ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁদা না দেয়ায় কাপ্তাই লেকে মাছ ধরা বন্ধ ॥ আতঙ্কে জেলেরা

প্রকাশিত: ২১:২৬, ১ সেপ্টেম্বর ২০২০

চাঁদা না দেয়ায় কাপ্তাই লেকে মাছ ধরা বন্ধ ॥ আতঙ্কে জেলেরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গামাটি, ৩১ আগস্ট ॥ মোটা আঙ্কের চাঁদা না পাওয়ায় সান্ত্রাসীরা কাপ্তাই লেকের বিশাল এলাকা থেকে জেলেদের তাড়িয়ে দিয়েছে। গত তিনদিন ধরে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের ভয়ে নানিয়াচর ও চেঙ্গি নদীর বিশাল এলাকায় কোন মৎস্যজীবী মাছ শিকার করতে যায়নি। মূলত সেখানে অলিখিত ধর্মঘট চলছে। ফলে কাপ্তাই লেকের ২৪ কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ হুমকির মুখে পড়েছে। এই বিষয়ে নাম প্রাকশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী ও মৎস্যজীবী জানায়, তাদের নিকট পাহাড়ের ৪টি সন্ত্রাসী গ্রুপ একযোগে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। তারা সন্ত্রাসীদের দাবিকৃত চাঁদা আদায় না করায় নানিয়াচর ও চেঙ্গি এলাকায় কাপ্তাই লেকে মাছ ধরতে নিষেধ করে। ফলে গাত তিনদিন ধরে ওই এলাকায় কোন জেলে মাছ শিকার করতে যায়নি। এই বিষয়ে মৎস্যজীবী লীগের এক প্রভাবশালী নেতাও চাঁদাবাজির ঘটনাটি স্বীকার করেছেন। এদিকে মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশেনের রাঙ্গামাটি প্রজেক্ট ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করলে তিনি সরাসরি চাঁদার কথা স্বীকার না করলেও ওই এলাকায় একটি গোলযোগ চলছে বলে জানান। একইভাবে কাপ্তাই এলাকায়ও সন্ত্রাসীরা মোটা অঙ্গের চাঁদা দাবি করায় সেখানেও লেক থেকে মাছ আহরণ বন্ধ ছিল। পরে ব্যবসায়ীরা তা সমাধান করায় পুনরায় জেলেরা মাছ আহরণ শুরু করেছে। এইভাবে একের পর এক সন্ত্রাসীদের চাঁদার থাবা বেড়ে যাওয়ায় দেশের একমাত্র বিশাল সুস্বাদু পানির মৎস্য ভা-ার প্রচ-ভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। কাপ্তাই লেকে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি ও মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণসহ হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশ মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিন মাসের জন্য কাপ্তাই হ্রদের সকল ধরনের মাছ ধরা, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহন করা বন্ধ ঘোষাণা করেছে। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ তার ক্ষমতাবলে এই আদেশ জারি করেছেন। তিন মাস শেষ হওয়ায়, গত ১০ আগস্ট লেকে মাছ আহরণ খুলে দেয়ার পর মাছ আহরণ শুরু করে। এর মধ্যে কাপ্তাই লেকে ২২ হাজার মৎস্যজীবী সন্ত্রাসীদের কবলে পড়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে। এই মাছ আহরণের ওপর ব্যবসায়ী ও জেলেসহ জেলার এক লাখ লোক জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এই চাঁদাবাজির কারণে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ কাপ্তাই হ্রদ দেশের অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয়ের মধ্যে সর্ববৃহৎ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় কৃত্রিমভাবে তৈরি লেকগুলোর মধ্যে অন্যতম। জলবিদ্যুত উৎপাদনের জন্য ৭ শত ১৫ বর্গ কি.মি. আয়তনের এ লেকটি মূলত তৈরি হলেও মৎস্য উৎপাদন, কৃষিজ উৎপাদন, জলপথে যাতায়াত, ফলজ ও বনজ দ্রব্য দুর্গম পথে পরিবহন, জেলে, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনসাধারণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও জীবন-জীবিকা থেকে শুরু করে মৎস্য সেক্টরে কাপ্তাই লেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। এই লেকে চলতি বছর ৪৩. মে.টন মাছের পোনা ছাড়া হয়েছে। প্রতিবছর সরকার এই থেকে ১৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে। স্থানীয় চাহিদাসহ এই লেক থেকে প্রতিবছর ২৪ কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ আহরণ করা হয়ে থাকে।
×