ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘সড়ক টু’ এবং মহেশ ভাটের প্রত্যাবর্তন

প্রকাশিত: ০০:১০, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

‘সড়ক টু’ এবং মহেশ ভাটের প্রত্যাবর্তন

১৯৯১ সালে মুক্তি পেয়েছিল মহেশ ভাট পরিচালিত ‘সড়ক’ ছবিটি। রোমান্টিক এ্যাকশন ধাঁচের ছবিটি ওই সময়ে বক্স অফিসে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। সঞ্জয় দত্ত একজন ট্যাক্সি ড্রাইভারের ভূমিকায অভিনয় করেছিলেন। তার বিপরীতে ছিলেন মহেশ ভাট কন্যা পূজা ভাট। পতিতালয়ের হিজড়া সর্দারণী মহারানীর কব্জায় থাকা এক অসহায় তরুণীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন পূজা। টানটান উত্তেজনাপূর্ণ গল্পের নাটকীয়তা, শিল্পীদের দুর্দান্ত অভিনয়, সুনিপুণ নির্মিতির পাশাপাশি ‘সড়ক’ ছবির গানগুলো দর্শকদের মোহাবিষ্ট করে রেখেছিল। নব্বই দশকের সূচনালগ্নে মহেশ ভাট ‘আশিকী’, ‘সড়ক’ ‘দিল হ্যায় কী মানতা নাহিন’ ছবিগুলোর মাধ্যমে হিন্দী সিনেমার অঙ্গনে চমৎকার রোমান্টিক আবেশ সৃষ্টি করেছিলেন। ছবিগুলোর গল্পে ছিল অনবদ্য রোমান্টিক মেজাজ, নির্মিতিতে ছিল নতুনত্বের নানা চমক এবং মিষ্টি মেলোডিয়াস সুরের জাদু ছিল ওই ছবিগুলোর গানে। সব মিলিয়ে পরিচালক মহেশ ভাট দর্শক মনে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন ওই সময়ে নির্মিত কয়েকটি দুর্দান্ত ব্যবসা সফল ছবির মাধ্যমে। ১৯৭৪ সালে পরিচালক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন তিনি। ১৯৯৯ সালে মহেশ ভাট পরিচালিত ‘কার্তুজ’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। এরপর তিনি আর কোন সিনেমা পরিচালনা করেননি। পরিচালক হিসেবে টাইটেলে তার নাম না থাকলেও এরপর তাদের পারিবারিক ব্যানার বিশেষ ফিল্মসের অধিকাংশ সিনেমা তার তত্ত্বাবধানে পরিবারের অন্যান্যরা পরিচালনা করছেন। এখন তার বয়স ৭১ চলছে। বলিউডের এই বিখ্যাত গুণী মানুষটি গত ২০ বছর ধরে সিনেমা পরিচালনা করছেন না স্বনামে। অনেকবার মহেশ ভাটের পরিচালনায় ফিরে আসার খবর প্রচারিত হলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবে রূপ লাভ করেনি। তবে গত দেড়-দুই বছর আগে যখন তিনি সত্যি সত্যি আবার পরিচালনায় ফিরে আসার আয়োজন করলেন বলিউডে রীতিমতো সাড়া পড়ে গিয়েছিল। কারণ, ৩০ বছর আগে তার পরিচালিত দারুণ ব্যবসাসফল আলোচিত প্রশংসিত সিনেমা ‘সড়ক’-এর সিকুয়াল ‘সড়ক টু’র মাধ্যমে দুই কন্যা পূজা ভাট ও আলিয়া ভাটকে নিয়ে তিনি রুপালি পর্দায় হাজির হতে যাচ্ছেন। ‘সড়ক’ ছবির নির্মাতা হিসেবে মহেশ ভাটের কাছে দর্শকদের প্রত্যাশা ছিল অনেক। ২০২০ সালের অন্যতম সেরা কাক্সিক্ষত