ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায় সি আর দত্ত

প্রকাশিত: ২১:০২, ২৮ আগস্ট ২০২০

বিদায় সি আর দত্ত

মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখসারির বীর সেনানী ৪ নং সেক্টর কমান্ডার চিত্তরঞ্জন দত্ত আর নেই। ৯৩ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এই লড়াকু ব্যক্তি আজীবন সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম আর আদর্শের অনুবর্তী হয়ে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করাই শুধু নয়, দেশপ্রেমের অনন্য চেতনায় নিজেকে প্রতিনিয়ত শাণিত করেছেন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধে বীরত্বের পরিচয় দেন। অসম সাহসিকতায় সমরাঙ্গনে লড়াই করার পুরস্কারও লাভ করেন তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে। উদ্দীপ্ত দেশাত্মবোধের চেতনায় সৈনিক জীবনের বর্ণাঢ্য যাত্রাপথ রণাঙ্গনের ইতিহাসের এক অকৃত্রিম যোদ্ধার আসনে অভিষিক্ত করেছে। এর পরের ঘটনা বাংলাদেশের বহু কাক্সিক্ষত স্বাধীনতার সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের দুরন্ত পথযাত্রায় সি আর দত্ত ৪ নং সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্বে থেকে সর্ববিধ লড়াকু কর্মযোগকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে সমর্থ হন। বেঁচে থাকা সহযাত্রীরা শোকসন্তপ্ত হৃদয়ে সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ করেছেন। ধর্মনিরপেক্ষতাও ছিল তার মর্মমূলে গাঁথা। আদর্শের মাপকাঠিতে এই লড়াকু ব্যক্তি ছিলেন এক অপরাজেয়, অকুতভয় আপোসহীন সৈনিক। তিনি বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রথম মহাপরিচালক। মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসিকতার জন্য ‘বীর উত্তম’ খেতাব পাওয়া এই রণনায়ক স্ত্রী বিয়োগের পর চলে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্তানদের কাছে। নিউইয়র্কে থাকতেন পারিবারিক আবহে। তার শেষ কৃত্য মাতৃভূমিতে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় হওয়ার কথা। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে অভিভূত হওয়া সি আর দত্তের মুক্তিযুদ্ধে যুক্ত হবার মূল প্রেরণা। হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের অনন্য লড়াইয়ে নিজেদের রণাঙ্গনে সি আর দত্ত সম্মুখসারির নেতৃত্ব ও দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট এবং বিআরটিসির চেয়ারম্যানের পদও অলঙ্কৃত করেন। মেজর জেনারেল হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম গঠনের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেরিয়েছেন তিনি। চির বিদ্রোহের চেতনায় শাণিত হয়ে কোন অশুভ শক্তিকে মানতে পারেননি কোন দিন তিনি। তিনি সব সময় অদম্য মনোবলে দেশের চিহ্নিত শত্রুদের বিরুদ্ধে অসম তেজে সোচ্চার হতে কখনও দ্বিধা করেননি। এমন দেশপ্রেমিক যোদ্ধার মৃত্যু হয় না। চিরঞ্জীব চেতনায় অনুপ্রাণিত করা এই লড়াকু ব্যক্তি চিরস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন দেশ এবং জাতির কাছে। তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি রইল সমবেদনা।
×