ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় অপরাধ কমলেও এখন বাড়ছে

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ২৯ আগস্ট ২০২০

করোনায় অপরাধ কমলেও এখন বাড়ছে

শংকর কুমার দে ॥ সারাদেশের থানাগুলোতে দায়ের করা মামলায় অপরাধজনক পরিস্থিতির পরিসংখ্যান ফের উর্ধমুখী। করোনাভাইরাসের লকডাউন থাকাকালে অপরাধজনক পরিস্থিতির সূচক ছিল নিম্নগতি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার চেষ্টার মধ্যে থানাগুলোতে দায়ের করা অপরাধের পরিসংখ্যান ক্রমবর্ধমান। খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি, নারী নির্যাতন, মাদক সংক্রান্ত অপরাধসহ বিভিন্ন পারিবারিক অপরাধের ঘটনাও সাম্প্রতিক সময়ে বাড়ার প্রবণতা বেশি। সারাদেশের থানাগুলোতে যেসব মামলা হয়েছে তার মধ্যে এক তৃতীয়াংশই মাদক সংক্রান্ত অপরাধ। করোনাভাইরাসের শুরুতে অপরাধের পরিসংখ্যান বড় ধরনের পতন হয়েছিল, যা স্বাভাবিক জীবনের গতি ফিরে আসার সঙ্গে অপরাধের পরিসংখ্যান উর্ধমুখী। এ কারণে পুলিশের অপরাধজনক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের তৎপরতা বৃদ্ধি, তদন্তে গতি ফিরে আনাসহ পুলিশী তৎপরতায়ও গতি ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে পুলিশ। তখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিহত হয়েছেন ৭২ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৫৫০ জন। করোনাভাইরাসের প্রকোপ না কমলেও এখন আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পরিস্থিতিতে পুলিশী তৎপরতা, তদন্ত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, অপরাধ দমনসহ সবকিছুতেই আবার আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যাওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ সদর দফতরের দাবি। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে লকডাউনের মধ্যে গত এপ্রিলে দেশের থানাগুলোতে মামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। আবার লকডাউন শিথিল ও উঠে যাওয়ার পর মামলার সংখ্যা বাড়ছে। করোনাভাইরাসের মধ্যে অনেকেই অপরাধের ঘটনা ঘটার পরও থানা-পুলিশে যাওয়াকে উপেক্ষা করে চলত। এখন করোনাভাইরাস প্রকোপের ভয়-ভীতি অনেকটা দূর হয়ে যাওয়ার কারণে মানুষজন গৃহবন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত জীবনে ফিরে আসছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতেই অপরাধজনক পরিস্থিতির পরিসংখ্যান উর্ধমুখী বলে মনে করেন অপরাধ বিশ্লেষকগণ। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, করোনা মহামারীর সঙ্কট মোকাবেলা করতে গিয়ে করোনা সংক্রান্ত পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে পুলিশ। মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব মানা, জীবাণুনাশক ব্যবহার ইত্যাদি কাজে পুলিশের ব্যস্ততা ছিল। করোনার সংস্পর্শে এলেই সংক্রমিত হয়ে পড়ে অনিবার্য মৃত্যুর ঝুঁকির ভয়ে ভীত হয়ে মানুষজন ছিল অনেকটা গৃহবন্দী। নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজকর্ম ছাড়া মানুষজন ঘরের বাইরে না আসায় নানা ধরনের অপরাধের ঘটনা প্রায় শূন্যের কোঠায় যাওয়ার পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এখন মানুষজন ঘর থেকে বাইরে এসে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সঙ্গে অপরাধের ঘটনা বাড়ছে, মামলার তদন্তে গতি বাড়ানো হচ্ছে, পুলিশী তৎপরতায় ভিন্নমাত্রা যুক্ত হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী জুন মাসে ২৭টি ডাকাতি, ৭৯টি দস্যুতা, ১০১৪টি নারী নির্যাতন, ২০৬টি শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে সারাদেশে। আর মাদক আইনের মামলা হয়েছে ৪ হাজার ১৪৫টি। পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সারাদেশের থানাগুলোতে গত জানুয়ারি মাসে মামলা হয়েছিল ১৮ হাজার ৬টি। ফেব্রুয়ারি মাসে এই সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৪৭২টি। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয় মার্চ মাসে। সংক্রমণ বাড়তে থাকলে ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে শুরু হয় লকডাউনের বিধিনিষেধ। এ মাসে দেশে মামলার সংখ্যা কমে হয় ১৭ হাজার ১৫০টি। এপ্রিলে পুরোদমে লকডাউনের মধ্যে সারাদেশে মোট মামলার সংখ্যা এক ধাক্কায় ৯ হাজার ৯৮টিতে নেমে আসে। মে মাসে কয়েক ধাপে বিভিন্ন বিধিনেষেধ তুলে নেয়া হলে মানুষের চলাচল বাড়ে। ৩১ মে সব অফিস খুলে দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়ে যায়। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মে মাসে সারাদেশে মামলার সংখ্যা এপিলের চেয়ে প্রায় আড়াইহাজার বেড়ে হয় ১১ হাজার ৫০০। জুন মাসে তা আরও বেড়ে ১৩ হাজার ১৯২টিতে পৌঁছায়। জুলাই মাসের অপরাধজনক পরিস্থিতির সূচক আরও উর্ধমুখী। আগস্ট মাসেও অপরাধজনক পরিস্থিতির উর্ধমুখীর ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে দেশে ৬০১টি ধর্ষণ, স্বামীর নির্যাতনে স্ত্রীর মৃত্যুর ১০৭টি ঘটনা ঘটেছে। যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে ১০৩টি, যার কারণে ৯ জন আত্মহত্যা করেছেন। শিশু নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে ৬৮০টি। এই ছয় মাসের মধ্যে জানুয়ারি মাসে যেখানে ৯৮টি ধর্ষণের তথ্য এসেছিল সেখানে ফ্রেব্রুয়ারিতে ৯২টি এবং মার্চে ৬৭টি ঘটনার তথ্য এসেছে আসনের পরিসংখ্যানে। এরপর এপ্রিলে ৭৬টি, মে মাসে ৯৪টি ধর্ষণের ঘটনার তথ্য এলেও জুনে তা এক লাফে বেড়ে ১৭৪টি হয়েছে।
×