ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সক্রিয় মুন্না-মাহাদ গ্রুপ ৩ রোহিঙ্গা অপহরণ আহত ১৫

থমথমে রোহিঙ্গা শিবির

প্রকাশিত: ২১:৩২, ১ সেপ্টেম্বর ২০২০

থমথমে রোহিঙ্গা শিবির

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পুরনো ও নতুন রোহিঙ্গাদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ যেন থামছেই না। দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের সংঘর্ষে ১৫ রোহিঙ্গা আহত হয়েছে। তাদের ক্যাম্পভিত্তিক এনজিওর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গুলিবিদ্ধ একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় পাঠানো হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রবিবার দুই দফা সংঘর্ষের ঘটনায় অপহরণের শিকার হয়েছে ৩ রোহিঙ্গা। এর আগে বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার একই ক্যাম্পে থেমে থেমে গুলি বিনিময় করেছে সন্ত্রাসী দুই গ্রুপের রোহিঙ্গা ক্যাডাররা। রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুতুপালং ২নং পূর্ব-পশ্চিম ক্যাম্পে ডাকাত ছৈয়দের বাড়ির পাশে ফের গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। কুতুপালং ক্যাম্পে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তবে ক্যাম্পজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করায় পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সোমবার ভোরে গুলির শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্প ও ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী গ্রামে। সূত্র জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে ক্যাম্পজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ ও আর্মড পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিরজ্জামান চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিয়ে গত দু’দিন ধরে থেমে থেমে সংঘর্ষ হচ্ছিল। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। অনুসন্ধান চলছে। তবে বর্তমানে ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানিয়েছেন ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক পুলিশ সুপার মোঃ আতিকুল ইসলাম। তিনি জানান, কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মুন্না গ্রুপের সঙ্গে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইসলাম মাহাদ গ্রুপের মধ্যে ইয়াবা পাচার ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এরই জের ধরে শনিবার ফাঁকা গুলিবর্ষণের মাধ্যমে এটি প্রকাশ্যে রূপ নেয়। রবিবারও থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়। এ সময় উভয়পক্ষের ২০টিরও বেশি ঝুঁপড়ি ঘর এবং কয়েকটি ওয়াটার সাপ্লাইয়ের ট্যাঙ্ক ভাংচুর করা হয়। খবর পেয়ে এপিবিএনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে দুই গ্রুপের সদস্যরা পালিয়ে যায়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সংঘর্ষে অংশ নেয়া রোহিঙ্গাদের ধরার চেষ্টা চলছে। দা ও চুরির আঘাতে আহতরা হচ্ছে- রহমত উল্লাহ, সাইফুল্লাহ, নুর মোহাম্মদ, মোঃ রফিক, মোঃ ইদ্রিস, মোঃ অলিউল্লোহ, মোঃ ইলিয়াছ, এহছান উল্লাহ, এনায়েত উল্লাহ ও আরফাত হোসেন। কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা নুর বশর জানান, দীর্ঘদিন ধরে রেজিস্ট্রার্ড ও আনরেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের দুই গ্রুপের মধ্যে চাঁদাবাজি, অপহরণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত বুধবার থেকে দফায় দফায় গুলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে আসছিল। সর্বশেষ রবিবার আবারও ঘটনা ঘটে লম্বাশিয়া মাস্টার মুন্না এবং হাফেজ জাবের ও সাইফু গ্রুপের মধ্যে। এতে মুন্না গ্রুপের ৫ জন আহত হয়। এছাড়া ৩ জন অপহরণ হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। তাৎক্ষণিক তাদের নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি। আহতদের কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে শনিবার সংঘর্ষের ঘটনায় নারিসহ ৭ জন আহত হয়েছে। ২ মহিলাকে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নুর আলম নামে গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গাকে প্রথমে কক্সবাজার পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। সে কুতুপালং টু-ইস্ট ক্যাম্পের আহমদ হোসেনের পুত্র। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। সচেতন মহল বলেন, রোহিঙ্গাদের তো প্রাণে বাঁচতে পর্যায়ক্রমে এদেশে শুধু আশ্রয় দেয়া হয়েছে। ২০১৭ ও ১৮ সালে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার ঢল ভারি হওয়ায় মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের। রোহিঙ্গারা ত্রাণ পেয়ে আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করবে-এটাই নিয়ম। দিব্যি দোকানপাট খোলে ব্যবসা করে হাজার হাজার টাকা কামাতে এবং অস্ত্রের মহড়ার জন্য তাদের আশ্রয় দেয়নি সরকার। কিছু সংখ্যক এনজিওর ইন্ধনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। ওয়াকিবহাল মহল বলেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে ওই অস্ত্রগুলো তুলে দেয় কারা? কোথা থেকে সরবরাহ করে এসব অস্ত্র? সম্পদহীন রোহিঙ্গাদের হাতে ভিক্ষার ঝুলি থাকার কথা, অস্ত্র থাকবে কেন? তাদের কাছে (চিহ্নিত কয়েকজন মাঝি) লাখ লাখ টাকা থাকে কিভাবে? রোহিঙ্গাদের অতিরিক্ত ত্রাণ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, ক্যাম্পের বাইরে যাতায়াত বন্ধকরণ, ক্যাম্প অভ্যন্তরে দোকানপাট নিষিদ্ধকরণ ও বাইরে দালানকোঠা নিয়ে বসবাসকারী বাংলাদেশী দাবিদার পুরনো রোহিঙ্গা নেতাদের (আরএসও) ক্যাম্পে আনাগোনার উপর বিধিনিষেধ আরোপ প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। উখিয়া থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের হেড মাঝি আমিন জানান, মধুরছড়া লম্বাশিয়া ক্যাম্পের মরগেছ পাহাড়ে ইয়াবা ডন মোহাম্মদ উল্লাহ মাসিক বেতন দিয়ে ১৫০ যুবককে তার নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তারা ইয়াবা পাচারের গতিবিধি লক্ষ্য করে প্রসাশনের লোকজনের খবরাখবর মোহাম্মদ উল্লাহকে জানায়। তার গ্রুপের সদস্যদের জনপ্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয় বলে জানা গেছে। সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক অপহরণ হওয়া রোহিঙ্গা আবুল কালামের স্ত্রী নুর জাহান বেগম বাদী হয়ে সন্ত্রাসী আব্দুল হামিদসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মামলা করেছে।
×