ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পতিত জমিতে আউশ ধানের বাম্পার ফলন

প্রকাশিত: ২১:১০, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০

পতিত জমিতে আউশ ধানের বাম্পার ফলন

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ১ সেপ্টেম্বর ॥ সরকারীভাবে প্রণোদনা দেয়া আউশ ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। বন্যায় অধিকাংশ আউশ ধান নষ্ট হলেও বন্যামুক্ত এলাকায় আউশ ধানের ফলন ভাল হয়েছে। অসময়ে পতিত জমি থেকে পাকা ধান ঘরে তুলতে পেরে খুশী কৃষকরা। এদিকে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমন ধান রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন টাঙ্গাইলে কৃষকরা। যেসব এলাকার বন্যার পানি নেমে গেছে, সেসব এলাকার কৃষকরা পাহাড়ী অঞ্চল থেকে ধানের চারা এনে নিজ নিজ জমিতে রোপণ করছেন। কৃষি বিভাগ বলছে, বন্যার ক্ষতি পূরণে কৃষকদের সরকারীভাবে বিনামূল্যে চারা, সারসহ প্রয়োজনীয় প্রণোদনা প্রদান করা হবে। জানা যায়, কয়েক বছর আগে টাঙ্গাইলে আউশ ধানের ব্যাপক চাষ হতো। বিভিন্ন কারণে আউশ ধানের আবাদ কমতে থাকে। কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকার আউশ ধানের সুদিন আবারও ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নানামুখী উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে কৃষকদের উৎসাহ বাড়াতে আমন ও বোরো ধানের মধ্যবর্তী সময়ে জমি ফাঁকা ফেলে না রেখে আউশ ধানের চাষ করতে প্রণোদনা হিসেবে সরকারীভাবে বিনামূল্যে ধানের বীজ ও সার দেয়া হয়েছিল। আউশ ধানের বীজ রোপণের মাত্র ১১০ দিনের মধ্যে ধান ঘরে তোলা যায়। সেচ ও বালাইনাশক ছাড়াই বৃষ্টির পানিতে এবং সামান্য পরিচর্যা আর অল্প সার ব্যবহার করে বোরো ধানের সমপরিমাণ আউশ উৎপাদন করে বাড়তি আয়ের সুযোগ পেয়েছেন কৃষকরা। এতে অসময়ে পতিত জমি থেকে বাড়তি ফসল ধান পেয়ে কৃষকদের মুখে খুশীর ঝিলিক। বর্তমানে জমি থেকে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেছেন কৃষকরা। আউশ ধান কাটা শেষ হলেই একই জমিতে কৃষকরা বিভিন্ন জাতের আমন ও সুগন্ধী জাতের ধানের চাষ করবেন। টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আহসানুল বাশার জানান, জেলার ১২টি উপজেলায় কৃষকরা ২ হাজার ২৯ হেক্টর জমিতে সরকারী প্রণোদনায় পতিত জমিতে আউশ ধানের চাষ করেছিলেন। কিন্তু বন্যায় অধিকাংশ জমির আউশ ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। তবে জেলার বন্যামুক্ত এলাকার কৃষকরা ৯২৩ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছেন। ৯২৩ হেক্টর জমি থেকে প্রায় তিন হাজার টন চাল পাওয়া যাবে। কৃষি বিভাগ বলছে আগামীতে আউশ ধানের জমির পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে। কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আবারও আউশ ধানের সুদিন ফিরে আসবে। জানা যায়, টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলার দুই দফা বন্যায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে পচে নষ্ট হয়েছে কৃষকের স্বপ্ন। অনেক এলাকায় বন্যায় ডুবে যাওয়া ফসলি জমি জেগে উঠতে শুরু করেছে। সেসব জমিতে আমন ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ধানের চারা রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন কৃষকরা। বন্যামুক্ত পাহাড়ী এলাকা থেকে কৃষকরা উচ্চ মূল্যে ধানের চারা এনে জমিতে রোপণ করছেন। কৃষকদের আশা আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে এবং নতুন করে বন্যার পানি আর না আসে, তবে তারা তাদের ক্ষতির কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন। কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার ১২টি উপজেলায় ৮৮ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৯ হাজার ৬২৪ হেক্টর জমিতে আমন চারা ইতোমধ্যে রোপণ করা হয়েছে। বাকি জমিগুলোতে পানি নেমে যাওয়ার পর এবং আউশ ধান কাটা মাড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমন ধান লাগানো হবে। টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আহ্সানুল বাসার আরও জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনামূল্যে ধানের চারা, সারসহ প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেয়া হবে। গত বোরো মৌসুমে ধানের ভাল দাম পেয়েছেন কৃষকরা। চলতি আমন মৌসুমেও কৃষকরা যদি ধানের দাম ভাল পায় তবেই লাভবান হবেন কৃষকরা।
×