ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মহত্যা ও বিষণ্ণতা

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ১ সেপ্টেম্বর ২০২০

আত্মহত্যা ও বিষণ্ণতা

মরিতে চাহিনা আমি এই সুন্দর ভুবন ছেড়ে মানবের মাঝে আমি বাঁচতে চাই, কবিগুরুর এই বাক্য উপেক্ষা করে অনেকে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়। বাংলাদেশে আনাচে-কানাচে প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে আত্মহত্যা, কেউ বিষ খেয়ে, কেউ ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে, কেউ গলায় ফাঁস দিয়ে আবার কেউ নীরবে সূক্ষ্মভাবে জীবন শেষ করে দিচ্ছে। এ সবের পেছনে রয়েছে বিষণœতা নামক ব্যাধি। মন খারাপের কারণে কোন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়াকে বিষণ্ণতা বোঝায়। বিষণ্ণতার রোগীগুলো ফকির, কবিরাজ, ওঝা ও বিভিন্ন লোকের দ্বারা বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ৫-৯% মহিলা কোন না কোনভাবে বিষণœতা নামক রোগে ভুগছেন। এই বিরাট অংশ রোগী এই ডাক্তার, সেই ডাক্তার, এই পরীক্ষা, ঐ পরীক্ষা করে শেষে কোন রোগ ধরতে না পেরে ধীরে ধীরে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়। কী কী লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনার পাশের মহিলাটি বিষণœতায় ভুগছেন ১। শারীরিক লক্ষণ : মাথা জ্বালাপোড়া করা, শরীরের বিভিন্ন অংশে জ্বলে। কখনও কখনও পুরো শরীর জ্বালা পোড়া করে। ২। মাথা দিয়ে, নাক দিয়ে, কান দিয়ে গরমভাব ওঠে, কেউ কেউ বলে ভাত সিদ্ধ করলে যে রকম ভাপ ওঠে ঠিক সেই রকম কান দিয়ে নাক দিয়ে বের হয় এবং বার বার তেলপানি দেয়ালাগে মাথা ঠা-া করার জন্য। ৩। কেউ কেউ মাথার চুল মাঝখানে ফেলে দিয়ে বিভিন্ন গাছের পাতা পিষে মাথায় দিয়ে রাখে মাথা ঠা-া রাখার জন্য। ৪। বেশিরভাগ রোগীর ঘুমের সমস্যা হয়, কারও কারও একদম ঘুম হয় না আজানের অনেক আগেই ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং সকাল বেলাটা তুলনামূলকভাবে বেশি খারাপ লাগে। ৫। যদি কোন বয়স্ক মহিলা দুঃখের কথা বলতে গেলেই প্রায় কেঁদে ফেলে তখন কিন্তু বিষণœতাই প্রথম সন্দেহ হতে পারে। ৬। মুখের কথা শুনে আপনি কিছুটা আন্দাজ করতে পারবেন যেমন : এই সমস্ত রোগী খুব কম কথা বলে এবং খুব আস্তে আস্তে কথা বলে। একটা প্রশ্ন করলে অনেক সময় পর উত্তর দেয়, মাঝে মাঝে কোন কথাই বলতে চায় না। কেউ জিজ্ঞেস না করলে কথা বলতে চায় না। তারপর ধীরে ধীরে এমন একটা অবস্থায় চলে যায় যে একদম কথা বলে না যাকে আমরা মিউট বলি। ৭। মন খারাপ থাকা, এটাই আসল লক্ষণ : এই মন খারাপের প্রকাশ বিভিন্নভাবে হতে পারে, বেশিরভাগ রোগী নিজের মনের দুঃখ ভাব সরাসরি বলতে চায় না তারা সাধারণত বেশিরভাগ সময় বিরক্ত ভাব থাকে, অন্যের কথা সহ্য করতে পারে না, কথা বললে রেগে যায়, বেশিরভাগ সময় মনমরা ভাব থাকে, কারও সঙ্গে মিশতে চায় না, কাছে ছোট ছোট বাচ্চা চেঁচামেচি করলে বিরক্ত হয় টেলিভিশন দেখতে চায় না অথচ আগে নিয়মিত টেলিভিশন দেখত এবং সবার সঙ্গে মিশত এখন কিছুই ভাল লাগে না। ছোটখাটো ব্যাপার নিয়েই কেঁদে ফেলে এবং অতীতের দুঃখের ঘটনাগুলো বার বার বলতে চায়। এই সবই কিন্তু মন খারাপের লক্ষণ। ৮। বাচ্চা ডেলিভারির পর বিষণœতা নামক রোগটির ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ সময় বেশিরভাগ মায়ের অভিযোগ থাকে শরীর বেশি দুর্বল লাগে, মন বিরক্ত থাকে, ঘুম হয় না আত্মীয়স্বজনরা বলে ও যেন ইদানীং বেশি খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে এবং ভয় ও দুশ্চিন্তা লাগে। অনেক গ্রামাঞ্চলে এই সমস্যাগুলো সূত্রিকা বলে কবিরাজরা চিকিৎসা করে অথচ এই নারীরা কিন্তু বিষণœতা নামক রোগে ভুগছে। ৯। এই সমস্ত রোগীর আনন্দ ফুর্তি, সাজগোজ, হাসিঠাট্টা, গল্প করা ধীরে ধীরে সকল আনন্দদায়ক ও স্বাভাবিক কাজ-কর্মে লোপ পেতে থাকে। ১০। খাওয়ার প্রতি অনীহা থাকে যে খেয়ে কী লাভ হবে, বেঁচে থেকে কী লাভ হবে? ১১। কেউ কেউ বসার সময় গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে জড় বস্তুর মতো করে বসে থাকে। ১২। এমনও দেখা গেছে বলে যে, ডাক্তার আমার নাড়িভুঁড়ি পচে গেছে। আমি হয়ত বড় ধরনের পাপ করেছি আল্লাহ আমাকে পাপের শাস্তি দিচ্ছে। ১৩। অনেক বিষণœ রোগীর দেখা যায়, কথা বলার মাঝখানে দীর্ঘশ্বাস ফেলে এটাও একটা লক্ষণ। ১৪। শরীরের ওজন কমতে থাকে আবার কোন কোন ক্ষেত্রে বাড়তেও পারে। ১৫। কেউ কেউ হাজির হন মাথা ব্যথা ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যথা নিয়ে। কেন চিকিৎসা দরকার : কারণ ১। ১০-১৭% রোগী আত্মহত্যা করতে পারে। ২। ৫০% রোগী কোন না কোনভাবে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ৩। বিষণœতা দূর করার জন অনেক রোগী নেশায় আসক্ত হতে পারে। ৪। এরা কর্মক্ষেত্রে আগ্রহ, উৎসাহ ও উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলে। ৫। এদের সেক্সচুয়াল জীবনে অশান্তি বিরাজ করে। ৬। এসব রোগী পরিবারের, সমাজের ও জাতির বোঝা হয়ে যেতে পারে যদি সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না করা হয়। চিকিৎসা ১। সামাজিক কুসংস্কার যেমন আলগাদোষ, জিন-ভূতের ব্যাপার পানিপড়া তেলপড়া ইত্যাদি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ২। সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা করা ও নিয়মিত ফলোআপে আসা। ডাঃ মোঃ দেলোয়ার হোসেন মানসিক স্বাস্থ্য ফোন- ০১৮১৭০২৮২৭৭
×