ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর নিরাপত্তায়-

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ২৯ আগস্ট ২০২০

রাজধানীর নিরাপত্তায়-

ঢাকা শহরকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দিতে আসছে নতুন কর্মযোগ। রাজধানীজুড়ে যে ছিনতাই, রাহাজানিসহ হরেক রকম অপকর্ম ঘটে থাকে, সেসব বিষয়ে তীক্ষè নজরদারিতে আনতে স্থাপন করা হবে সিসি ক্যামেরার মতো দরকারি প্রযুক্তি। তাছাড়া উন্নত বিশ্বের আদলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে নতুন মাত্রা দিতেও এই ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করছে সরকার। সরকারের প্রস্তাবিত সেফসিটি প্রকল্পের আওতায় ডেভেলপমেন্ট অব ঢাকা সিটি ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম নামে একটি প্রকল্প তৈরি করছে পুলিশ সদর দফতর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের প্রেক্ষাপটে তা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। গত বছরই এমন প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রস্তুত করা হলেও করোনা দুর্যোগে তা আর এগোতে পারেনি। এর আগে বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসানো হলেও প্রত্যাশিত সুফল আসেনি। সুষ্ঠু ও যথার্থ পরিকল্পনা এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় নতুন প্রকল্পকে এগিয়ে নেয়া হবে বলে রাজধানীবাসী আশাবাদী। ঢাকা শহরের এই মেগা প্রকল্পের আগে, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৫০০ পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের অন্য এক কর্মসূচীও গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক গৃহীত এই কার্যক্রমও যথাযথ পরিকল্পনায় এগিয়ে নেয়া হবে। সিসি ক্যামেরার সংখ্যা যত বেশি হবে, ততই রাজধানীর নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার হবে। নতুন প্রস্তাবনায় সেফ সিটি প্রকল্পে ঢাকার ছয় হাজার কিলোমিটার ছোট বড় রাস্তার পুরোটাই কয়েক হাজার সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। নিত্য ঘটে যাওয়া হরেক রকম অপরাধ কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করতে নতুন এই ব্যবস্থাপনা যথার্থ ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত ব্যক্ত করা হয়। এছাড়া সড়ক পরিবহনের অনিয়ম, বিশৃঙ্খলতা ঠেকাতেও সিসি ক্যামেরার গুরুত্ব অপরিসীম। জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলা, চুরি-ডাকাতির অপকর্ম ছাড়াও খুন রাহাজানির মতো জঘন্য কর্মকান্ডের লাগাম টানতে এই কার্যক্রম বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। কোটি মানুষের শহর ঢাকায় নতুন মানুষ যোগ হচ্ছে। জনবহুল ঢাকা শহরের সড়ক-মহাসড়ক ছাড়াও অলিগলিতে বিচিত্র অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। কিন্তু যথাযথ প্রমাণের অভাবে অপরাধী শনাক্ত করতে না পারায় অন্যায়-অবিচার ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। নতুন কর্মযোগে পুরো সিটিকে নজরদারিতে আনা সম্ভব হলে একদিকে যেমন অপরাধ চিহ্নিত হবে, অপরদিকে তেমনি অপকর্মের মাত্রা কমে যাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা। এতে ঢাকা শহর অনেকটাই নিরাপদ হয়ে উঠবে। স্বস্তি আর নির্বিঘ্নে রাস্তাঘাট, অলিগলিতে চলাচল প্রায় অসম্ভব। উটকো বিপত্তিতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি তো হয়ই চিহ্নিত না হওয়ার সুযোগে অপরাধী পার পেয়ে যায় এবং নতুন অসৎ উদ্দেশ্যে পুনরায় নিজেকে নিয়োজিত করে। আর এভাবেই অপশক্তির দৌরাত্ম্য বেড়ে চলে। ছড়ানো, ছিটানো আর বিক্ষিপ্তভাবে বসানো সিসি ক্যামেরাগুলো জরুরী প্রয়োজনে তেমন কোন কাজে আসে না। সঙ্গত কারণে কোন কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নে কঠোর নজরদারিও নিতান্ত আবশ্যক। সিসি ক্যামেরা থেকে প্রয়োজনীয় ফুটেজ বের করতে গেলে যান্ত্রিক এই উন্নত পদ্ধতির যথেষ্ট রক্ষণাবেক্ষণও অত্যন্ত জরুরী। যার ঘাটতিতে মেগা প্রকল্প তার যথার্থ লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। সুতরাং পুরো রাজধানীতে সিসি ক্যামেরা বসানোর যে আধুনিক নবযাত্রা সেখানে শুধু নিরাপত্তা বলয়ই নয়, নিয়মিত নজরদারিও সার্বিক কর্মযোগের অবিচ্ছেদ্য বিষয়। এসব বিষয় সচেতন দায়বদ্ধতার বিবেচনায় আনা সঙ্গত। আগে স্থাপিত এলাকাভিত্তিক সিসি ক্যামেরাগুলো প্রায়ই বিকল ও অকেজো থাকে। যার কারণে অনেক দুর্ঘটনার প্রয়োজনীয় ফুটেজ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এবারের ব্যাপক কার্যক্রমে তেমন ভুলভ্রান্তির যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখাও কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। পুরো কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন ও বাস্তবায়ন হলেই ঢাকাকে নিরাপত্তার বলয়ে নিয়ে আসা যাবে। নিঃসন্দেহে সিসি ক্যামেরার রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি উভয় সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মীরা নিয়মিত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে করবেন- এটাই প্রত্যাশা। ঢাকা হোক নিরাপদ।
×