ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ২৩:৪৯, ২৮ আগস্ট ২০২০

কবিতা

আকাশ দর্শন আলমগীর রেজা চৌধুরী সময় গুনে শেষ নেই... কতকাল আকাশের দর্শন হয় না। রাত প্রহরে সেগুন গাছের ফাঁক দিয়ে গগনের বিস্তৃত মুখে অপূর্ব মধুরিমা আছে। বহু দিনরাত, ও মুখের সৌন্দর্ষ খুঁজেও দেখেনি ওতো জন্মসাক্ষী, দোঁহের সখিতা। ভুল হয়ে গেছে, নিয়নসাইনের আলোয় কিছুই দেখা যায় না, আকাশের দিকে চোখ যায় না। নাগরিক পথ সবকিছু ভুলিয়ে দিয়েছে। তাই আকাশ দর্শন! প্রিয় আকাশ, আমরা পৃথিবীর সন্তান, করোনাযাপন করছি- মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, ভুবন সজীব হয়ে উঠছে এই কী হয়? আমরা আকাশ দেখছি, ছাদে দাঁড়িয়ে নির্মল আকাশ। ** আদিগন্ত ফসলের কবিতা কুশল ভৌমিক আমার ঠাকুরদা একজন কৃষক ছিলেন মাটিগন্ধা হাতে তিনি শস্য ফলাতেন ধানের কাছে হৃৎপি- সমর্পণ করে তিনি শিশুর সারল্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন প্রতিটি ধান তখন কবিতা হয়ে উঠত আদিগন্ত মাঠ তখন কবিতার খাতা। আমার ঠাকুরদার মতো অমন কবি হয়ে উঠতে আমি কাউকে দেখিনি তিনি রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দের চেয়েও অনেক বড় কবি ছিলেন এমনকি সেক্সপিয়ারের সনেটগুলোকেও আমার কাছে ঠাকুরদার ফসলের চাইতে বড় কবিতা মনে হয়নি ঘাম শরীরে তিনি যখন লাঙ্গল চষতেন- মনে হতো এক্ষুনি জন্ম নেবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কোন কবিতা। অগ্রহায়ণে তিনি তার সোনালি কবিতাগুলো নিজ কাঁধে বয়ে এনে ঠাকুমার হাতে তুলে দিতেন ঠাকুমা পরমযত্নে কবিতাগুলোর গন্ধ শুঁকতেন,স্পর্শ করতেন, রৌদ্র মাখিয়ে রেখে দিতেন গোলাঘরের নান্দনিক মলাটে আমাদের গোটা বাড়িটাই তখন হয়ে উঠত অনিন্দ্য সুন্দর এক কবিতার বই। আমার ঠাকুরদা শস্যগন্ধা কবি ছিলেন আমি তার অযোগ্য দৌহিত্র দিন রাত শব্দের জট আঁকি গ্রন্থের কাছে করি আত্মসমর্পণ প্রাজ্ঞ বিজ্ঞের কাছে ছুটে যাই কবিতা লেখার গোপন রহস্য জানতে অথচ আমার ঠাকুরদা শুধুমাত্র ঘাম, মাটি আর লাঙ্গল দিয়ে কত সহজেই লিখতে পারতেন আদিগন্ত ফসলের অমর কবিতা। ** মুজিবনামা প্রত্যয় জসীম তুমি বেঁচে আছো জেগে ওঠা নতুন চরের সবুজ ঘাসে পদ্মা মেঘনা যমুনা করতোয়া ব্রহ্মপুত্রের ¯্রােতধারায় তুমি বেঁচে আছো হাতুড়ির আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া পাথরের কণায় কণায় কৃষকের লাঙ্গলের রূপালি ফলার উজ্জ্বলতায় তুমি বেঁচে আছো গ্রাম্য মেয়ের কলসি কাঁখে হেঁটে যাওয়া দৃশ্যের ভেতর দুরন্ত কিশোরের সাঁতারের ক্ষিপ্রতায় তুমি বেঁচে আছো অভিমানী কিশোরীর লাজুক মুখের আভায় নিষ্পাপ শিশুর পবিত্র চোখের চাওয়ায় তুমি বেঁচে আছো ফুটে থাকা গোলাপের রক্তিম স্পর্শে গোধূলির বিষণœতায় রাখালের বাঁশির সুরে সুরে তুমি বেঁচে আছো বাউলের একতারার করুণ বিলাপে ঢোলকের ঢোলের ধ্বনির তালে তালে তুমি বেঁচে আছো মিছিলে মিছিলে মানুষের উত্তোলিত হাতের