ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রে-হাউন্ড এবং টম হ্যাকন্স

প্রকাশিত: ২৩:৩৫, ২৭ আগস্ট ২০২০

গ্রে-হাউন্ড এবং টম হ্যাকন্স

কি রহস্য আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে? কেউ বলে আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝখানে এক মহাদেশের অবস্থান ছিল, কল্পনাতীত উন্নত প্রযুক্তির অধিকারী ছিল তারা, ট্রেজার হান্টাররা সাগরের তলদেশে অঢেল সম্পদের কথা বলেন। এবারের গল্প সাগরের দানবদের নিয়ে। তবে সেই দানব কোন পৌরাণিক কাহিনীর নয়, মানুষেরই সৃষ্টি! কথায় আছে সাগরে রাজত্ব যার বিশ্ব তার! সাগরের এই গল্পটা ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার। ইউরোপ জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জার্মানদের প্যানজার ট্যাংক, রোমেলের মতো জেনারেলরা এনে দিচ্ছে একের পর এক জয়। এদিকে ইউরোপের দেশগুলোর সরকার প্রধানরা কোনরকম সাদা পতাকা উড়িয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ব্রিটেনে। দ্বীপরাষ্ট্র হওয়ায় ব্রিটেনকে কব্জা করতে পারেনি হিটলারের জার্মানি। ব্রিটেনের বিরুদ্ধে নিজেদের বিমান এবং নৌবাহিনী লেলিয়ে দেয় হিটলার। এদিকে মিত্রশক্তি হিটলার এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে এক জোট হয়। ইউরোপ তখন নাৎসীদের কব্জায়। আফ্রিকাতেও যুদ্ধ চলছে। প্রশান্ত এবং ভারতীয় উপমহাদেশেও জাপানীরা মিত্রশক্তিকে কচুকাটা করছে। ইউরোপের শেষ ভরসা ব্রিটেন। সেখানে রসদ পাঠাতে হবে। কিন্তু সারা দুনিয়াতেই যুদ্ধ। এ অবস্থায় সব থেকে বেশি এগিয়ে আসল আটলান্টিকের ওপারের দেশ আমেরিকা আর কানাডা। যুদ্ধাস্ত্র থেকে খাদ্য থেকে শুরু করে প্রায় সব কিছু ব্রিটেনে পাঠাতে শুরু করে। যে কোন মূল্যে তাদের পতন ঠেকাতে হবে। কারণ ব্রিটেনের পতন মানে ২য় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের এক রকম জয়। তাছাড়া ব্রিটেন জয় করতে পারলে হিটলার যে আটলান্টিকের ওপারেও উঁকি মারতে শুরু করবেন। মার্কিনীরা ব্রিটেনে জাহাজ বোঝাই করে নানান রসদ পাঠাতো। আর এসব জাহাজ হয়ে দাঁড়ায় হিটলারের সাবমেরিন। এক একটা জাহাজে যে পরিমাণ খাদ্য থাকে সেটা দিয়ে হয়তো গোটা ব্রিটেনকে সপ্তাহখানেক খাওয়ানো যাবে, একটা জাহাজের অস্ত্র দিয়ে হয়তো সপ্তাহখানেক যুদ্ধ চালাতে পারবে ইউরোপের দেশগুলো। আর তাই এসব জাহাজ আটলান্টিকের অতল গহ্বরে পাঠাতে পারলে জার্মানির লাভ যোজন যোজনে। আটলান্টিকের অতল গহ্বরের নাৎসী সাবমেরিন হয়ে উঠে এক একটা দানব। গ্রে-হাউন্ড সিনেমার গল্প গড়ে উঠেছে এই বহরটির ব্ল্যাক-পিটে এই বহর এবং জার্মান ইউবোটের নৌযুদ্ধের কাহিনী নিয়ে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সঙ্গী সাথীদের একের পর এক গ্রাস হতে দেখে গভীর হিমশীতল সমুদ্রের মাঝে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে গ্রে-হাউন্ড। তারপর গ্রে-হাউন্ড কি পারবে নিজের মিশন শেষ করতে? নাকি সেও পরিণত হবে জলের তলায় ঘাপটি মেরে থাকা দানবের শিকারে? এদিকে পরিবার পরিজন থেকে দূরে থাকা এবং সারাদিন ছোট্ট একটা জায়গায় অবদ্ধ থাকা নাবিকেরা স্বাভাবিকভাবেই মানসিকভাবে দুর্বল থাকেন। অনেকের ওপর দিয়ে রীতিমতো ঝড় বয়ে যায়। গ্রে-হাউন্ডর ক্রুদের জন্য এটা প্রথম মিশন। প্রথম যাত্রাতেই অকল্পনীয় বিপদ তাদের সামনে। ২য় বিশ্বযুদ্ধে আটলান্টিক পাড়ি দেয়া মার্কিন নাগরিকদের উপজীব্য করে মার্কিন-মিসরীয় লেখক সি এস ফরেস্টারের লেখা দ্যা গুড শেপারড উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে গ্রে-হাউন্ড সিনেমা নির্মিত হয়েছে। হুবুহু কোন সত্য ঘটনাট চিত্রায়ন না হলেও আটলান্টিক পাড়ি দেয়া সব জাহাজের বহর আর তাদের নাগরিকদের গল্পের প্রতিচ্ছবি এই সিনেমা। শান্তশিষ্ট সাদাসিধে ন¤্র অথচ নির্ভীক এই নাবিকের চিত্রায়ন করেছেন টম হ্যাকন্স। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে এই লোকটার চোখে যুদ্ধের সেই আগ্রাসী ভাবটা নেই। অথচ কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে এই সরল লোকটিই হয়ে উঠে শত্রুর জন্য ভয়ানক। সহকর্মী বা বন্ধুর মৃত্যু যে মানুষকে কত দ্রুত বদলে দিতে পারে তা চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেম টম। শুধু যুদ্ধ নয়, যুদ্ধের সময় একজন কমান্ডার এবং তার নাবিকদের যে ভয়ানক মানসিক অবস্থার ভেতর দিয়ে যেতে হয় সেটিও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। টম হ্যাংকস নিজে এই মুভির স্ক্রিনপ্লে লিখেছেন। আর শুটিং আর স্ক্রিনপ্লে মিলে টম এই সিনেমার পেছনে সময় দিয়েছেন ১০ বছর! জুন মাসের শুরুতে যুদ্ধের এই সিনেমা যখন মুক্তি পাচ্ছে তখন অভিনেতা টম হ্যাংকস আরেক যুদ্ধ জয় করে ফিরেছেন! সন্ত্রিক করোনা যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে তখন তারা বাড়িতে সময় কাটাচ্ছেন। ৮৮ মিনিটের এক সিনেমাটি দিয়ে কালজয়ী এই অভিনেতা আরেকবার প্রমাণ করলেন সিনেমা পাড়ার গলিতে তার দেয়ার মত এখনও অনেক কিছুই বাকি এবং আলা-ভোলা ফরেস্ট গাম্প থেকে শক্ত চেহারার ক্যাপ্টেন যে কোন চরিত্রেই তিনি মানিয়ে নিতে পারেন।
×