ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ

প্রকাশিত: ২১:১০, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০

কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী, ১ সেপ্টেম্বর ॥ ঘূর্ণিঝড় আমফানের পরে অমাবস্যার জোতে কয়েক দিনের অস্বাভাবিক জোয়ারের তা-বে ল-ভ- হয়ে যাওয়া কুয়াকাটা সৈকতের জরুরী প্রটেকশনের কাজ শুরু হচ্ছে। সোমবার থেকে এ কাজ শুরু হচ্ছে। পূর্বদিকে ট্যুরিজম পার্ক থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত জিও এবং সিনটেথিক বালু-সিমেন্ট ভর্তি ব্যাগ ফেলে মসজিদ-মন্দির, পার্ক এরিয়া এবং জিরো পয়েন্টের সড়ক রক্ষায় এমন উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু বাকি এলাকা অরক্ষিত থেকে যাচ্ছে। এছাড়া গোটা সৈকতের ভাঙ্গন রোধে স্থায়ীভাবে প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে তা নিশ্চিত করতে পারেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান জানান, ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী প্রতিরক্ষার জন্য সৈকত এলাকার সমীক্ষা শেষে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। দ্রুত একটি ডিপিপি তৈরি করে ভাঙ্গন রোধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন আপাতত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় জরুরী প্রটেকশনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আমফানের তা-বে বিধ্বস্ত হওয়া কুয়াকাটা সৈকতে অমাবস্যার জোতে অস্বাভাবিক জোয়ারের তা-বের পরে শূন্য পয়েন্টের দুইদিকের ৩০ ফুট প্রস্থ ভেসে গেছে। বালুর স্তর গিলে খেয়েছে সাগর। এখন দীর্ঘ সৈকতে জোয়ারের সময় থাকে না ওয়াকিং জোন। গেল বছর ভাঙ্গন রোধে জিও টিউব দিয়ে জরুরী প্রতিরোধের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল, যা এবারে ভেসে গেছে। ২০০৪ সাল থেকে বহুবার সমীক্ষা চালিয়ে সৈকত রক্ষায় প্রতিরক্ষা প্রকল্প হাতে নেয়া হয় কমপক্ষে তিন দফা। কিন্তু তা আর শেষ পর্যায় গিয়ে আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে ভাঙ্গনের তীব্রতায় ক্ষুদে দোকানি, বিচ এলাকার ব্যবসায়ীসহ পর্যটকরা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪৮ নম্বর পোল্ডারের ১৭ দশমিক ২৫০তম কিলোমিটার থেকে ৩৭ দশমিক ২৫০তম কিমি পর্যন্ত বেড়িবাঁধের বাইরের দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার মূলত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এলাকা নির্ধারণ করা রয়েছে। এর মধ্যে গঙ্গামিত লেকের ২৪ দশমিক ২৫০তম কিমি থেকে আন্ধারমানিক নদী মোহনার ৩৪ দশমিক ৭৫০তম কিমি পর্যন্ত সাড়ে দশ কিলোমিটার সৈকত সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। যেখানে মূলত পর্যটকরা বিচরণ করেন। এই সাড়ে দশ কিলোমিটারের মধ্যে ২৭ দশমিক ৪০০ কিলোমিটার থেকে ৩২ দশমিক ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পাঁচ দশমিক এক কিলোমিটার সাগরের তীব্র ভাঙ্গন এলাকা। তীব্র ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকার শূন্যপয়েন্টের পশ্চিমে পাঁচ শ’ মিটার এবং পূবে দুই কিমি মোট আড়াই কিমি গ্রীন সি ওয়াল ও জিও টিউবের ব্যবহার মাধ্যমে ২০১৮ সালে সৈকত এলাকা রক্ষার সিদ্ধান্ত হলেও পরে তা বাতিল হয়ে যায়। তখন ২১২ কেটি ৮২ লাখ টাকার ওই প্রকল্প ব্যয়-বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল। ফলে অরক্ষিত হয়ে পরে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। ২০১৫ সালে এই প্রকল্প প্রণয়নের কাজ শুরু হলেও কয়েক দফা সমীক্ষা শেষে শেষ পর্যায় বাতিল হয়ে যায়। বর্তমানে সৈকতে ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচ কিলোমিটার অংশের মধ্যে আড়াই কিলোমিটার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যা রক্ষায় গেল বছর জরুরী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে প্রায় দুই কিমি অংশে। তখন জিও টেক্সটাইল ব্যাগ দেয়ার পাশাপাশি জিও টিউব দেয়া হয়। কিন্তু এখন টিউব ও ব্যাগের বেহাল দশা। ঢেউয়ের তীব্রতায় ল-ভ- হয়ে গেছে। বেলাভূমে চলছে তীব্র ভাঙ্গন। ঢেউয়ের ঝাপটা বাধাগ্রস্ত হওয়ার কিছুই নেই। শূন্যপয়েন্টর পশ্চিম দিকে জেলে পল্লী এলাকা ভেসে যাচ্ছে প্রত্যেকটি জোয়ারে। সৈকতের পরিধি খাটো হয়ে যাচ্ছে। অন্তত অস্থায়ী ৫০টি দোকান জোয়ারের ঝাপটায় অমাবস্যার জোতে ভেসে গেছে। আচার স্টেশনারি দোকানি মোঃ শামীম জানান, আমফান থেকে শুরু করে পূর্ণিমা অমাবস্যার জোতে অস্বাভাবিক জোয়ারে তাদের ৫০/৬০ জনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গেল অমাবস্যায় কুয়াকাটা সৈকতের ক্ষতির দৃশ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্তি প্রধান প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ এর নেতৃত্বে পাউবোর একটি প্রতিনিধিদল পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া অতি সম্প্রতি পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব) জাহিদ ফারুক এমপি কুয়াকাটা সৈকত পরিদর্শন করেছেন। তিনিও ভাঙ্গনরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। কলাপাড়ার ইএনও ও বিচ ম্যাজেমেন্ট কমিটির সদস্য আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, কুয়াকাটা সৈকতের ভাঙ্গনরোধে জরুরী উদ্যোগ নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মহিব্বুর রহমান জানান, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় জরুরী এবং স্থায়ী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×