ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

বাগেরহাটে চিংড়ি ঘের ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

প্রকাশিত: ২১:০১, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০

বাগেরহাটে চিংড়ি ঘের ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটের চিংড়ি চাষীরা আক্ষরিক অর্থে দিশেহারা। সাদাসোনা খ্যাত এ জেলার অধিকাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে মৎস্য চাষে জড়িত। অথচ একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাদের ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। ভাইরাসের মহামারী ও তাপদাহ ছাড়াও গত ৯ মাসে অতিবৃষ্টি, অস্বাভাবিক জোয়ার ও আমফানে কমপক্ষে তিনবার তাদের মৎস্য ঘের ডুবে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এরপরেও মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতো করোনা প্রকোপে দরপতন। বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষী সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন’র ভাষায়, ‘ঘূর্ণিঝড় আমফানের চেয়ে এবারের অতিবৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে ৫ হাজারের বেশি ঘের ভেসে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আমফানের পর মাছ বিক্রির সময়ে আবার সব ভেসে গেল। আমাদের মেরুদ- ভেঙ্গে গেছে, এখন কিভাবে চাষীরা ঋণ শোধ হবে, কি ভাবে বাঁচব, আমরা কি করব বুঝে উঠতে পারছি না।’ বহরবুনিয়া ইউনিয়নের ঘষিয়াখালী গ্রামের নুরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, মাসুদ শিকদারসহ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা আক্ষেপ করে বলেন, অতি জোয়ার ও লাগাতার বৃষ্টিতে আমাদের বাড়িঘর, ঘের, পুকুর, রাস্তা, গোয়ালঘর, ফসলের ক্ষেত সবকিছু ডুবে গেল। কিন্তু এবারই প্রথম আগাম কোন সতর্কতামূলক বার্তা আমরা পেলাম না। জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, সম্প্রতি অতিরিক্ত বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে এ জেলায় ৬ হাজার ৮৫৩টি মৎস্য ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। এর কয়েক মাস আগে ‘বুলবুল’ ও ‘আমফানে’ অনুরূপ ক্ষতি হয়। বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক জানান, বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় তিন দফায় ১৯ হাজার ৩০১টি মৎস্য ঘের ডুবে চাষীদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাগেরহাট জেলায় ৬৮ হাজার ১৬৫ একর জমিতে ৭৬ হাজার ৭৩০টি মৎস্য ঘের রয়েছে। আর চিংড়ি চাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে ৬৫ হাজার ৮০৪ পরিবার সম্পৃক্ত। পরোক্ষভাবে জড়িত কমপক্ষে তিন লাখ মানুষ। অনুরূপ অতিবৃষ্টি, অস্বাভাবিক জোয়ার ও জলাবদ্ধতায় অধিকাংশ সবজি ক্ষেত, পান বরজ ও রোপা আমন ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। পচে গেছে শসা, করল্লা, উচ্ছে, পুঁইশাক, ঢেঁড়স, চাল কুমড়া, জিংগা, চিচিংগা, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, ডাঁটা ও লাউ, পান গাছের গোড়া। বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এবার জেলায় ৫২ হাজার ৩০৯ হেক্টর জমিতে আউশ, রোপা আমন ধান, বিভিন্ন ধরনের সবজি, পান, আখ ও মরিচ চাষ হয়েছিল।
×