ছবি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল ‘সড়ক টু’। গত মার্চেই এ ছবিটির মুক্তির তারিখ নির্ধারিত থাকলেও করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবে তা পিছিয়ে জুলাইয়ে নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু করোনা সঙ্কটে সিনেমা হল বন্ধ থাকায় শেষ পর্যন্ত অনলাইনে স্ট্রিমিং সাইটে ‘সড়ক টু’ মুক্তির আয়োজন করা হয়। অবশেষে গত ২৮ আগস্ট অনলাইন স্ট্রিমিং সাইট জিজনি হটস্টার এ মুক্তি পেয়েছে মহেশ ভাট পরিচালিত বিশেষ ফিল্মস প্রযোজিত সঞ্জয় দত্ত, আলিয়া ভাট, পূজা ভাট, আদিত্য রায় কাপুর, প্রিয়াঙ্কা বসু, যিশু সেনগুপ্ত, প্রমুখ অভিনীত ১৩৩ মিনিট ব্যাপ্তির ‘সড়ক টু’ ছবিটি। যেহেতু সিনেমা হলে মুক্তি পায়েনি এ ছবিটি। ঘরে বসে তরতাজা নতুন ছবি দেখার প্রত্যাশা নিয়ে যারা বসেছেন তাদের চরমভাবে হতাশ হতে হয়েছে। মহাবিরক্তিকর একটি সিনেমা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে দর্শকদের কাছে। কোন দর্শকই ‘সড়ক টু’ দেখে মোটেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি। সবার কাছে অর্থহীন অত্যন্ত নিম্ন মানের একটি চলচ্চিত্র হিসেবে গণ্য হয়েছে মহেশ ভাটের সর্বশেষ ছবি ‘সড়ক টু’। অযৌক্তিক বিরক্তিকর কাহিনী, বোরিং ঘটনাবিন্যাস, শিল্পীদের যাচ্ছেতাই মানের অভিনয়, ভীষণ দুর্বল নির্মিতি ইত্যাদি দুর্বলতায় ছবিটি রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে বলিউডের বিভিন্ন চিত্র সমালোচকবোদ্দা দর্শক ‘সড়ক টু’ দেখে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। সবার চোখে এ বছরের সেরা বাজে ছবি হিসেবে ‘সড়ক টু’র নামটি উঠে এসেছে। কোন সমালোচকই পাঁচ নম্বরের মধ্যে এক কিংবা দেড়ের বেশি দিতে পারেননি রেটিংসে। ১৯৯১ এ ‘সড়ক’ দেখা যেসব দর্শক এখনও নস্টালজিক হন তাদের চোখে হালের ‘সড়ক টু’ মহাবিরক্তিকর, চরম বোরিং অভিজ্ঞতা মনে হয়েছে। আগের ছবিতে সঞ্জয় দত্ত-পূজা ভাটের রোমাঞ্চ, মহারানীরূপী ভিলেন অভিনেতা সদা শিব আনুশকারের দুর্দান্ত ভয়ঙ্কর অভিনয় সবাইকে যেভাবে আচ্ছন্ন, আবিষ্ট এবং আলোড়িত করেছিল ‘সড়ক টু’ ছবিতে আলিয়া ভাট, আদিত্য রায় কাপুর, এমনকি সঞ্জয় দত্ত, পূজা ভাট কিংবা মারকান্দ দেশপান্ডে গুলশান গ্রোভাররা দর্শকদের মনে কোনভাবেই রেখাপাত করতে পারেননি। সঙ্গীত পরিচালক জুটি নাদিম শ্রাবণ আগের ‘সড়ক’-এ সুরের যে জাদুময়তা সৃষ্টি করেছিলেন এবারের ‘সড়ক টু’ ছবির গানগুলো তার ধারেকাছেই যেতে পারেনি। বিশ বছর বিরতির পর বৃদ্ধ বয়সে মহেশ ভাট আবার পরিচালনায় ফিরে প্রশংসার বদলে নিন্দার পাত্র হলেন। তার সক্ষমতার অধঃপতন সবাইকে মর্মাহত ও হতাশ করেছে বৈকি।
×