স্টাফ রিপোর্টার ॥ সর্বশেষ মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে মঞ্চনাটক দেখেছে ঢাকার দর্শক। তারপর মহামারীর অভিঘাতে দীর্ঘ বিরতি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মঞ্চশিল্পীর শ্রম-ঘাম আর মেধায় বিকশিত শিল্পমাধ্যমটিতে এমন দুঃসময় কখনও আসেনি। পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে ঢাকাসহ সারাদেশের নাট্যমঞ্চে বিরাজ করছে স্থবিরতা। এবার ভাঙ্গলো সেই নীরবতা। অচলায়তন পেরিয়ে সচল হলো মঞ্চনাটক। শুক্রবার সন্ধ্যায় বেইলী রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হলো মোমেনা চৌধুরী অভিনীত একক নাটক লাল জমিন। এই মঞ্চাভিনেত্রীর নিজ উদ্যোগেই শূন্যন রেপার্টরি থিয়েটার প্রযোজিত প্রযোজনাটির ২৪৪তম প্রদর্শনী হয়। করোনাকালে নিউ নরমাল লাইফের বাস্তবতা মেনেই পরিবেশিত হয় মুক্তিযুদ্ধের গল্পনির্ভর নাটকটি। আর এই প্রদর্শনীর সুবাদে একইসঙ্গে উজ্জীবিত হয়েছে নাট্যকর্মীসহ মঞ্চনাটকের দর্শকবৃন্দ। তাই তো হল ভাড়া উঠিয়ে নেয়ার মতো কাক্সিক্ষত দর্শকের উপস্থিতিতেই হয়েছে নাটকের মঞ্চায়ন।
এই নাট্য প্রদর্শনীতে ২৪২ আসনের মহিলা সমিতি মিলনায়তনের এক-তৃতীয়াংশ ব্যবহার করা হয়েছে। দুই সিট পরপর ছিল দর্শকের আসন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শকরা মাস্ক পরেই উপভোগ করেছে নাটকটি। এছাড়া মিলনায়তনে প্রবেশের আগে মেপে নেয়া হয়েছে দর্শকের শরীরের তাপমাত্রা। আয়োজকদের পক্ষ থেকে স্যানিটাইজিংসহ জীবাণুনাশকের ব্যবস্থাও রাখা ছিল।
মহামারীকে সঙ্গী করে নাট্য মঞ্চায়ন প্রসঙ্গে মোমেনা চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, পাঁচ মাস অলস সময় কাটালাম। আর কত? অথচ অনেক আগে থেকেই গার্মেন্টস চলছে। সরকারী-বেসরকারী অফিস খুলে গেছে। রেস্তরাঁগুলোয় মানুষের ভিড় বেড়েছে। অনেক কর্পোরেট অফিসে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো স্পেস না থাকলেও সেগুলো ঠিকই চলছে। এখন তো শুধু স্কুল-কলেজ ছাড়া সবই খোলা। তাহলে আমরা কেন পিছিয়ে থাকব? সরকারী স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি সকল কর্মকান্ড চলে তাহলে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম কেন বন্ধ থাকবে? নিউ নরমাল লাইফে করোনাকে সঙ্গী করেই আমাদের
বাঁচতে হবে। সেক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্রে সচেতনতা মেনেই আমরা কাজ করব। ধীরে ধীরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। এ কারণে নিজ উদ্যোগেই এ নাটকের প্রদর্শনী করছি। কাউকে না কাউকে তো শুরু করতে হবে। আমি সেই শুরুটা করলাম। আশাকরি এখন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুনরায় নাটকের পথচলা শুরু হবে।
নাটক দেখতে এসেছিলেন যশোরের বিবর্তন নাট্যদলের ঢাকা শাখার নাট্যকর্মী সজীব বিশ্বাস। আলাপচারিতায় তিনি বলেন, এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানাই। নিউ নরমাল লাইফে একসময় সবকিছুই শুরু হবে। তাহলে নাটক কেন বন্ধ থাকবে? পাঁচ মাস তো অপেক্ষা করা হয়েছে। এবার সূচনা হলো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এমন প্রদর্শনীর আয়োজন আমাদের উদ্দীপ্ত করেছে। স্থবিরতা ভেঙ্গে নাট্যাঙ্গনে বইছে স্বস্তির সুবাতাস। আর দর্শকের কথা যদি বলি, সেক্ষেত্রে সবাই মঞ্চনাটক দেখে না। যারা দেখার তারা ঠিকই আসবে। সে জন্য দর্শকেরও অভাব হবে না।
এখন থেকে নিয়মিত নাট্য প্রদর্শনীর আশাবাদ ব্যক্ত করেন মহিলা সমিতি মিলনায়তনের ব্যবস্থাপক গাজী ইব্রাহীম ফিরোজ। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে প্রদর্শনীর জন্য তিনটি নাট্যদল হল বরাদ্দ চেয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
মান্নান হীরা রচিত লাল জমিন নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রযোজনাটিতে উঠে এসেছে তের পেরিয়ে চৌদ্দ ছুঁই ছুঁই এক কিশোর কন্যার গল্প। কিশোরীর চোখজুড়ে রয়েছে লাল পদ্মের জন্য ছায়াপ্রেম। এক মধ্যরাতে সে শুনতে পায় বাবা-মায়ের গুঞ্জন। সেই গুঞ্জনে শুধু মুক্তি আর স্বাধীনতা শব্দ দুটি গেঁথে যায় তার মনে। অগোচরে যুদ্ধে চলে যায় বাবা। কিশোরীও নানা কৌশলে যুদ্ধের আয়োজন করে। কিন্তু বয়স তাকে দেয় না অনুমোদন। এবার কিশোরীর সেই ছায়া-প্রেম দাঁড়ায় সম্মুখে, সে চিনতে পারে তার সেনাপতিকে। তারপর যুদ্ধযাত্রা। লক্ষ্যে পৌঁছুবার আগেই পুরুষ যোদ্ধারা কেউ শহীদ হন, কেউ নদীর জলে হারিয়ে যায়। পাঁচ যুবতীসহ যুদ্ধযাত্রী এই কিশোরীর জীবনে ঘটে নানা অভিজ্ঞতা। চৌদ্দ বছরের কিশোরীর ধবধবে সাদা জমিন যুদ্ধকালীন নয় মাসে রক্তরাঙা হয়ে ওঠে। এই কিশোরীর রক্তরাঙা অভিজ্ঞতার মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর এক নারীর সংগ্রামী নাট্যপ্রকাশ হয়ে ওঠে লাল জমিন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: