ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান

পরীক্ষা নিয়ে অব্যাহত গুজবের কবলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ৩০ আগস্ট ২০২০

পরীক্ষা নিয়ে অব্যাহত গুজবের কবলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

বিভাষ বাড়ৈ ॥ এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে কোন রকমের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শনিবার এক বিবৃতিতে পরীক্ষা নিয়ে অব্যাহত গুজবে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ বিষয়ে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়টিতে গণমাধ্যমের সহযোগিতাও কামনা করেছে মন্ত্রণালয়। এদিকে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে নানা গুজব নিয়ে রীতিমতো বিপাকে আছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় ও তার অধীন দফতরের নামে ফেসবুক পেজ খুলেও চালানো হচ্ছে গুজব, ছড়ানো হচ্ছে মিথ্যা অপপ্রচার। এর আগে শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছিল, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। পরিস্থিতি অনুকূল হলে পরীক্ষা হবে। বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এইচএসসি পরীক্ষা এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণের বিষয়ে বিকল্প মূল্যয়ন পদ্ধতি কি হতে পারে সে বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করার নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। ঢাকা বোর্ড, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর, এনসিটির কর্মকর্তাদের এ প্রস্তাবনা তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশের পরেও পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে এমন নানা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এমন অবস্থায় শনিবার নতুন করে দেয়া এক সতর্ক বার্তায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে সোশ্যাল মিডিয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে ভুয়া ফেসবুকে পেজ ও প্রোফাইল ( মিনিস্ট্রি অব এডুকেশন বোর্ড) খুলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া ও এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাল্পনিক তারিখ ঘোষণা করে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। উল্লেখিত বিষয়ে গণমাধ্যমের সহযোগিতাও কামনা করা হল।’ মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, এই বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হলো স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় কখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে এবং কখন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি এখনও। পরীক্ষা নেবার উপযুক্ত পরিস্থিতি হলে তখন পরীক্ষা নেয়া হবে এবং তারিখ গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। উপযুক্ত পরিবেশ বিরাজমান হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ভুয়া কোন পেজের বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্য বিশ্বাস না করার জন্য সর্বসাধারণের প্রতি আহবান জানানো হল। মিনিস্ট্রি অব এডুকেশন বোর্ড নামের একটি ভুয়া পেজে লেখা আছে, ‘এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অক্টোবরের ১৫ তারিখ থেকে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। রুটিন প্রকাশিত হবে ১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’ যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কল্পনাপ্রসূত। উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ রয়েছে। এছাড়া অন্য কোন পেজের তথ্য বিশ্বাস করে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। প্রয়োজনে ভেরিফাইড পেজ () দেখে নিন। এই পরিস্থিতিতে কোন গুজবে কান না দিয়ে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে আহ্বান জানানো হল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে নানা গুজব নিয়ে রীতিমতো বিপাকে আছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় এমনকি খোদ শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিকে জড়িয়েও একটি অপরাধী চক্র গুজব ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রশাসনের নামে ভুয়া ওয়েবসাইট বা পেজ খুলে সেখানে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তিরও দাবি উঠেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সাধারণ বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদফতরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে অসংখ্য পেজ খোলা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা, ফল প্রকাশ, প্রশ্নফাঁস, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু ও বন্ধ রাখা, শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন ধরনের ভুয়া তথ্য প্রচার হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলছিলেন, অনেক অপরাধী পেজ খুলে ভুয়া তথ্য প্রচার করছে। বিভিন্ন সময় ৯০টিরও বেশি ওয়েবসাইট- পেজ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন করে ভিন্ন ভিন্ন নামে আবারও এ ধরনের পেজ খোলা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর নামেও এ ধরনের ওয়েবসাইট খুলে ভুয়া তথ্য দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এসব কাজে যারা যুক্ত তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিও এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইন্টারনেটসহ যে কোন মাধ্যমে শিক্ষা সংক্রান্ত কোন ধরনের ভুল তথ্য প্রচার করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক শ্রেণীর মানুষ শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতন থাকতে অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রী ইতোমধ্যেই বলেছেন, যখন সময় হবে আমরা গণমাধ্যমে জানিয়ে দেব কখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে এবং কখন পরীক্ষা নেয়া হবে।
×