ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শুরুতেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী

শীতের আগেই করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার তোড়জোড়

প্রকাশিত: ২২:২০, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

শীতের আগেই করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার তোড়জোড়

রশিদ মামুন ॥ শীতের আগেই নাগরিকদের ভ্যাকসিন দিতে তোড়জোড় শুরু করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। শীতে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করে। সঙ্গত কারণে যে করেই হোক শীতের আগে তৃতীয় ধাপের ট্রায়েল শেষ না হলেও ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হতে পারে। তবে শুরুতে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে। এরপর অন্য নাগরিকদের ভ্যাকসিন দেয়া হবে। রাশিয়া সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগে সবার আগে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করে। দেশটি নিজেদের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন বছর শেষ হওয়ার আগেই তাদের দেশের নাগরিকদের মাঝে সরবরাহ করতে চায়। অন্যদিকে ইউরোপীয় দেশগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিনের ওপর নির্ভর করছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের বাজারজাতকারী কোম্পানি এ্যাস্ট্রেজেনেকার সঙ্গে চুক্তি করেছে। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১ নবেম্বর থেকে আমেরিকায় ভ্যাকসিন প্রয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এজন্য একটি রূপরেখা তৈরি করে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে দেশটি। ইউরোপ, আমেরিকা এবং রাশিয়ার এই উদ্যোগে মনে করা হচ্ছে শীত জেঁকে বসার আগেই ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে দেশগুলোতে। শীতে পশ্চিমা দেশগুলোতে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নিচে নেমে যায়। গত বছরের শুরুর দিকে উহানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর পশ্চিমা বিশ্বে কাছাকাছি সময়ে করোনা ছড়িয়ে পড়ে। করোনার প্রভাবে দেশগুলো ভয়ঙ্কর এক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে শীতের প্রকোপ শুরু হয়। শীতকাল তিন মাসের হলেও পশ্চিমা দেশগুলোতে অন্তত পাঁচ মাস শীতের প্রভাব থাকে। করোনাভাইরাসে বিশ্বে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় গত ১৭ এপ্রিল। ওইদিন আট হাজার ৫০২ জন করোনায় মৃত্যুবরণ করেন। এখন প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষ বিশ্বে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর বিশ্বে একদিনে পাঁচ হাজার ৯০৩ জন ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। শীতে পরিবহন এবং অন্যসব জায়গায় বদ্ধভাবে চলাফেরা করতে হয়। এতে করে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। আবার শীতে ঠাণ্ডা এলার্জি এবং ফুসফুসের সংক্রমণ বেড়ে যায়। কোভিড-১৯ ভাইরাস ফুসফুসকেই আক্রান্ত করে ফলে শীত এগিয়ে আসায় ভয় বাড়ছে। দেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ওই সময় থেকেই গ্রীষ্মকাল শুরু হয়েছ। সঙ্গত কারণে ভাইরাস শীতে কি আচরণ করবে তা এখনও অজানা। ভয়েস অব আমেরিকা এক প্রতিবেনে জানায়, দেশটির ৫০ প্রদেশ এবং পাঁচটি বড় শহরের প্রশাসনের কাছে ট্রাম্প প্রশাসন একটি নির্দেশিকা পাঠিয়েছে। ওই নির্দেশিকায় ভ্যাকসিন সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের জন্য একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। শুরুতে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। হাসপাতালে এরা যাতে নির্ভয়ে মানুষের চিকিৎসা করতে পারে এজন্যই এই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে অনেকেই বলছেন নির্বাচনের আগে ট্রাম্প সরকার চমক দেখানোর জন্য ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে যাচ্ছে। তৃতীয় ধপের ট্রায়েলের ফলাফল পাওয়ার আগে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিয়ে এজন্য মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনাও হচ্ছে। তবে ঠিক কোন ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হবে সে বিষয়ে এখনও পরিষ্কার করেনি মার্কিন প্রশাসন। দেশটি যেমন এ্যাস্ট্রেজেনেকার কাছ থেকে ভ্যাকসিন ক্রয়ের চুক্তি করেছে একই ভাবে নিজের দেশের দুটি কোম্পানি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে। এই দুই কোম্পানি মর্ডানা এবং ফাইজারের সঙ্গেও দেশটির সরকার ভ্যাকসিন ক্রয়ের চুক্তি করেছে। অন্যদিকে আমেরিকার চেয়ে আরও একধাপ এগিয়ে রয়েছে রাশিয়া। দেশটির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে তারা অক্টোবর থেকেই গণহারে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করবে। সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে রুশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাশকো তাদের জানিয়েছে আগমী মাস থেকেই রাশিয়া গণহারে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করবে। শুরুতে চিকিৎসক এবং শিক্ষকদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে চায় দেশটি। এজন্য তাদের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ধাপের ট্রায়েলের সঙ্গে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে দেশটি। রাশিয়া বলছে ইতোমধ্যে তাদের ভ্যাকসিনের প্রথম ব্যাচ উৎপাদন হয়েছে। তারা ভ্যাকসিনটি উৎপাদনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। একই প্রস্তুতি দেখা গেছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রেও। তারা ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য রাশিয়া এবং আমেরিকার মতো আগ্রাসী না হলেও ইতোমধ্যে বিশ্বের তৃতীয় ধাপের ট্রায়েলে এগিয়ে থাকা এ্যাস্ট্রেজেনেকার কাছ থেকে ভ্যাকসিনের প্রি-অর্ডার দিয়ে রেখেছে। এ্যাস্ট্রেজেনেকা ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়েলের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনও করছে। বলা হচ্ছে নবেম্বর নাগাদ এই ফলাফল হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গে অন্তত ২০০ কোটি ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পরবে তারা। এরমধ্যে ইউরোপের প্রতিটি নাগরিকের ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে চুক্তি করেছে তারা। তবে এখান থেকে ১০০ কোটি ভ্যাকসিন বিশ্বের দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত দেশে সরবরাহ করা হবে। ইতোমধ্যে এমন ৯২ দেশের তালিকা করা হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের নামও রয়েছে। তবে তৃতীয় ধাপের ট্রায়েল শেষ হওয়ার আগেই ভ্যাকসিন প্রয়োগের এই আগ্রসী নীতির সমালোচনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তারা বলছে ভ্যাকসিন মানুষের জন্য কতটা নিরাপদ তা যাচাই বাছাই করার পরেই প্রয়োগ করা উচিত।
×