ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুয়াকাটায় জাল পাতার সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ২১:২৮, ২৮ আগস্ট ২০২০

কুয়াকাটায় জাল পাতার সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৭ আগস্ট ॥ কুয়াকাটায় সৈকত ঘেঁষা সাগরের ৩৪ কিলোমিটার অগভীর এলাকা এখন চাঁদাবাজদের দখলে। খাজুরা থেকে কাউয়ারচর পর্যন্ত সাগরের এই বিশাল এলাকাজুড়ে স্থানীয় একটি চক্র ফি-বছর জেলেদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এক যুগ ধরে চলছে এ অভিনব এমন চাঁদাবাজি। এ চক্রের আবার এরিয়া ভাগ করে ইউনিট লিডার করা হয়েছে। একেক ইউনিটের টাকা আদায়ের জন্য ইউনিট ক্যাডার রয়েছে। জেলেরা টাকা না দিলে মারধর থেকে শুরু করে নৌকার ইঞ্জিন খুলে নেয়া হয়। এমনকি সাগরে জাল পাতা বন্ধ করে দেয়া হয়। কুয়াকাটায় সাগরের প্রায় সাত কিলোমিটার সাগর অভ্যন্তরে (অগভীর এলাকায়) যারা ইলিশ শিকার করে তাদের স্থানীয় ভাষায় খুঁটা জেলে বলা হয়। কারণ একটি নির্দিষ্ট সাইজের জাল দুই দিকে খুঁটার সাহায়্যে জেলেরা দিনরাত পেতে রাখে। একটানা ১৫-২০ দিন এই জাল পাতা থাকে। একেকটি নৌকার জেলেরা সাগরের নির্দিষ্ট এলাকায় জাল ফেলতে পারবে এমন বাধ্যবাধকতা করে দেয় এই সিন্ডিকেট। একটি নৌকার জেলেরা ১৪০ থেকে দেড় শ’ হাত প্রস্থ এলাকায় জাল পেতে রাখে। এভাবে প্রতি নৌকার জেলেদের ২০-২৫টি জাল পাতা থাকে। জাল পাতার এই নির্দিষ্ট স্থানকে জেলেরা ‘গাতা’ বলে থাকে। প্রতিদিন ভাটির সময় নৌকা নিয়ে জেলেরা জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে আনে। একেকটি নৌকায় ৪/৫ জন জেলে কাজ করে থাকে। একটি খুঁটা জেলে নৌকা ঘিরে গড়ে চার-পাঁচটি পরিবারের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। আল্লাহর দেয়া এই প্রাকৃতিক সম্পদ ইলিশ আহরণের সাগরও এখন চাঁদাবাজদের দখলে। ফি বছর মৌসুম ভিত্তিক একেকটি নৌকার জন্য চাঁদাবাজ ওই চক্রকে দিতে হয় তিন শ’ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত। এভাবে অন্তত ছয়শ’ খুঁটা জেলের নৌকা থেকে বছরে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কমপক্ষে লাখ টাকা। অসহায় জেলেরা জানান, তারা চার/পাঁচ জনে একটি নৌকাসহ জাল নিয়ে সাগরে নামলে খরচ হয় প্রায় দুই-আড়াই থেকে চার লাখ টাকা। এ টাকার অধিকাংশ আড়ত মালিকদের কাছ থেকে দাদন নেয়া হয়। দীর্ঘদিনেও এই চাঁদাবাজি বন্ধে কেউ কোন উদ্যোগ নেয়নি। সরকারী দলের নাম ব্যবহার করে স্থানীয় একটি চক্র এমন চাঁদাবাজি করলেও জেলেরা এদের ভয়ে তটস্থ থাকছে। দরিদ্র জেলেরা এদের কবল থেকে মুক্তি পেতে আনুষ্ঠানিকভাবে ইতিপূর্বে কখনও প্রতিবাদ করেনি। দেয়নি কোথাও কোন অভিযোগ। এক মাঝি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, খাজুরা থেকে কাউয়ার চর পর্যন্ত ছয়টি ইউনিট করা হয়েছে। এর পাঁচ নম্বর ইউনিটের কালেকশন করেন আব্দুর রব হাওলাদার ও জাহাঙ্গীর। গভীর সাগরে মাছ আহরণকারী কুয়াকাটা-আলীপুর ট্রলার মৎস্য মালিক সমিতির সভাপতি ও লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, খুঁটা জেলেরা তার কাছেও এমন অভিযোগ করেছেন।
×