ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাহাত খানের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ৩০ আগস্ট ২০২০

রাহাত খানের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একইসঙ্গে তিনি সাহিত্য ও সাংবাদিকতার সৃজনশীল পথ পাড়ি দিয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে যে একটি গতিময় বাংলা ভাষা আছে, তৎকালীন পূর্ববঙ্গ থেকে পরবর্তীকালে বাংলাদেশে যাদের হাত ধরে তা প্রবাহিত হয়েছে রাহাত খান তাদের অন্যতম। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এদেশের সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। শরীরী অস্তিত্ব না থাকলেও সৃষ্টিশীল কর্মের মাঝেই বেঁচে থাকবেন তিনি। বিদায়ী যাত্রায় এভাবেই রাহাত খানের মূল্যায়ন করলেন বিশিষ্টজনরা। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে শ্রদ্ধা জানাতে এসে এভাবেই একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাহাত খানের কীর্তির কথা উচ্চারণ করলেন তার সহযাত্রী সাংবাদিক ও কবি-সাহিত্যিকরা। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে রাহাত খানের প্রতি সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এখানে বাদ জোহর তার জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজা শেষে তার সর্বশেষ কর্মস্থল প্রতিদিনের সংবাদ কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। প্রেস ক্লাবে শ্রদ্ধাঞ্জলি পর্বে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, আব্দুল জলিল ভূঁইয়া, জাকারিয়া কাজল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন সাহা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান ও আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলসহ অন্যরা বিশিষ্টজনরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলামের পক্ষেও মরহুমের মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলা একাডেমি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাতীয় প্রেসক্লাব, প্রতিদিনের সংবাদসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। শ্রদ্ধাঞ্জলি পর্বে রাহাত খানের বর্ণিল কর্মজীবনের ওপর আলোকপাত করেন বিশিষ্টজনরা। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, রাহাত খান এক অপূর্ব ও বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম যে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন হয় তার কার্যনির্বাহী সাধারণ সম্পাদক ছিলেন রাহাত খান। সেই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসেছিলেন প্রধান অতিথি হয়ে। এসেছিলেন জসীমউদ্দিন ও জয়নুল আবেদিন। আমাদের গর্ব এটাই রাহাত ভাই সেই বয়সে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন সাহিত্যে। বাংলা সাহিত্যে যে একটি গতিময় বাংলা ভাষা আছে, তৎকালীন পূর্ববঙ্গ থেকে পরবর্তীতে বাংলাদেশে যাদের হাত ধরে তা প্রবাহিত হয়েছে, রাহাত খান তাদের অন্যতম। তাই আপন সৃষ্টিকর্মের মাঝেই বেঁচে থাকবেন রাহাত খান। রাহাত খানের সহধর্মিণী অপর্ণা খান বলেন, আপনাদের সবার কাছে রাহাত খানের জন্য আমি দোয়া প্রার্থী। আমাদের পরিবারের জন্যও আপনাদের কাছে দোয়া প্রার্থনা করি। আর এ দুঃসময়ে যারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, রাহাত খান শুধু সাহিত্যের ক্ষেত্রে নয়, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও রাহাত খান কিংবদন্তিতুল্য। তার এ চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে ও সাংবাদিকতায় একটা বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হলো। আমরা যারা তার উত্তরসূরি, নিশ্চয় আমরা তাকে দীর্ঘদিন মনে রাখব। জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, রাহাত খান শুধু কর্মজীবনে নয়, ব্যক্তি জীবনেও নিরহঙ্কার ও অমায়িক মানুষ ছিলেন। তিনি সুন্দর ও নান্দনিক জীবন-যাপন করতেন। রাহাত খানের কাজ, তার কথা, সান্নিধ্যের অভাব আমরা দীর্ঘদিন অনুভব করব। প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের বাসায় মারা যান রাহাত খান। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। ডায়াবেটিসসহ না বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন রাহাত খান।
×