ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চাঞ্চল্যকর সিনহা হত্যা

পুলিশী মামলার তিন সাক্ষীকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ৩০ আগস্ট ২০২০

পুলিশী মামলার তিন সাক্ষীকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস, কক্সবাজার ॥ অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামিদের দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় পুলিশের পক্ষে দায়েরকৃত মামলার তিন সাক্ষীকে শনিবার দ্বিতীয় দফার রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। অপরদিকে এ মামলার প্রধান তিন আসামির তৃতীয় দফায় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে শনিবার থেকে। শনিবার দ্বিতীয় দফায় যে তিনজনকে চারদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তারা হলেন মারিসবুনিয়ার নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও মোঃ আয়াছ। কক্সবাজার জেলের সুপার আকরাম হোসেন জানিয়েছেন, বেলা সোয়া ১১টার দিকে র‌্যাবের একটি দল কারাগার থেকে এ তিনজনকে নিয়ে যান। উল্লেখ্য, গত ২২ আগস্ট এদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদনের অনুমতি দেন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ। এদিকে বিশেষজ্ঞ আইনজীবীদের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের গ্রেফতারের ঘটনায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের তদন্ত প্রক্রিয়ায় কিছুটা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া হত্যাকা-ের মূল নায়ক হিসেবে চিহ্নিত কিলার এসআই লিয়াকত আলী, সঙ্গী এএসআই নন্দদুলাল রক্ষিত এবং গুলির অনুমতি দানকারী ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ঘটনা নিয়ে নানা ফিরিস্তি দিলেও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে এখনও রাজি নন। এ অবস্থায় এ তিনজনকে গত শুক্রবার থেকে তৃতীয় দফায় ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এরপর শনিবার এ ঘটনা নিয়ে পুলিশী মামলার সাক্ষী তিনজনকে দ্বিতীয় দফার রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়েছে র‌্যাব। লিয়াকত-প্রদীপের ফাঁসি দাবি ॥ টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহাড়ছড়া এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যা ঘটনায় জড়িত বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দদুলালের ফাঁসি দাবি করেছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের মতে, টেকনাফ থানায় দায়িত্ব পালনকালে ওসির ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রদীপ দাশ অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছেন। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল অঙ্কের অর্থ। শেষমেষ অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খানকেও হত্যা করে ক্রসফায়ার বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। উদ্ধার দেখানো হয়েছিল মাদকদ্রব্য। তবে বিধিবাম, হত্যার নেপথ্যের ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। ইতোমধ্যে এ মামলার তিন সাক্ষী এপিবিএনের তিন সদস্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। আইনজীবীদের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, একটি হত্যা মামলা প্রমাণে কোন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী একেবারে মুখ্য নয়। যদি দেয় তা বিচারের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এ মামলায় পুলিশের পক্ষে এএসআই নন্দদুলার রক্ষিত বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় যে মামলা দায়ের করেছেন তাতে পরিষ্কারভাবে তিনি উল্লেখ করেছেন, কিভাবে সিনহা হত্যাকা-টি ঘটেছে। এছাড়া এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মারিসবুনিয়ার তিনজন এবং ঘটনাস্থল এপিবিএন তল্লাশি চৌকির তিন সদস্য। সাক্ষী হিসেবে এদের বড় ধরনের সহায়ক ভূমিকা পালন করার কথা। কিন্তু এদের মামলায় আসামি করা হলো কেন তা একটি বড় ধরনের প্রশ্নবোধক হয়ে আছে। এটা নিশ্চিত যে, তল্লাশি চৌকিতে এপিবিএনের তিনজন হত্যাকা-ের সঙ্গে কোনভাবে জড়িত নয়। তারা ওইদিন প্রত্যক্ষদর্শীর মতোই ছিলেন। কারণ, গুলি বর্ষণকারী লিয়াকত তাদের সিনিয়র হওয়ায় তা টুশব্দ করতে পারেননি। এছাড়া ইন্সপেক্টর লিয়াকত ও এএসআই নন্দদুলাল রক্ষিত ঘটনার পূর্ব মুহূর্তে তল্লাশি চৌকির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। তারা নিজেরাই সড়কে যাতায়াতকারী যানবাহন তল্লাশিতে নিয়োজিত হন। অনুরূপভাবে সিনহা ও শিফাতকে বহনকারী প্রাইভেটকারটিও আটকান। এরপর তাদের গাড়ি থেকে নামার নির্দেশ দেন। নির্দেশনা পেয়ে হাত উচিয়ে প্রথমে শিফাত নেমে আসলে তাকে গাড়ির পেছনে হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে বলা হয়। এরপর সিনহাকে গাড়ি থেকে হাত উঁচু করে নামতে বলা হয়। সিনহা গাড়ি থেকে নামার মুহূর্তেই লিয়াকত তাকে পর পর চারটি গুলি করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে সিনহার জীবন প্রদীপ নিভে যায়। এ ঘটনা নিয়ে পুলিশের পক্ষে যে মামলাটি করা হয় সেটিতে মারিসবুনিয়ার তিনজনকে সাক্ষী করা হয়। তারা এখন আসামি। তাদের পাশাপাশি তল্লাশি চোকির এপিবিএনের তিন সদস্যও আসামি। দফায় দফায় চলছে তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ। আইনজীবীদের মতে, একটি পরিষ্কার হত্যাকা- এ ঘটনা প্রমাণে পারিপার্শ্বিক কিছু আলামত ও সাক্ষী প্রয়োজন। এতে এসবের কোন অনুপস্থিতি নেই। কিন্তু সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দী গ্রহণ করা যেত। কিন্তু এপিবিএনের ৩ জন এখন জবানবন্দী দিয়েছেন আসামি হিসেবে। বিচারকালে বিষয়টি আদালতে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি করতেও পারে বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের অভিমত।
×