ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিল আহমেদ মিরাজ

ছয় শ’ শিকারে অনন্য এ্যান্ডারসন

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০

ছয় শ’ শিকারে অনন্য এ্যান্ডারসন

সাউদাম্পটনে পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজ নির্ধারণী শেষ টেস্ট। প্রথম দিন থেকেই বৃষ্টি বাগড়া দেয়া ম্যাচের চতুর্থ দিনই পাকিস্তানকে ফলোঅনে পাঠিয়ে জয়ের আশা জাগিয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু শেষ দিনে ফের বৃষ্টি। চা-বিরতির আগেও যখন খেলা শুরু হচ্ছিল না তখন ম্যাচের ফল বাদ দিয়ে সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, তাহলে কি ৫৯৯ উইকেট নিয়ে এ মৌসুম শেষ করবেন এ্যান্ডারসন? সময় যত গড়িয়ে যাচ্ছিল এ্যান্ডারসন ও সতীর্থদের মন তত খারাপ হচ্ছিল। কিন্তু বিধাতা তার জন্য যে মঞ্চ প্রস্তুত রেখেছিলেন সেখানে তিনি রাজা হবেন-ই। হলোও তাই। বিকেল ৪ টা ১৫ মিনিটে বল মাঠে গড়াল। প্রথম ওভার করলেন জোফরা আর্চার। দ্বিতীয় ওভারেই আসলেন এ্যান্ডারসন। মাত্র ১৩ বলের অপেক্ষা। দিনের ১৪তম বলে এ্যান্ডারসন গড়লেন ইতিহাস। প্রথম পেসার হিসেবে ক্যারিয়ারের ১৫৬তম টেস্টে পেলেন ৬০০ উইকেট। তিন স্পিনার মুত্তিয়া মুরলিধরন, শেন ওয়ার্ন ও অনিল কুম্বলের পর চতুর্থ বোলার হিসেবে এমন মাইলফলক ছুঁলেন এ্যান্ডারসন। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আনন্দময় ল্যান্ডমার্কে পৌঁছাতে এ্যান্ডারসন তুলে নেন পাকিস্তান অধিনায়ক আজহার আলির উইকেট। ডানহাতি পেসারের লাফিয়ে ওঠা বলে ব্যাট সরাতে পারেননি আজহার (৩১)। স্লিপে থাকা ইংলিশ অধিনায়ক ক্যাচ ধরেই ছুটে যান এ্যান্ডারসনের কাছে, দৌড়ে আসেন সতীর্থরা। দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে ড্রেসিং রুমে দুই দলের সদস্যরাই দাঁড়িয়ে জিমিকে অভিবাদন জানান। ব্রেট লি, ওয়াসিম আকরাম, সৌরভ গাঙ্গুলী, গ্লেন ম্যাকগ্রাসহ বিশ্বের সাবেক সব গ্রেট এ্যান্ডারসনকে প্রশংসা ভাসিয়ে দিচ্ছেন। হবেই বা না কেন? এ্যান্ডারসনই টেস্ট ইতিহাসের প্রথম পেস বোলার যিনি গৌরবময় ৬০০ উইকেটের ল্যান্ডমার্কে পা রাখলেন। সবচেয়ে বেশি ৮০০ উইকেট লঙ্কান গ্রেট মুত্তিয়া মুরলিধরনের। পরের দুটি জায়গাও স্পিনারদের দখলে। লেগস্পিনার শেন ওয়ার্ন ৭০৮ ও অনিল কুম্বলের ৬১৯ উইকেট। এরপরই আছেন এ্যান্ডারসন। পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট তার। এ্যান্ডারসনের ৬০০ উইকেটের পর ৫৬৩ উইকেট নিয়ে পঞ্চম স্থানে আাছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা। ৫১৯ উইকেট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে সাবেক উইন্ডিজ পেসার ও বাংলাদেশ বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালসের পরই আছেন স্টুয়ার্ট ব্রড। এ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ারে বড় একটা সময় সঙ্গী হয়ে থাকা এই পেসারের নামের পাশে ৫১৪ উইকেট। ৪৩৯ উইকেট নিয়ে তার পেছনে সাবেক প্রোটিয়া পেসার ডেল স্টেইন। শুধু ৬০০ উইকেটই নয়, এ্যান্ডারসনের নামের পাশে আছে আরও রেকর্ড। ২০০৩ থেকে এ পর্যন্ত ১৫৬ টেস্টের ২৯১ ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ৩৩ হাজার ৭ শ’ ১৭টি বল করেছেন তিনি। ৬০০’র মধ্যে ‘ঘরের মাঠ’ ইংল্যান্ডে ২৫৬ উইকেট নিয়ে মুরলির (শ্রীলঙ্কায় ৩০৫) পরেই জিমির অবস্থান। