ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্টারনেট সেবায় সমন্বয়হীনতা

প্রকাশিত: ২১:৩২, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০

ইন্টারনেট সেবায় সমন্বয়হীনতা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের প্রসার ঘটেছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি না থাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবেই চলছে এ খাত। সমন্বয়কারী সংস্থাগুলো একে অপরকে দায়ী করেই পার করছে সময়। ফলে সমন্বয়হীনতায় ইন্টারনেট সেবাদানকারী ব্যবসায়ীরাও গ্রাহককে নিজেদের ইচ্ছেমতো সংযোগ দিচ্ছে। এতে শহরজুড়ে বেড়েই চলছে তারের জঞ্জাল। আবার সমন্বয়হীনভাবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলো তারের জঞ্জাল পরিষ্কার করতে গিয়ে ভোগান্তিতে ফেলছে গ্রাহককে। কিন্তু মিলছে না কার্যকরী কোন সমাধান। সূত্র বলছে, গত ১০ বছরে রাজধানীতে প্রায় ২ হাজার ২০০ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাডার (আইএসপি) ব্যবসায়ীকে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার অনুমতি দিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। কিন্তু সেসব ব্যবসায়ীদের জন্য সংস্থাটির নেই কোন সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন। ফলে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় একাধিক আইএসপি ব্যবসায়ী গ্রাহককে ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছে ঝুলন্ত তারের (ওভারহেড ক্যাবল) মাধ্যমে। আইএসপি ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা নিজেরাও সুশৃঙ্খল একটি ব্যবস্থাপনা চান। তবে ওভারহেড তারের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় তারা এটি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এজন্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতাই বড় বাধা বলে মনে করছেন তারা। বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ৬টি ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) থাকলেও ৩টি প্রাইভেট এনটিটিএন সক্রিয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ এনটিটিএনের লাইসেন্স নিলেও তারা এই সেবার ক্ষেত্রে নিষ্ক্রীয় অবস্থায় রয়েছে। তবে বাহন লিমিটেড, ফাইবার এ্যাট হোম ও সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড নামের তিনটি অপারেটর রাজধানীসহ সারাদেশে ভূগর্ভে ব্যান্ডউইথ পরিবহনের কাজ করছে। তাদের মাধ্যমে ক্যাবল সংযোগ নিতে ২০১৪ সালে বিটিআরসি নির্দেশনা দিলেও আইএসপি ব্যবসায়ীরা সেটি মেনে গ্রাহককে সংযোগ দিতে পারছে না। এ বিষয়ে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক বলেন, ‘রাজধানীর অধিকাংশ স্থানে এনটিটিএনের (মাটির নিচে) লাইন রয়েছে ফাইবার ক্যাবল টানার জন্য। কিন্তু সমস্যা হলো এনটিটিএন থেকে সংযোগ নেয়ার পর যখন বাসাবাড়িতে সংযোগ দিতে হয় তখন কিন্তু ঝুলন্ত তারের সংযোগ ছাড়া বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেই। আবার কোথাও কোথাও এনটিটিএনের সব সুবিধা থাকার পরও আইএসপি ব্যবসায়ীরা সেটি নেয় না, কারণ এতে যে অর্থ খরচ হবে তাতে ঝুলন্ত তারে সংযোগ নিলে তার চেয়ে অর্ধেক খরচ কমে যাবে। তাই অধিকাংশ আইএসপি বর্তমানে ঝুলন্ত ক্যাবল টানছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে এটিরও সমাধান রয়েছে। এজন্য অবশ্যই প্রতিটি বাড়িতে মাটির নিচ দিয়ে ক্যাবল সংযোগের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং এনটিটিএনে যে খরচ হবে সেটি সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করতে হবে। যাতে করে গ্রাহকও সেটি মানতে বাধ্য হয় এবং আইএসপিগুলোও যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আর এ জন্য অবশ্যই বিটিআরটিকে ভূমিকা রাখতে হবে।’ দেশের প্রথম এনটিটিএনের স্বত্ব¡াধিকারী ‘ফাইবার এ্যাট হোমে’র চীফ টেকনোলোজি অফিসার (সিটিও) সুমন আহমেদ বলেন, ‘দেশে বর্তমানে তিনটি প্রতিষ্ঠান এনটিটিএনের কাজের অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে বাহন পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। কিন্তু সামিট এবং আমরা যদিও কার্যক্রম চালাচ্ছি বহু বছর ধরে। বর্তমানে শহরের যেকোন জায়গায় কেউ যদি আমাদের থেকে সংযোগ চায় তাহলে বলব এটা দিতে আমরা সক্ষম। কিন্তু কেউ যদি কোন বাসায় সংযোগ চায় তাহলে বলব ‘না’। কারণ বাসাবাড়ি পর্যন্ত সংযোগ দেয়ার মতো সক্ষমতা আমাদের তৈরি হয়নি।’
×