ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বামী মৃত দেখিয়ে দশ নারীর বিধবা ভাতার কার্ড

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ২৯ আগস্ট ২০২০

স্বামী মৃত দেখিয়ে দশ নারীর বিধবা ভাতার কার্ড

জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট ॥ একটি দুটি নয়, গুনে গুনে ১০। এবার জীবিত ১০ জন স্বামীকে মৃত দেখিয়ে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে ১০ নারীকে (স্ত্রী) অর্থের বিনিময়ে বিধবা ভাতা কার্ড করে দেয়ার প্রমাণ মিলেছে। এই ঘটনায় জেলাজুড়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এরপরও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে দুর্নীতিবাজরা। জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউপি ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আজিজুল হক অর্থের বিনিময়ে বেঁচে থাকা স্বামীদের স্ত্রীর বিধবা ভাতা কার্ড করে দিয়েছে। তার ওয়ার্ডে নতুন করে ১৭টি বিধবা কার্ডের বরাদ্দ পায়। এর মধ্যে চারটি বিধবা, দুজন পরিত্যক্ত, একজন পলাতক স্বামী ও ১০ জনের স্বামী বেঁচে আছে এমন নারীকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে। এরা হলেন কার্ড নং ১৬৫/১০৮৮ মোছাঃ কুলসুম বেগম পিতা বাচ্চু স্বামী মোঃ মোজাম্মেল হক, ১৬৮/১০৯১ মোছাঃ খোতেজা বেগম পিতা রহিম উদ্দিন স্বামী মোঃ নুর হক, মোছাঃ দুলালী বেগম পিতা ছইমুদ্দিন স্বামী তবারক, মোছাঃ ফাতেমা বেগম পিতা নছর মুন্সি স্বামী মনছার, মোর্শেদা বেগম পিতা ভদর মন্ডল স্বামী মোঃ মজু, রেশনা বেগম পিতা ওমর আলী স্বামী মোঃ ছাপার আলী, মোছাঃ ছফিয়া বেগম পিতা সামাদ স্বামী মোঃ জমসের, মোছাঃ ফরিদা বেগম পিতা ফয়েজ উদ্দিন মুন্সী স্বামী মোঃ আব্দুল হামিদ, ছালমা বেগম পিতা তমুর উদ্দিন স্বামী মোঃ আবুল হোসেন ও ১৭৬/১০৯৯ হাজরা বেগম পিতা কেতু শেখ স্বামী জব্বার আলী। ভেলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান, তার ইউনিয়নে ২০১৯-২০ অর্থবছরে নতুন করে ১৮৭ জন বিধবা ভাতার কার্ডের রবাদ্দ পায়। বরাদ্দ জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিটি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্যদের ভাগ করে দেয়া হয়েছে। ৮ নং ওয়ার্ডে এই অনিয়মের বিষয়টি অবগত হয়েছি। তাই এখনও ওই ইউপি সদস্যের বিধবা কার্ডের বিপরীতে প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়নি। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ রওশন আলী মন্ডল জানান, ইউপি সদস্যেদের দেয়া তথ্যে তালিকা চূড়ান্ত করা পর্যায়ে ছিল। এখনও তালিকা চূড়ান্ত হয়নি। তার আগেই অনিয়ম ধরা পড়েছে। এ বিষয়ে তাকে শোকজ করা হয়েছে। এ ধরনের অনিয়ম আদিতমারী উপজেলার সব ইউনিয়ন হতে পেয়েছি। তবে ভেলাবাড়ির এক সঙ্গে সংখ্যায় বেশি। আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন জানান, বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পেরেছে। এসব কার্ড বাতিল করা হয়েছে। সমাজ সেবা কর্মকর্তা রিপোর্ট দিলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করা হবে। আইনী ব্যবস্থা নেয়ার তার কোন ক্ষমতা নেই। এই ক্ষমতা জনপ্রতিনিধি অধ্যাদেশে (স্থানীয় সরকার আইনে) ডিডিএলজি রফিকুল ইসলাম স্যার নিতে পারেন। এদিকে এই অনিয়মের বিষয়ে জেলার সাধারণ মানুষের মাঝে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রকৃতদের বঞ্চিত করে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন ধরনের ভাতার কার্ড বিতরণে করা হচ্ছে তার এটাই জ¦লন্ত প্রমাণ হিসেবে দেখছেন। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে এটাই তার প্রমাণ। জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর জানান, যেকোন অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×