ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

কবে ঘুরছে সিনেমা হলের রিল!

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ২৭ আগস্ট ২০২০

কবে ঘুরছে সিনেমা হলের রিল!

বর্তমান সময়ের জীবনযাপন দেখলে বোঝা মুশকিল করোনাভাইরাস নামক কোন জীবনঘাতী অনুজীবের অস্তিত্ব আমাদের দেশে আছে! একে একে সবই স্বাভাবিক হতে চলেছে... এখন কেবল বিগত কয়েক মাসের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার পালা। কিন্তু মানুষ যে কেবল কাজের জন্য বাঁচে না কিংবা ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্যও নয়। আরও অনেক কিছুর জন্য বাঁচে! নিজের বা হৃদয়ের জন্য মানুষের বেঁচে থাকাটা সব থেকে গুরুত্বের। সুচিত্তের জন্য চিত্ত বিনোদনের কোন বিকল্প নেই। তার পরও জীবন ধারণের সব বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হলেও এই বিষয়টা কেন জানি শিথিলের পর্যায়ে রয়েছে, এখনও। বিশেষ করে দেশীয় সংস্কৃতি চর্চায় আমাদের মনোযোগ যেভাবে হারিয়েছে, তাতে করে পূর্বের যে কোন সময়ের থেকে গুরুতর বলা যেতে পারে। হয়ত কোনভাবেই আমরা এর গুরুত্ব অনুধাবন করছি না। সব বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা দেখা গেলেও নিজেদের আত্মপরিচয়ের বিষয়টা কি আমরা ভুলতে বসেছি! একে একে বিনোদনের সব ক্ষেত্রে স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, সিনেমা, মঞ্চনাটক এবং সঙ্গীতাঙ্গনে দিনের পর দিন যে শূন্যতা তৈরি হচ্ছে তাতে করে ভবিষ্যতে এই বিষয়গুলো আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেয়া মুশকির হয়ে পরবে। এমনিতে বছর বছর আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের যে বেহাল দশা দেখা দিয়েছে তার মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রভাব আমাদের আরও পিছিয়ে দিয়েছে। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে ঢাকাসহ সারাদেশের সিনেমা হল বন্ধ করে দেয়া হলেও ভাবা হয়নি বা করা হয়নি বিকল্প কোন কাজ। অন্যরা যা করেছে। এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি কবে নাগাদ খুলবে সারাদেশের বিনোদন কেন্দ্র বা সিনেমা হল। কবে নাগাদ থিয়েটার হলের টিকেট বিক্রি হবে অথবা কবে থেকে মঞ্চে শিল্পীরা উঠে দর্শক মাতাবেন পারবেন। এই বিষয়গুলো আমাদের সামনে এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সিনেমা হল খোলার বিষয়ে কথা বলেছিলাম, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি এবং মধুমিতা সিনেমা হলের স্বত্বাধিকারী ইফতেখার উদ্দিন নওশাদের সঙ্গে। জানতে চেয়েছিলাম সারাদেশে হল খোলার সিদ্ধান্তের বিষয়ে, এ ব্যাপারে তিনি আনন্দকণ্ঠকে বলেন, আমরা তো চাই দ্রুত সারাদেশের সিনেমা হল খুলে দেয়া হোক। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে চাই। কারণ, খুব তাড়াতাড়ি এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না নিলে আমাদের দেশের মানুষের হলে গিয়ে সিনেমা দেখার যে অভ্যাস তা হয়ত হারিয়ে যাবে। একবার এই অভ্যাস বদলে গেলে পুনরায় তৈরি করা কষ্টকর হবে। এমনিতেই দিন দিন আমাদের সিনেমার যে প্রডাকশন দাঁড়িয়েছে- তাতে করে বিষয়টা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। তবে হল খুললেই যে সমস্যার সমাধান হবে তা কিন্তু নয়। সপ্তাহান্তে নতুন সিনেমা না দিতে পারলে কাজের কাজ হবে না। তাই প্রয়োজকদের সঙ্গেও কথা বলতে হবে যে, তারা এখনই বড় বড় বাজেটের সিনেমা হলে তুলবেন কি না। কারণ, নতুন সিনেমা ছাড়া পুরনো সিনেমা দিয়ে হল চালানো সম্ভব নয়। এমনিতেই সারা বছর লেকসান গুনতে হয়। আর একটা পথ হচ্ছে যে, হল খুলে বিদেশী সিনেমা চালানোর অনুমতি দেয়া। সেটা যে কোন দেশের যে কোন সিনেমা হাতে করে। অনন্ত দর্শকদের অভ্যাসটা বহাল থাকুক। অবশিষ্ট সিনেমা হলগুলো বেঁচে থাকুক। আপনারা হয়ত জানেন এই মহামারীর প্রকপে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবশিষ্ট যে সিনেমা হল ছিল তারও বেশ কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি জানিয়েছেন, বন্ধ থাকা সিনেমা হল পুনরায় চালু করতে আর্থিকসহ নীতিগত সহায়তা দেয়া হবে। প্রয়োজনে বিশেষ তহবিল গঠনের কথাও বলেছেন। অন্যদিকে চিত্র পরিচালক এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরাও চাই খুব তাড়াতাড়ি সিনেমা হলগুলো খুলে দেয়া হোক। এক্ষেত্রে সরকারকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। কেননা, এই মুহূর্তে হল খুলে দেয়া হলে আমি কিন্তু আমার তিন কোটি টাকা ব্যয়ের সিনেমা ‘আগুন’ মুক্তি দেব না তেমনি অন্য প্রযোজকরাও তাদের বড় বাজেটের সিনেমা হলে তুলবে না সে ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র শিল্প টিকিয়ে রাখতে এবং দর্শকদের সিনেমা দেখার অভ্যাস বহাল রাখতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। যেমন পরিবহনগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে দুই সিটের ভাড়া নিলেও সিনেমার বেলায় তা কিন্তু সম্ভব নয়। কাজেই সহযোগিতা আবশ্যক। আর্থিক সহযোগিতা। আমরা আপাতত একটু সহযোগিতা পেলে খুব তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়াতে পারব। সম্প্রতি আপনারা হয়ত জানবেন যে, চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য যত পদক্ষেপ নেয়া দরকার তার সবটাই আমার নিয়েছি, আঠারও সংগঠন এক হয়ে। পূর্বের যে অনিয়ম শিল্পী এবং চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা একে অপরের সঙ্গে করতে তা সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। এখন দরকার কেবল ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ। চলচ্চিত্র এবং অনান্য বিনোদনের মধ্যগুলো স্বাভাবিক করতে এখনও সব মহলে একটা দিধা কাজ করছে কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না কবে নাগাদ সাধারণদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে দেশের বিনোদন কেন্দ্র গুলো। সিন্ধান্ত নিতে কালক্ষেপন করলে, ভবিষ্যতে হয়তো আমরা আরও পিছিয়ে যাবো। নিজস্ব্য সংস্কৃতি চর্চায়। এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
×