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে আগের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ টেস্টে প্রথম ইনিংসে ২ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেটশূন্য, পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ১/৬৩ উইকেট ও ০/৩৪Ñবাই রোটেশনের দুয়ো তুলে ইংলিশ ম্যানেজমেন্ট থেকে জানানো হয়েছিল সাউদাম্পনে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে একাদশে থাকছেন না জেমস এ্যান্ডারসন! স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে অবসর নিতে যাচ্ছেন ৩৮ বছর বয়সী পেসার। কিন্তু হঠাৎই বাবার অসুস্থতায় বেন স্টোকস ছুটি নিলে সুযোগ পান জিমি। বৃষ্টিতে ড্র হওয়া ওই ম্যাচের একমাত্র ইনিংসে নেন ৩ উইকেট। একই ভেন্যুতে শেষ ম্যাচে তো টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসটাই বদলে দিলেন। প্রথম ইনিংসে ৫ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২; ম্যাচে মোট ৭ উইকেট নিয়ে বিশ্বের প্রথম পেসার হিসেবে ৬০০ উইকেটের ল্যান্ডমার্কে পা রাখলেন এ্যান্ডারসন। আভিজাত্যের টেস্ট অঙ্গনের সফলতম এ পেসার এখানেই থামতে চান না। খেলতে চান অন্তত আরও দেড় বছর। নামের পাশে জমা করতে চান ৭০০ উইকেট। ‘রুটের (টেস্ট অধিনায়ক) সঙ্গে আমার কিছু কথা হয়েছে, সে বলেছে আমাকে অস্ট্রেলিয়াতে এ্যাশেজেও পেতে চায়। আমি সেখানে না থাকার কোন কারণ দেখি না। আমি ফিটনেস নিয়ে সবসময় কঠোর পরিশ্রম করছি, আমার খেলা নিয়েও। হ্যাঁ এই গ্রীষ্মে আমি যতটা ভাল বোলিং করতে চেয়েছি, ততটা হয়ত পারিনি। তবে এই টেস্টে আমি নিজের ছন্দে ছিলাম। আমার মনে হয়, দলকে দেয়ার মতো আমার এখনও অনেক কিছু আছে। যতদিন এমন অনুভূতি কাজ করবে, আমি খেলে যাব। আমার মনে হয় না, ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার হিসেবে শেষ টেস্ট জিতে ফেলেছি। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, আমি ৭০০ উইকেটে যেতে পারব কি-না? কেন নয়?’ সাধারণত পেসারদের ক্যারিয়ার খুব বেশি দীর্ঘ হয় না। সেখানে ৩৮ বছর বয়সেও দাপুটে বোলিং করছেন। দুর্বার এ্যান্ডারসনের প্রশংসা করতে গিয়ে এমসিসির (মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব) প্রেসিডেন্ট ও লঙ্গান গ্রেট কুমার সাঙ্গাকারা বলেন, ‘জিমি এখনো যেভাবে তার ফিটনেস ধরে রেখেছেন তা অবিশ্বাস্য। তার এই অর্জন অসাধারণ। শুধু ৬০০ উইকেট পেয়েছে বলেই নয়, দলের প্রতি তার কমিটমেন্ট ও চেষ্টার জন্য প্রশংসা পেতে পারেন তিনি।’ প্রথম কোনও পেস বোলার হিসেবে টেস্টে ৬০০ উইকেট ক্লাবের সদস্য এ্যান্ডারসন যেভাবে নিজেকে মেলে ধরেছেন, তার প্রশংসা করে জিওফ বয়কট বলেন, ‘ইংলিশ কন্ডিশনে জিমি বিপজ্জনক বোলার। রাত ২টার সময়ও ঘুম ভাঙিয়ে ওর হাতে বল তুলে দেয়া হলে ও অফ স্টাম্প লক্ষ্য করে যে ডেলিভারিটা করবে, তা হঠাৎ লিফট করবে এবং বাঁক নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যাবে। তবে, বিলেতের বাইরে কিন্তু ততটা সফল নয়। তবু ৬০০ উইকেট ঝুলিতে, আরিমার্কেবল এ্যাচিভমেন্ট।’ এমন কীর্তি গড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো প্রশংসার বন্যা বয়ে যায় জিমিকে নিয়ে। অভিনন্দন জানাতে ভুল করেননি বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররা। এ তালিকায় আছেন টাইগার তারকা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমও। ইংলিশ পেসারকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইটারে মুশফিক লেখেন, ‘জিমি আধুনিক যুগের একজন গ্রেট ক্রিকেটার। তাকে অনেক অভিনন্দন, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ৬০০ উইকেট শিকারি পেসার।’
×