স্পর্ধায় প্রতিবাদী স্লোগানের আগুনমাখা উত্তাপে তুমি বেঁচে আছো দিয়াশলাই কাঠির বারুদে বারুদে বন্দুকের চেম্বারে বুলেটের ম্যাগজিনে তুমি বেঁচে আছো সাহসী মানুষের অন্তরে অন্তরে অসহায় মানুষের আশার আলো হয়ে। ** একটু অবসর-শূন্যতায় ছায়াতলে মাসুদ মুস্তাফিজ একরত্তি সময় কী কারো হাতে নেই-জন্ম জয়ের পর মৃত্যুঞ্জয় মেঘের পালক ছিঁড়ে আমরা দূরন্ত প্লাবনে আঁধারের খঞ্জন তুলি এই দূূর্বাজীবনের রক্ত ঢেলে পৃথিবীর মাঠে ভেজা চুম্বনগুলো শুকোই নীরব ভাষায় একরত্তি সময় কী কারো হাতে নেই- আমাদের কারুকাজময় স্বপ্নের রঙ মাতাল বিষের প্রবাহে ভেসে যাবে অতল হাওয়ায় বাষ্পতার শূন্যছায়ায় নদীর লজ্জা ভেঙে এ কি জীবনের পালাবদল- বেদনা ঝরে, ঝরতে ঝরতে প্রিয়ার শূন্যচোখের জ্যোতি লুণ্ঠন হোয় ময়লার স্তূপে জলকাদায় মাখামাখি-অনাগত নতুন ঠোঁটের আশ্রয়ে কতোদিনে গড়বে প্রাণচঞ্চল সরল নদী একরত্তি সময় কী কারো হাতে নেই-বঞ্চিত নির্বানগুলো নন্দন পুরুষের নিঃশ্বাসে আবার জেগে উঠবে উবে যাওয়া ভালোবাসার দিনক্ষণ ফিরে আসুক পাখিদের সংসারে ম্যুরেল রাস্তায় খুন পড়ে থাকতে ভালো লাগে না হে-ঈশ্বরপিতা! সবকিছুই যদি মানুষের জন্যেই হয় মানুষ বিপন্ন হলে প্রকৃতিইবা বাঁচবে ক্যানো! আমরা ফিরে যেতে চাই প্রকৃতির কাছে সেই অস্তিত্বে আলোময় কারুকলার কাছে-একটু অবসর ভালোবাসার কাছে ** গজে গজে মাপি গভীরতা দ্বীপ সরকার হাঁটতেই থাকি, অথচ পা নেই পায়ে ধরতেই থাকি, অথচ হাত নেই হাতে ভাবতে গিয়ে খুঁজে পাই না মনের ভেতর মনের চিন্তার গভীরতার কোন মাপজোখ নেই গজ, মিটার বা ফুট-তাকেও ছুঁতে যাই, ভুল করে হাঁটতে হাঁটতে-পা চেপে পায়ে ধরতে ধরতে-হাত রেখে হাতে এমন চিন্তার ভেতর কবিতাকেও খুঁজে বেড়াই অহর্নিশ মন না থাকলে কোন কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না অথচ পায়ের মাপে-ধাপে ধাপে হাঁটি, পথ হাতের মাপে-গজে গজে মাপি জীবনের গভীরতা। ** কবিতার মহাসূত্র মাহফুজুর রহমান সৌরভ নিগূঢ় উৎসবে বেদনার ঝাঁপি খুলে দিয়েছি হিমাদ্রি ছুঁয়ে যাবে সুখের পরিধি-কবিতার শাবক সূর্যালোক আমাকে দিবে বিশুদ্ধ যাপন- সীমাহীন আকাশের মতো দখলদারিত্ব নেব কবির কবিতার সংসার। বহুকাল শুনেছি ধ্রুপদী কবিতার কোরাস নিখিল শুদ্ধতায় কবিতার নিকুঞ্জ হবে সমকাল থেকে মহাকাল অব্দি কবি শব্দকে সুষম বণ্টন করে কবিতার মহাসূত্র খুলবে। আমি ব্যাকরণে পাঠ নেব অন্য পৃথিবীর নতুন এক কবিতার সংসার। জাগো হে কবি, দ্যাখো- তোমার শাণিত শব্দমালার তরজমায় অন্য এক নতুন ভুবন। ** গাছের ডালের উষ্ণতায় সূর্য হাসে এনাম রাজু অবলীলায় রাত জিম্মি করে দিনকে, অক্টোপাস হয়ে গ্রাস করে আলোকজ্যোতি অবিরাম প্রচারে প্রসার ঘটায় দাম্ভিকতার। সুসজ্জিত চাঁদ ভুলেছে সূর্যের উদারতা... গাছের ডালের উষ্ণতায় সূর্য হাসে যে হাসির পরশ পেতে গালিচা হয় সমুদ্রবুক শুশক লুকোচুরি খেলে কার সাথে কখন? লজ্জায় নতুন বউয়ের মতো ঘোমটা পরে চন্দ্রের প্রতিবেশী সুখ।
×