ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সারতাজ আলীম

সুপার হিরো কিং টিচালা

প্রকাশিত: ০০:০৯, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

সুপার হিরো কিং টিচালা

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সভ্যতায় জন্ম নেয় নানা প্রথা। এর মধ্যে কিছু প্রথা পরিণত হয় অপপ্রথাতে। চতুর্দশ শতকে পশ্চিম আফ্রিকার শাসক মানসা মুসা ছিলেন বিশ্বের ইতিহাসের সব থেকে ধনী ব্যক্তি। ধারণা করা হয় আজকের যুগের হিসেবে তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়াবে অন্তত ৪০ হাজার কোটি ডলার। বলা হয় তার রাজ্য স্বর্ণে ভাসত। যুগের পালাবদলে আফ্রিকা পরিণত হয় কলোনিতে, পায় অশিক্ষিত, বর্বর খেতাব। শ্বেতবর্ণের মানুষ তাদের দাসে পরিণত করতে শুরু করে। ১৯ শতকের শুরুতে সিনেমার যাত্রা শুরু করলেও সেখানে একটা লম্বা সময় কালোদের কোন স্থান ছিল না। পরে স্ক্রিনে ছোট বা অগুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে দু-একজন কৃষ্ণাঙ্গ আসতে শুরু করলেও কৃষ্ণাঙ্গ নায়ক নির্ভর সিনেমা এসেছে অনেক পরে। এদিকে হালের জনপ্রিয় কমিক বই নির্ভর সুপারহিরো হয়ে উঠেছে এই যুগের আইকন হিরো এবং কিছু ক্ষেত্রে তো রীতিমতো জাতীয়তাবাদের প্রতীক। আর সিনেমার কারখানা হলিউডের কমিকভিত্তিক সুপারহিরো সিনেমার হিরোরা এতদিন ছিল শ্বেতবর্ণের। আর সেই প্রথা বা অপপ্রথা বদলের সূচনা হয় ২০১৮ সালের মারভেলের ব্ল্যাক প্যান্থার সিনেমা দিয়ে। মারভেল কমিক-বুকভিত্তিক সিনেমাগুলো শুরু থেকেই দারুণ জনপ্রিয় হলেও এতদিন পড়ন্ত তাদের সব সুপারহিরোই ছিল শ্বেতবর্ণের। মার্কিন অভিনেতা চ্যাডউইক বসম্যানের অভিনীত ব্ল্যাক প্যান্থার দিয়ে আসে সেই পরিবর্তন। ২০১৩তে ‘জ্যাকি রবিনসন’ ছবির মধ্য দিয়ে তিনি প্রথম নিজের উপস্থিতি দুর্দান্ত অভিনয়ের কথা জানান দেন। ব্ল্যাক প্যান্থার সিনেমায় যেন নিজের সেরাটা ঢেলে দেন চ্যাডউইক বসম্যান। ব্ল্যাক প্যান্থার সিনেমার গল্পটা যেন প্রত্যেক কৃষ্ণাঙ্গের অন্তরের কল্পনার জগতেরই গল্প। আর এই জন্যই হয়ত নিজের সেরাটা দেন তিনি। কাল্পনিক দেশ ওয়াকান্ডা যেন হয়ে দাঁড়ায় গোটা আফ্রিকার এক আইকন। সবাই যেন ওয়াকান্ডা হওয়ার স্বপ্ন দেখে। ছোট্ট শিশুটিও ওয়াকান্ডার রাজা কিং টিচালা হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখে। ‘ওয়াকান্ডা ফরেভার’ বলে অনুপেপ্ররণা খুঁজে পেতে শুরু করে মানুষ। প্রাণবন্ত অভিনয় করে কিং টিচালার চরিত্রকে কমিক বইয়ের একটা চরিত্র ছাপিয়ে একটা আইকনে পরিণত করেন স্যাডউইক। মার্ভেল সিরিজের ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ ব্লকবাস্টার হিট হয়েছিল। এই ছবিটি অস্কারে সেরা ছবির মনোনয়নও পেয়েছিল। কমিকস থেকে তৈরি এটিই প্রথম ছবি যেটি অস্কারের মনোনয়ন পায়। ‘সেরা ছবি’র মতো মর্যাদাপূর্ণ বিভাগসহ ৭টি বিভাগে মনোনয়ন পায় ব্ল্যাক প্যান্থার। ৩টি অস্কার জিতে মারভেলকে এনে দেয় প্রথম অস্কারের স্বাদ। মারভেলের অস্কার আফসোস ঘোচে এই ছবির মধ্য দিয়েই। বিদায়ও নিয়েছেন রাজার মতো। ২০১৬তে চ্যাডউইক বসম্যানের কোলন ক্যান্সার ধরা পড়ে। তখন তা স্টেজ ৩-এ পৌঁছে গিয়েছিল। তার পর শুরু হয়েছিল কঠিন চিকিৎসা। অনেক বার কেমোথেরাপির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু এসব সংবাদমাধ্যমকে জানতে দেননি তিনি। এমনকি মরণব্যাধি নিয়েও অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন না। এই সময়ের মধ্যেই বিখ্যাত ছবি তিনি উপহার দিয়েছেন হলিউডকে। তার মুখপাত্র নিকি ফিওরাভান্তে সংবাদসংস্থা এপিকে জানায়, শুক্রবার লস এ্যাঞ্জেলসে নিজের বাড়িতে চিরবিদায় নেন তিনি। টেলর সিমন লেডওয়ার্ডসহ পরিবারের সবাই তার পাশেই ছিলেন। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তার শরীরের ওজন কমে যাওয়াকে নিয়ে অনেকবার তাকে হাস্যরস, ট্রলের স্বীকার হতে হয়েছে। সম্প্রতি তাঁর ক্যান্সার চতুর্থ স্টেজে পৌঁছে যায়। ২০১৬ সালে ক্যান্সার ধরা পড়লেও কারও সঙ্গে এই দুরারোগ্য ব্যাধি তিনি আলাপ করেননি কখনও। কখনও ক্যামেরার সামনে ভেঙ্গে পড়েননি। নিজের লড়াইটা নিজের কাছে রেখেছেছিলেন তিনি। রাজার যে কখনও ভেঙ্গে পড়তে নেই! শেষ নিশ্বাস থাকা পর্যন্ত হাসিমুখে লড়াই করে যেতে হবে! ট্রলের শিকার হলেও হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন সব। আর তাই বলাই যায় চ্যাডউইক বসম্যান বিদায় নিয়েছেন রাজার মতোই। বিদায় কিং টিচালা! ওয়াকান্ডা ফরেভার!
×