ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেষকৃত্য সম্পন্ন

প্রণব মুখার্জীর মৃত্যুতে আজ বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০

প্রণব মুখার্জীর মৃত্যুতে আজ বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাজধানী দিল্লীতে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর। দিল্লীর লোদী রোডে গান স্যালুটের মাধ্যমে শেষ বিদায় জানানো হয় দেশটির ১৩তম রাষ্ট্রপতিকে। এর মধ্য দিয়ে অবসান হলো পাঁচ দশক দিল্লীতে দাপিয়ে বেড়ানো এক বর্ণময় বাঙালী রাজনীতিক প্রণব মুখার্জী যুগের। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেন পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। পরিবারের অন্য সদস্যরাও পিপিই পরে শামিল হয়েছিলেন শেষকৃত্যে। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু প্রণব মুখার্জীর মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানাতে আজ বুধবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশের সকল সরকারী, আধাসরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল সরকারী ও বেসরকারী ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। দিল্লীর রাজাজি মার্গে তাঁর বাসভবনে রাখা হয়েছিল প্রণব মুখার্জীর মরদেহ। শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শাসক-বিরোধী সব দলের রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টরা। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় লোদী রোড মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। খবর এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, আনন্দ বাজার পত্রিকা ও দ্য হিন্দুর। সাবেক এই রাষ্ট্রপতির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ভারতের উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, লোকসভার স্পীকার ওম বিড়লা, চীফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সরকারী পদস্থ কর্মকর্তারা ছাড়াও সাধারণ জনগণের জন্যে এক ঘণ্টা সময় দেয়া হয়। এর আগে ভারত সরকার সাতদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে। ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্রণব মুখোপাধ্যায় স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের ভাষায় ছিলেন ‘আ ম্যান অব অল সিজনস’। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইটে বলেন, ‘ভারতরতœ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে ভারত আজ শোকগ্রস্ত’। ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রথম বাঙালী ॥ পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার মিরাটি গ্রামে ১৯৩৫ সালের ১১ ডিসেম্বর জন্ম নেয়া প্রণবের বাবা কমদা কিঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনও ছিল বর্ণিল। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেয়ায় কয়েকবার কারাবরণ করতে হয়েছিল এ কংগ্রেস নেতাকে। ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর প্রণব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে আইনে ডিগ্রী নেন। কিছুদিন কলেজে শিক্ষকতা এবং সাংবাদিকতা করলেও তার আগ্রহ ছিল মূলত রাজনীতিতে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর স্নেহধন্য বীরভূমের পল্টু ১৯৬৯ সালে সেই যে কংগ্রেসের প্রতিনিধি হয়ে রাজ্যসভায় গিয়েছিলেন; তারপর কয়েক দশক দল, সংসদ আর সরকারের নানা দায়িত্ব সামলাতেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে তাকে। ১৯৭৮ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত সর্বভারতীয় কংগ্রেসের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন প্রণব। ১৯৮৫ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কমিটির সভাপতি হন। ২০০০ সালে আগস্টে ফের প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব পান, এবার এ পদে থাকেন এক দশক। ১৯৭৮-১৯৮৬ এবং ১৯৯৭-২০১২ দুই মেয়াদে কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবেও তিনি দুই যুগের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন। প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রথমবার ভারতের অর্থমন্ত্রী হন ১৯৮২ সালে। সেসময় ভারতের রিজিওনাল রুরাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ফর এগ্রিকালচার এ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট গঠনে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ভারতের পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান, ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত বাণিজ্যমন্ত্রী, ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ২০০৪ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ফের ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন প্রণব। পরের মাসেই ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার মেয়াদ শুরু হয়। প্রণব ২০০৮ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণ পান। ২০১৯ সালে তাকে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারতরতেœ ভূষিত করা হয়। সালমান রহমানের শোক ॥ ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অকৃত্তিম সুহৃদ, ভারতের প্রথম বাঙালী রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জীর মৃত্যুতে আমি শোকাহত। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ এই দেশের যেকোন সঙ্কটকালীন সময়ে অকুণ্ঠচিত্তে তার প্রজ্ঞা ও দৃঢ়চেতা মনোভাব নিয়ে সমর্থন যুগিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষকে সহায়তা দেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তিনিই প্রথন জোরালোভাবে তুলেছিলেন। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী সমর্থকও ছিলেন এই বর্ষীয়ান বাঙালী রাজনীতিক।’ উপদেষ্টা বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যবর্গ শহীদ হলেও সৃষ্টিকর্তার অশেষ দয়ায় বেঁচে যান তার কন্যাদ্বয় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ওই তীব্র সঙ্কটকালীন মুহূর্তে দুই বোন যখন ভারতে নির্বাসনে ছিলেন, তখন সবসময়ই সহায়তা করেছেন প্রণব মুখার্জী। তার ওই অবদানও জাতি হিসেবে আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি। বাংলাদেশের প্রতি তার এই প্রগাঢ় মমত্ববোধের প্রতি সম্মান রেখেই তার মৃত্যুতে শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। তার মৃত্যুতে দুই দেশের জন্যই এক অপূরণীয় শূন্যস্থান সৃষ্টি হলো। আমি তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’ প্রণব মুখার্জীর মৃত্যু উপমহাদেশের রাজনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি- ঢাবি উপাচার্য ॥ প্রণব মুখার্জীর মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার এক শোকবার্তায় উপাচার্য বলেন, প্রণব মুখার্জী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন অন্যতম প্রজ্ঞাবান, বিচক্ষণ ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। বরেণ্য এই রাজনীতিবিদ ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি ছিল তার গভীর ভালবাসা। তিনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে নানাবিধ উপায়ে সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই বর্ষীয়ান নেতার মহাপ্রয়াণে উপমহাদেশের রাজনৈতিক জগতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো। উপমহাদেশের রাজনীতিতে অনবদ্য অবদানের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
×