ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অপূর্ব কুমার কুণ্ডু

মনোজ মিত্রের সুন্দরম

প্রকাশিত: ০০:০৯, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

মনোজ মিত্রের সুন্দরম

সময় চলে যায় তবু কথা না ফুরায়। অবিভক্ত ভারতবর্ষের সাতক্ষীরা জেলার ধূলিহর গ্রামে জন্ম নিয়ে ঝড়, দুঃখ আর দুর্দশার খর ¯্রােতে ভাসতে ভাসতে কলকাতায় স্তুত হওয়া, মেধায় বেড়ে ওঠা, দক্ষতায় নিজেকে শাণিত করা, প্রতিভায় সর্ব সমক্ষে প্রতিষ্ঠা লাভ করা। স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশে মাত্র কয়েক বছর আগে সেই সাতক্ষীরার প্রেসক্লাবে নাট্যানুরাগী দর্শকশ্রোতাদের টইটুম্বুর জনারণ্যে মধ্যমণি হয়ে স্মৃতি আর বাস্তবতার মিশেলে তাঁর দৃপ্ত উচ্চারণ, ‘স্মৃতি বয়ে যায়, স্মৃতি মুছে যায় না।’ সাজানো বাগান নবরূপে সাজাতে মন চায়। পরবাসে বাস্তুচ্যুত হতে ভয় হয়। সাত চৌকীদারদের সন্ধিগ্ধ পাহারার বাইরে মুন্নীদের এক খ- স্বাধীন ভূখ- পাইয়ে দিতে ইচ্ছা হয়। সমগ্র মহাভারতকে নোম্যান্স ল্যান্ডে দাঁড়িয়ে হৃদয়ের মর্মমূল থেকে দেখলে দেখাটা কেমন হয়। গ্রীসের সক্রেটিস ডেফোডিল্স ট্যাস্পেলের দৈব্য বাণীকে কোন ব্যাখ্যায় দাঁড় করায়। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, গিরিশ চন্দ্র ঘোষ, বুদ্ধদেবের নির্বান পথ রেখায় দাঁড়িয়ে ভবিষ্যত পানে তাকিয়ে যিনি, যিনি জীবন নাট্যে কখনও নাট্যকার, কখনও অভিনেতা, কখনও নির্দেশক, কখনও পথপ্রদর্শক আবার কখনও দেহে-মনে, ¯েœহে-অভিমানে, কোমলে-কঠোরে, আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে ভাবও আদর্শগত আশ্রয়স্থলে যার নাট্যদল সুন্দরম, সেই তিনি নাট্যকার মনোজ মিত্র, যিনি এবং তাঁর নাট্যদল সুন্দরম নাট্যযাত্রায় সমর্থক এবং সমান্তরাল। যা তুমি দেখনি, যা তুমি ভাবতে পার না, তা নিয়ে লিখতে যেও না; কল্পিত চরিত্রকে যেন তুমি দেখতে পাচ্ছ মানস চোখের সম্মুখে, তবে সংলাপের অভাব হবে নাÑ তার এই উচ্চারণ নাটক রচনার ব্যাকরণ। অভিনেতার অভিনীত চরিত্র হবে সেই মতো যেভাবে বহমান ¯্রােত হয় প্রবাহিত। নির্দেশনা মানে অপরের শক্তিটাকে চিনিয়ে দেয়া। অধ্যাপনায় ছাত্র-ছাত্রীদের কল্পনাশক্তিকে বাড়িয়ে তোলা এবং কোন মুহূর্তেও যেন হিংসা পরায়ণ না হওয়া। সংঘটক মানেই প্রতিটি অণুর সঙ্গে ঘটক। শিল্পচর্চা মানে মানুষকে ভালবাসা। এসবই চলতি পথে মনোজ মিত্রের সহযাত্রীর স্মৃতি কথা, মনের কথা।মনের কথায়, মানুষের কথায়, নাটকীয় কথায় নাট্যদল সুন্দরম জীবন্ত এপার বাংলায় সাজান বাগান, গল্পে হেকিম সাহেব, যা নেই ভারতে প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়নের সুবাদে। অধ্যাপক মনোজ মিত্র সর্বদা চর্চিত তার ছাত্রদের চেতনায়। তাঁর রচিত নাটক সারাদেশে মঞ্চায়িত বিভিন্ন নাট্যদলের প্রযোজনায়। শ্রদ্ধেয় রামেন্দু মজুমদার, আলী যাকের, জামাল উদ্দীন হোসেন, ফেরদৌসী মজুমদার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, লাকী ইনাম প্রভৃতি নাট্য ব্যক্তিত্ব বাধা পড়েছেন নাট্যদল সুন্দরম এবং নাট্য ব্যক্তিত্ব মনোজ মিত্রের অপরিসীমা ভালবাসায়। ফেরদৌসী মজুমদার আর মনোজ মিত্রের পারস্পরিক সাক্ষাৎকারের শিরোনাম জাতীয় দৈনিক যখন হয় ‘ডাকলে আসব ডাকলে যেও’ তখন বোঝা যায় দেশ কালের উর্ধে শিল্পের বাঁধনে শিল্পী কিভাবে বাঁধা রয়। নাট্য শিল্পীর মূল্যায়নের ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠও মিশনের প্রয়াত অধ্যক্ষ স্বামী অক্ষরানন্দজী মহারাজ অন্তীম সময়ে বিছানা ছেড়ে উঠে এসেছিলেন মনোজ মিত্র এসেছেন শুনে। উভয়েরই জন্মস্থান সাতক্ষীরা। সাতক্ষীরায় রামকৃষ্ণ দেবের মন্দির প্রতিষ্ঠা অসম্পন্ন রয়েছে সে কথা ভাসল উভয়ের স্মৃতির নস্টালজিয়ায়। মনোজ মিত্রের সান্নিধ্যে মহারাজের উদ্বেলিত ভাবনা। ভাবনার কাতরতা যখন লিপিবদ্ধ হয়ে বইয়ের পাতায় তখন অনুরাগী ভক্তদের ইচ্ছায় আজ সাতক্ষীরায় মন্দির উন্মোচিত গভীর শ্রদ্ধা এবং নিষ্ঠায়। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ভাবও আদর্শের প্রবাহমান ধারা যেমন রামকৃষ্ণ মঠও মিশন, অনেকটা তেমনি শ্রদ্ধেয় মনোজ মিত্রের নাটকের ভাবও আদর্শের প্রবাহমান ধারা নাটকের দল সুন্দরম। মধ্য আগস্টে ৬৩ বছর পূর্তি শেষে ৬৪ তে পদার্পণের এই মাহেন্দ্রক্ষণে নাট্যব্যক্তিত্ব শ্রদ্ধেয় মনোজ মিত্র এবং নাট্যদল সুন্দরম চির তারুণ্য ধরে থাকায় নাট্যানুরাগীর কাছ থেকে পেয়ে চলে অবিরাম প্রাণঢালা অভিবাদন।
×