ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মেঘ আর জলরাশির অপরূপ সৌন্দর্য, বাড়ছে পর্যটক

প্রকাশিত: ২৩:০১, ১ সেপ্টেম্বর ২০২০

মেঘ আর জলরাশির অপরূপ সৌন্দর্য, বাড়ছে পর্যটক

মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ ॥ কিশোরগঞ্জের ভাটি এলাকায় পর্যটনের অপার সম্ভাবনার হাতছানি। হাওড় অধ্যুষিত উপজেলা ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম এখন পর্যটকদের তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ইটনা থেকে মিঠামইন হয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলা পর্যন্ত হাওড়ের বিশাল জলরাশির বুকচিরে নির্মিত ৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য উঁচু পাকা সড়ক হয়ে উঠেছে সৌন্দর্যের দুর্নিবার আকর্ষণ। তিন উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের জন্য তৈরি করা নান্দনিক এই রাস্তাটি দেখতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন সৌন্দর্য আর ভ্রমণপিপাসুরা। হাজারো পর্যটকের পদচারণায় এখন মুখরিত হাওড়ের একসময়ের অবহেলিত আর প্রত্যন্ত এই জনপদ। বাংলাদেশের কোথাও হাওড়ের মাঝখানে এত দীর্ঘ সড়ক নেই। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের স্বপ্নের অলওয়েদার সড়কটি দেখতে ভিড় করছেন। রাস্তার দু’পাশে থৈ থৈ পানি, আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। মেঘ আর জলের এই মনোরম মিতালির সামনে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকা। সড়কের পাশে বসে বুকভরে নির্মল বাতাস উপভোগ আর হাওড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ক্ষণিকের জন্য পর্যটকদের হারিয়ে যায় মন। দিগন্ত বিস্তৃত এ সড়ককে ঘিরে দুঃখ ঘুচেছে হাওড়বাসীর। বর্ষায় কর্মহীন অনেক মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। এ জন্য হাওড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা হাজারো পর্যটক আর এলাকাবাসী সরকারের কাছে অপার এ লীলাভূমিকে দ্রুত পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণার জোর দাবি জানিয়েছেন। করোনাভাইরাসের সময়েও সৌন্দর্য, বিনোদন আর প্রশান্তির এক অনন্য ঠিকানা হয়ে উঠেছে হাওড়ের এ সড়কটি। কেবল হাওড়ের অলওয়েদার সড়কই নয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাড়ির পশ্চিমে তিন শতাধিক একর জায়গা নিয়ে মিনি ক্যান্টনমেন্টের প্রস্তাবিত নির্মাণাধীন জায়গার সৌন্দর্য উপভোগ করতেও অনেক ভিআইপিরা আসছেন মিঠামইনে। সচিব, যুগ্মসচিব থেকে শুরু করে বিচার বিভাগসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ কেউ না কেউ প্রতি সপ্তাহে আসছেন। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। এরকম পরিস্থিতিতে ভিআইপিদের প্রটোকল দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সরকারের ৫টি মন্ত্রণালয়ের বর্তমান ও সাবেক সচিব, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানসহ উর্ধতন কর্মকর্তাগণ দৃষ্টিনন্দন সড়কসহ হাওড় এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। এ সময় তারা নান্দনিক এ সড়ক নির্মাণের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন জানিয়ে হাওড় এলাকাকে পর্যটন হিসেবে ঘোষণার সম্ভাব্যতা যাচাই করেছেন। এদিকে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাস্তার মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে শত শত ট্রলার মোটরসাইকেল নিয়ে পর্যটক ও পিকনিক পার্টির লোকজন হাওড়ে ভ্রমণে আসেন। এতে করে প্রত্যেহ হাওড়ের কোন না কোন স্থানে ঘটছে নৌ-দুর্ঘটনা। পানিতে-দুর্ঘটনায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন মারাও গেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন থেকে নানামুখী তৎপরতা চালানো হচ্ছে। হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সড়কের সৌন্দর্য রক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থে প্রশাসন রাস্তার পাশে নৌ-চলাচল ও মোটরবাইক নিয়ে আসায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পর্যটকদের ট্রলার যেন মিঠামইন বাজার ঘাটে রেখে রাস্তায় যেতে। কোন মোটরবাইক নিয়ে যাওয়া যাবে না। এ আদেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিঠামইন বাজারের লঞ্চঘাটে স্পিডবোট, ট্রলার, ইঞ্জিনচালিত নৌকা আর লঞ্চের বহর লেগেই থাকে। সেখান থেকে পর্যটকরা হেঁটে অলওয়েদার সড়ক ও রাষ্ট্রপতির বাড়ি পরিদর্শন করছেন। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড় লেগেই রয়েছে সেখানে। প্রশাসনিকভাবে রাস্তায় পর্যটকদের মোটরবাইক ও সড়কের পাশে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় চলাচল করার অনুমতি রয়েছে। তিন থানার পুলিশের নিরাপত্তায় রয়েছে অলওয়েদার সড়ক পর্যটন কেন্দ্র। জানা গেছে, জেলার হাওড়াঞ্চল ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগের জন্য ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সালের জুন মেয়াদে অলওয়েদার সড়কটি নির্মিত হয়েছে। এ রাস্তাটি স্থাপিত হওয়ায় এসব এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উদ্ভূত উন্নয়ন হয়েছে। ৮৭৪ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কে বহু মানুষ খুঁজে পেয়েছেন কর্মসংস্থান। নিকলী-ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক নির্মাণের ফলে হাজারো মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাভবান হয়েছেন এসব উপজেলার মানুষ। হাওড়ের বুকচিরে নির্মিত দীর্ঘ নান্দনিক সড়ক ও নিকলীর বেড়িবাঁধ দেখতে হাজারো মানুষ ভিড় করেন। ফলে এলাকায় ক্ষুদ্র দোকানি, রেঁস্তরা মালিক, নৌকার মাঝি, নসিমন-করিমন-লেগুনা-অটোরিক্সা-মিশুকের চালক মিলিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য মানুষের। বছরে ৬ মাস যে হাওড়বাসী অলস বসে থাকত এখন তারা পর্যটকদের সেবায় মহাব্যস্ত। ইটনা থেকে মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের সড়ক এবং নিকলীর বেড়িবাঁধে যেতে হয় পানিপথ পাড়ি দিয়ে। ফলে মাঝিরা খুঁজে পেয়েছেন আয়ের উৎস। সবাই ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক দেখতে আসছেন। একটিমাত্র রাস্তা কিভাবে একটি জনপদের অর্থনৈতিক অবস্থা বদলে দিচ্ছে তা বিস্ময়কর। বেড়িবাঁধ আর দিগন্তবিস্তৃৃত জলরাশি, নয়নাভিরাম সড়ক ও হাওড়ের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকদের ঢল নামে সেখানে।
×