এই অঞ্চলের দেশগুলোর অর্জন, সাফল্য, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন বিষয়ে মতবিনিময় ও পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। ব্রিফিংকালে মন্ত্রী বলেন, ৩৬তম সম্মেলন বাংলাদেশে আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবের ওপর চীন, ভারত, ভুটান, ইরান, তিমুর, থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স ও কম্বোডিয়ার সরাসরি সমর্থন এবং অন্যান্য সদস্যদেশ সম্মতি প্রদান করে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার আঞ্চলিক সম্মেলন একটি আনুষ্ঠানিক ফোরাম যেখানে সদস্য দেশসমূহের কৃষিমন্ত্রীবৃন্দ এবং অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তাগণ খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ ও সমাধান নিয়ে বৈঠকে মিলিত হন। মন্ত্রী আরও বলেন, বিগত ৪০ বছরে কৃষিক্ষেত্রে ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বিশেষত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, আবাদযোগ্য জমি হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ার চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশ দানাদার খাদ্যে আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশের এ অর্জন অন্যান্য সদস্যদেশের জন্য রোল মডেল ও উদাহরণ । ব্রিফিংকালে মন্ত্রী জানান, ভুটান এবারের ৩৫ তম এশিয়া-প্যাসিফিক আঞ্চলিক সম্মেলন ১-৪ সেপ্টেম্বর সময়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আয়োজন করেছে। দুই বছর পর পর এই রিজিওনাল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৪৬টি সদস্য দেশের মধ্যে ৪১টি দেশের মন্ত্রীবৃন্দ, উর্ধতন সরকারী কর্মকর্তা, বেসরকারী খাত, সিভিল সোসাইটি, অ্যাকাডেমিয়া এবং খাদ্য ও কৃষি খাতের টেকনিক্যাল এক্সপার্টসহ ৪০০-এর বেশি প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেছে। মন্ত্রী বলেন, মহামারী করোনা, ঘূর্ণিঝড় আমফান, চলমান দীর্ঘস্থায়ী বন্যাসহ যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বাংলাদেশের কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কৃষি মন্ত্রণালয়সহ এর অধীন সকল দফতর করোনা ঝুঁকির মধ্যেও অত্যন্ত সজাগ, সক্রিয় রয়েছে। ফলে করোনাকালেও আমাদের খাদ্য উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। করোনার কারণে দেশে খাদ্যের কোন সঙ্কট হবে না বলে আশা করি। ৩৫তম সম্মেলন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এশিয়ার সব দেশই সবুজ বিপ্লবের জন্য কাজ করছে। গোটা এশিয়াতে এখন আর খাদ্য সঙ্কট নেই; এখন পুষ্টির বিষয়ে কাজ হচ্ছে। সম্মেলনে পুষ্টি বিষয়ক কথা হয়েছে। ছোট ছোট কৃষককে আরও উৎসাহের মাধ্যম কিভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্মেলনে সব দেশই যেটি বলেছে, কোভিড-১৯ মোকাবেলা করার কথা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির কথা। কোভিড যেন বাধা না হয় সে আলোচনা করেছেন সবাই। মন্ত্রী দেশে ভুট্টা, কেশোনাট, আম এসবের প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে অপার সম্ভাবনা আছে বলেও উল্লেখ করেন। গত বছরের উদাহরণ টেনে মন্ত্রী বলেন, এই সময়ে সাতক্ষীরায় ২০ বিঘা জমিতে চাষ হয়েছিল গ্রীষ্মকালিক টমেটো। আমরা দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে এবার করোনার মধ্যেও এই টমোটের চাষ হয়েছে হাজার বিঘার ওপর। এক বছরেই এত কৃষক টমোটো চাষে আগ্রহী হওয়া যেমন ইতিবাচক তেমনি কৃষক লাভবান হচ্ছে বলেই আগ্রহী হচ্ছেন, বলেন কৃষিমন্ত্রী। কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখানে পারিবারিক চাষাবাদ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আরেকটি হলো সবাই যেন হাতে হাতে মিলে দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারি সেটিও বলা হয়েছে আলোচনায়। কৃষিমন্ত্রী বলেন, মহামারী করোনা, ঘূর্ণিঝড় আমফান, চলমান বন্যাসহ যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বাংলাদেশের কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। করোনার কারণে দেশে খাদ্য সঙ্কট হবে না বলে আশা করি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সব দুর্যোগ মোকাবেলা করে খাদ্য উৎপাদনের বর্তমান ধারা অব্যাহত নয় আরও বৃদ্ধি করতে পারব বলে আশা করি। ৩৫তম সম্মেলনে সদস্য দেশের অগ্রাধিকার খাতের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কোভিড-১৯ এর প্রভাব, কৃষির সার্বিক অবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির নিশ্চয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির উন্নয়নে পারস্পরিক অংশীদারিত্ব, উদ্ভাবন ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়েও আলোচনা হয়। সম্মেলনে খাদ্য অপচয়ের নতুন বিপণন ব্যবস্থা যেমন, ই-কমার্স এবং উন্নতমানের স্টোর ফ্যাসিলিটিজ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়। জানা গেছে, করোনার কারণে ১ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এবারের সম্মেলন অনলাইনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রী পর্যায়ের সেশনে ৩১ মন্ত্রী, ২৮ ভাইসমন্ত্রী অংশ নেন। বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশে ৬টি মন্ত্রণালয় যেমন কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অংশগ্রহণ করেছে। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে আরও অংশ নেন, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মুজমদার, কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান, খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোঃ আব্দুর রৌফ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম, মৎস্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোঃ তৌফিকুল আরিফ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম সচিব রাব্বি মিয়া, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোঃ আশফাকুল ইসলাম বাবুূল। উল্লেখ্য, এই সম্মেলন এখন পর্যন্ত ভারত ৪বার; ইন্দোনেশিয়া, জাপান, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ড প্রত্যেকে ৩বার; চীন, কোরিয়া এবং ভিয়েতনাম দুবার; ভুটান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা প্রত্যেকে একবার করে আয়োজন করেছে।
×