ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ১ সেপ্টেম্বর ২০২০

অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

দেশে এবার বৃষ্টি ও বন্যা হয়েছে ছাড়া ছাড়া এবং ভাগে ভাগে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আমফানে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হলেও তা ছিল সিডরের তুলনায় অনেক কম। তদুপরি আষাঢ়-শ্রাবণের ঢল তথা প্রবল বর্ষণ বলতে যা বোঝায়, তা দেখা যায়নি এবার। তবে তিস্তাসহ উজান থেকে নেমে আসা পানিতে প্রথমে উত্তরবঙ্গ এবং পরে মধ্যাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা। দেশের ২৩টি জেলায় বন্যার উপদ্রব দেখা দিলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বানভাসি মানুষের দুঃখ-কষ্ট-দুর্ভোগের পাশাপাশি ছিল করোনা মহামারীর উপদ্রব। তবে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি। ফসলহানি এবং মাছের ঘের ভেসে যাওয়া দুঃসংবাদও কম। বন্যাদুর্গতদের জন্য সরকার সর্বাত্মক সহায়তাসহ ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। নদী ভাঙ্গনকবলিত উদাস্তুদের পুনর্বাসনের উদ্যোগও নিয়েছে। তদুপরি এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমনÑ অতিবৃষ্টি, বন্যা, পাহাড়ী ঢল, ঝড়-ঝঞ্ঝার প্রকোপ কম। বর্ষার আগেই বাম্পার ফলনের বোরো ধান কেটে গোলায় তুলে ফেলতে সক্ষম হয়েছে কৃষক। যে কারণে করোনাকালীন লকডাউন পরিস্থিতিতেও সামাল দেয়া গেছে খাদ্য পরিস্থিতি। এ সময় বিশ্বের অনেক দেশে খাদ্যসঙ্কট তথা খাদ্যাভাব দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। দেশে বর্তমানে ধান-চালের মজুদ পরিস্থিতিও ভাল। আউশের উৎপাদনও আশাব্যঞ্জক। এ অবস্থায় নিত্যপণ্য বিশেষ করে চালের দাম বাড়ার আদৌ কোন কারণ নেই। তবে দুঃখজনক হলো, একশ্রেণীর আড়তদার, মজুদদার ও পাইকারদের অসাধুতার কারণে গত কয়েক দিনে হঠাৎ করে বেড়েছে চালের দাম। বিশেষ করে মোটা চালের দাম প্রতি কেজিতে অন্তত পাঁচ টাকা বৃদ্ধির খবরটি রীতিমতো উদ্বেগজনক। এর পাশাপাশি অন্তত ১৩টি নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভোজ্যতেল, ডাল, গুঁড়াদুধ, চিনি, মসলা, আদা পেঁয়াজ ইত্যাদি। মজুদদার ও পাইকাররা এক্ষেত্রে অজুহাত দিচ্ছেন ঝড়-বৃষ্টির জন্য ধান শুকাতে না পারাকে, যেটি নিতান্তই ঠুনকো যুক্তি। আসলে এর পেছনে রয়েছে নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের হীনমনোবৃত্তি ও কারসাজি, যা তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপলক্ষ করে প্রতিবছরই করে থাকে। অথচ দেশে প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের মজুদ ও সরবরাহ যথেষ্ট এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। অতঃপর সরকার বাধ্য হয়ে কয়েকজন মিলমালিককে সতর্ক ও জরিমানা করেছে। প্রয়োজনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে অথবা প্রত্যাহার করে বিদেশ থেকে চাল আমদানির কথাও বলেছে। টিসিবির মাধ্যমে ভোজ্যতেল, চিনিসহ ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য ট্রাকসেলে বিক্রিও হচ্ছে। জরুরী প্রয়োজন মেটাতে দশ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রিও আরও সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। সে অবস্থায় নিত্যপণ্যের আমদানিকারক, মজুদকার ও পাইকারি বিক্রেতাদের মধ্যে শুভ বুদ্ধির উদ্রেক হবে বলেই প্রত্যাশা। যাতে জনজীবনে দুর্ভোগের সৃষ্টি না হয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নানা কারণের মধ্যে অন্যতম দুর্বল বাজার মনিটরিং, অসাধু আমদানিকারক, উৎপাদক, পরিবেশক, সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, অকার্যকর টিসিবি, সর্বোপরি ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে আদৌ কোন সমন্বয় না থাকা। যে কারণে ভোক্তা ও ক্রেতাস্বার্থ অধিকার এবং সংরক্ষণ বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট তথা মুুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী চক্রের বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফা লুটে নেয়ার কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয়। সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে বাজার মনিটরিং ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে। সরকার সেদিকে নিয়মিত নজরদারি অব্যাহত রাখবে নিশ্চয়ই।
×