ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বভারতীয় রাজনীতিতে ছাপ রাখা এক বাঙালী

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০

সর্বভারতীয় রাজনীতিতে ছাপ রাখা এক বাঙালী

ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আইনে মাস্টার্স শেষ করে কলেজ শিক্ষক আর সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন প্রণব মুখার্জী। শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেকে তুলে এনেছিলেন রাজনীতির শীর্ষে। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে ছাপ রেখে ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন এ বাঙালী। প্রায় পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনে নানা উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে গেলেও তিনি সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেই ছিলেন। যখন খুব অসুবিধায় পড়েছেন যেমন কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে নিজে দল করার চেষ্টা করেছেন। আবার ফিরেছেন কংগ্রেসের পতাকাতলে। সেই খারাপ সময় কাটাতে পেরেছেন কারণ তার চেনাজানা। এতটা গুরুত্ব ছিল তার সেজন্য কেউ তাকে আলাদা করতে পারেনি। বেশি দিন কেউ তাকে চেপে ধরে নামিয়ে রাখতে পারেনি। প্রণব মুখার্জীর জন্ম ১৯৩৫ সালের ১১ ডিসেম্বর। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার এক সাধারণ পরিবারে। তার বাবা ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে নেন। পরে পাঁচ দশকের রাজনীতির পথ পাড়ি দিয়ে ২০১২ সালে ভারতের ১৩তম রাষ্ট্রপতি হন। প্রধানমন্ত্রী পদের জন্যও আলোচনায় এসেছিলেন, তবে হতে পারেননি। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষে অবসরের পর আর সক্রিয় রাজনীতিতে জড়াননি প্রণব। সোমবার প্রণব মুখার্জীর মৃত্যুর পর ভারতের এক সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, বৈশ্বিক রাজনীতি সম্পর্কে জ্ঞান, মেধা, প্রজ্ঞা আর কৌশলের কারণে প্রণব মুখার্জী পরিণত হন একজন বড় মাপের শিক্ষকে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি কীভাবে পাল্টাচ্ছে, ভারত বা এশিয়ার জন্য তার তাৎপর্য প্রভাব কেমন হবে - এগুলো নিয়ে তার ছিল বিরাট দক্ষতা। উনি বিরাট একজন শিক্ষক। উনাকে না জিজ্ঞেস করে ইন্দিরা গান্ধী বা মনমোহন সিং কিছু করতেন না। এমনকি নরেন্দ্র মোদিও তার কাছে পরামর্শ নিয়েছেন। সুতরাং উনি বড় রাজনীতিক সেটা সবাই জানে। কিন্তু তিনি যে বড় মাপের শিক্ষক সেটা সবার জানা নেই। তার দীর্ঘকালের ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী বলেন, মূলত রাজনীতিক প্রণব মুখার্জী আলো ছড়াতে শুরু করেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে। সে সময় বাংলাদেশের পক্ষে ভারতীয় পার্লামেন্টে বেশ তৎপরতা দেখান প্রণব মুখার্জী। গৌতম লাহিড়ী আরও বলেন, প্রণব বাবুর জাতীয় রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধই বড় কারণ। ইন্দিরা গান্ধী তার মেধায় আকৃষ্ট হয়ে তাকে কংগ্রেসে ভেড়ান। এক সময় তাকে ইন্দিরার মানসপুত্র বলা হতো। অতি অল্প বয়সে ১৯৮২ সালে তাকে অর্থমন্ত্রী করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। এরপর পাঁচবার রাজ্যসভায় গিয়েছেন। লোকসভায় নেতৃত্ব দিয়েছেন একাধিকবার। নিজের বর্ণাঢ্য অভিজ্ঞতার আলোকে বই লিখেছেন অন্তত আটটি। সর্বশেষ ২০১৭ সালে প্রকাশিত বইয়ে বাংলাদেশের ২০০৮ সালের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পেছনেও তার ভূমিকার কথা উঠে আসে। বিবিসি, আনন্দবাজার ও পিটিআই অবলম্বনে।
×