ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিহির রঞ্জন তালুকদার

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি

প্রকাশিত: ২৩:৫০, ২৭ আগস্ট ২০২০

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ও প্রভাষক-বালাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, সিলেট। মোবাইল : ০১৭১২৪৮৭৪৪৮ সুপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় তোমাদের জন্য আজ থাকছে প্রথম অধ্যায় থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আশা করি পত্রিকায় প্রকাশিত আলোচনাগুলো তোমাদের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করা ছাড়াও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে অধিক জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করবে। যেহেতু এটি একটি টেকনিক্যাল বিষয় সেজন্য প্রতিটি বিষবস্তু বাংলা শব্দের সাথে সাথে ইংরেজি শব্দও জানতে হবে। যদিও অধিকাংশ শব্দই ইংরেজি তারপরও কোনো কোনো সময় দেখা যায় তোমরা কনফিউশনে থাক যেমন- আমি যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কথা বলি যে বিষয়টি ক্লাসে তোমাদেরকে পড়ানো হয়েছে এবং তোমরা ভালোভাবেই পার। পরীক্ষায় গিয়ে দেখলে তোমাদের প্রশ্ন আসছে অৎঃরভরপরধষ ওহঃবষষরমবহপব কী? অথবা সংক্ষিপ্ত আকারেও আসতে পারে অও কী? তোমাদের উত্তর জানা সত্ত্বেও তোমরা লিখতে পার না। কারন তোমাদের পড়ানো হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী? এখন পরীক্ষায় আসছে অও কী? অও ই হচ্ছে অৎঃরভরপরধষ ওহঃবষষরমবহপব এর সংক্ষিপ্তরূপ এবং এর বাংলাই হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কাজেই তোমরা পড়ার সময় সমনযোগ সহকারে বিষয়গুলো আয়ত্তে আনতে হবে। মনে রেখ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি যদিও সবার জন্য অবশ্যিক কিন্তু এটি বিজ্ঞানের অংশ তাই প্রতিটি লাইনই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বগ্রাম (Global Village) : বিশ্বগ্রাম হলো এমন একটি পরিবেশ যেখানে পৃথিবীর সকল মানুষ একক সমাজে বসবাস করে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একে অপরের সেবা প্রদান করে থাকে। অর্থাৎ তথ্য প্রযুক্তির ফলে গোটা পৃথিবীটাকেই একটি গ্রাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার মেরুদ- হচ্ছে কানেকটিভিটি। কানাডিয়ান দার্শনিক ও লেখক হারবার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (McLuhan) হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ শব্দটিকে সকলের সামনে তুলে ধরেন। ১৯৬২ সালে তাঁর প্রকাশিত ‘The Gutenberg Galaxy: The Making of Typographic Man’ বইয়ের মাধ্যমে এ বিষয়টি প্রকাশ করেন। বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার উপাদানসমূহ: ১.কম্পিউটার/মোবাইল ২. প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার ৩.কানেকটিভিটি/ ইন্টারনেটসংযুক্ততা ৪.মানুষের জ্ঞান বা সক্ষমতা ৫.ডেটা বিশ্বগ্রাম (Global Village) এর সুবিধাসমূহ : বিশ্বগ্রামের সুযোগ-সুবিধা মূলত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ সুবিধাগুলোকেই বুঝানো হয়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- * দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশ্বের যেকোনো স্থানের যে কোনো ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা যায়। * যেহেতু যেকোনো সময় যে কোনো দেশের যে কোনো ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা যায় ফলে ভৌগোলিক দূরত্ব কমে যায়। * বিভিন্ন দেশ এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যায়। বিশ্বগ্রাম (Global Village) এর অসুবিধাসমূহ: বিশ্বগ্রামের অসুবিধা মূলত তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলোকেই বুঝায় যেমন- * মিথ্যা তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। * পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে সামাজিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হয়। * প্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয় ইত্যাদি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) বা অও: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো মানুষের বুদ্ধি অর্থাৎ চিন্তাভাবনাগুলোকে কৃত্রিম উপায়ে কোনো যন্ত্রে বা কম্পিউটারে কাজ করানো। অর্থাৎ মানুষ যেভাবে চিন্তাভাবনা করে, বুদ্ধি কাটিয়ে কোনো কাজ করতে পারে ঠিক কোনো যন্ত্র/কম্পিউটারের মাধ্যমেও যখন একই কাজ করানো হয় তখন থাকে বলা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স’ শব্দটির সাথে সর্বপ্রথম সকলকে পরিচয় করিয়ে দেন ঔড়যহ গপঈধৎঃযু. কিন্তু আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্সের জনক বলা হয় বিজ্ঞানী অ্যালান টুরিং (Alan Turing) কে। তার করা টুরিং টেস্ট আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্সের ভিত্তি স্থপান করে। টুরিং টেস্ট হচ্ছে এমন একটি পরীক্ষা যার মাধ্যমে বুঝা যায় কোনো যন্ত্রের/কম্পিউটারের চিন্তা করার ক্ষমতা আছে কি-না? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ব্যবহৃত প্রোগ্রমিং ভাষাগুলো হলো- খওঝচ, চজঙখঙএ, ঈ/ঈ++, ঈখওঝচ, ঔধাধ ইত্যাদি। (বি: দ্র প্রায়সময়ই বহুনির্বাচনী অংশে এখান থেকে প্রশ্ন থাকে। কাজেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রাগ্রমিং ভাষাগুলো মনে রাখতে হবে।) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জ্ঞানের ক্ষেত্রসমূহ (Domains of AI) : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় জ্ঞানের ক্ষেত্রসমূহকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। ১. বুদ্ধিবৃত্তিক বিজ্ঞান ২. রোবটিক্স ৩. ন্যাচারাল ইন্টারফেস। ১. বুদ্ধিবৃত্তিক বিজ্ঞান : বুদ্ধিবৃত্তিক বিজ্ঞান-এর অংশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- লার্নিং সিস্টেম, ফাজি লজিক, নিউরাল নেটওয়ার্ক, এক্সপার্ট সিস্টেম ইত্যাদি। লার্নিং সিস্টেম : লার্নিং সিস্টেম আবার চারটি উপাদান নিয়ে গঠিত। এগুলো হলো- ১. লার্নিং এলিমেন্ট ২. পারফরমেন্স এলিমেন্ট ৩. ক্রিটিক এবং ৪. প্রবলেম জেনারেটর। ফাজি লজিক : ফাজি লজিক হলো এক ধরনের লজিক, যা সাধারণ সত্য এবং মিথ্যা মানগুলোর চেয়েও বেশি কিছু শনাক্ত করতে পারে। নিউরাল নেটওয়ার্ক : নিউরাল নেটওয়ার্ক হলো এক ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যা মানব মস্তিষ্ক যে উপায়ে কাজ করে সে রকমি করতে পারে। এক্সপার্ট সিস্টেম (Expert System) : আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্সে ব্যবহৃত বুদ্ধিবৃত্তিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় হলো এক্সপার্ট সিস্টেম। এক্সপার্ট সিস্টেম হলো একটি প্যাকেজ সফটওয়্যার যা সুসংগঠিত তথ্য ব্যবহার করে কম্পিউটারকে কোনো বিষয়ে দক্ষ বা বিশেষজ্ঞ করে তুলে। যেমন ক্যাডুলাস এবং মাইসিন নামক এক্সপার্ট সিস্টেম থেকে ডাক্তাররা চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিল সমস্যার কথা জেনে নিতে পারে। এক্সপার্ট সিস্টেম গঠনে সহায়তাকারী উপাদানগুলো হলো-নলেজ বেজ (Knowledge Base) এবং সফটওয়্যার রিসোর্স। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার : * জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে। উদাহরণ: ম্যাকসিমা * চিকিৎসা ক্ষেত্রে। যেমন-মাইসিন * কাস্টমার সার্ভিস প্রদানে। যেমন- অঁঃড়সধঃবফ ড়হষরহব ধংংরংঃধহঃং * বিনোদন ও গেম ( যেমন-দাবা) খেলায়। * আদালতের বিচারকার্য পরিচালনা, রায় প্রদানের সিদ্ধন্ত গ্রহণ ইত্যাদি কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। মানব বুদ্ধিমত্তা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মধ্যে পার্থক্য আশা করি তোমরা নিজেরাই বানিয়ে লিখতে পারবে। যদি সমস্যা হয় তোমাদের প্রতিটি বইয়ে সুন্দর করে দেয়া আছে। পড়লেই পারবে। মনে রেখো প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ করা ভালো শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্য।
×