ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলায় রূপ পাচ্ছে পুলিশের আট আইন

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ২৭ আগস্ট ২০২০

বাংলায় রূপ পাচ্ছে পুলিশের আট আইন

আজাদ সুলায়মান ॥ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০০ বছরের পুরনো বিট্রিশ পুলিশ আইন বাংলায় রূপ দেয়া হচ্ছে। বছর দুয়েক আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সংস্কার করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এই জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদিও কমিটি কয়েকটি বৈঠক ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি। নানা চেষ্টা করেও দীর্ঘ দুই বছরেও বিট্রিশ আমলের ৮টি আইন বাংলায় রূপান্তরিত করতে পারেনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। তবে কমিটি আশা করছে আগামী মাতৃভাষা দিবস সামনে রেখে বাংলায় আইন সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হবে। করোনা মহামারীর প্রকোপ কমে আসলে কাজটি সম্পন্ন করা হবে। এ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির প্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পুলিশ) ড. হারুন অর রশীদ বলেন, ব্রিটিশ আইনের কয়েকটি ধারা বাংলা করার কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছে কমিটি। করোনা মহামারীর আগে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছিল। পরিস্থিতি ঠিক হলে আরও কয়েকটি বৈঠক হবে। আশা করি আগামী মাতৃভাষা দিবসে আইনগুলো বাংলায় রূপান্তরিত করা সম্ভব হবে। অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুুলিশের ব্রিটিশ আমলের আইনের কয়েকটি ধারা বাংলা করলে হবে না। পুরো আইনটিই সংশোধন হলে সবার জন্য ভাল হবে। এই জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশ চাচ্ছে আইনটি সংশোধন হোক। আর রাজনৈতিক নেতারা চাচ্ছেন না হোক। এসব চাওয়া বা না চাওয়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পুলিশ স্বাধীন হলে একদিকে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বা উন্নতি হবে, পাশাপাশি পুলিশকে রাজনৈতিক কাজ থেকে দূরে রাখা হবে। তাছাড়া পুলিশের কাজের জবাবদিহি অনেকাংশ বেড়ে যাবে এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা দ্রুত আইনের আওতায় আসবে। ইংরেজী ভাষায় চলে আসছে পুলিশের আইন। কিন্তু বিট্রিশ আইন সংস্কার না হলেও ৮টি আইন বাংলায় রূপ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ১৮৬১ সালের আইনটি পুলিশ সংশ্লিষ্ট আইন ও অধ্যাদেশের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ সৃষ্টির অধ্যাদেশও আছে। এসব আইন ও অধ্যাদেশ পুলিশ সদর দফতর থেকে বাংলা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে খসড়া হিসেবে পাঠানো হয়েছে। এই জন্য সরকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. হরুন উর রশিদ বিশ্বাসকে প্রধান করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন, সিনিয়র সহকারী সচিব ফারজানা জেসমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল মামুন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাসহ আরও একজন। কমিটি একাধিকবার বৈঠক করেছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বছর তিনেক আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল পুলিশের এ্যাক্ট ও অধ্যাদেশগুলো ইংরেজী থেকে বাংলায় রূপান্তর করতে। আদেশ পেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় পুলিশ সদর দফতরকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়। পুলিশ সদর দফতরও খসড়া পাঠায় মন্ত্রাণালয়ে। পরে কমিটি ৮টি আইন বাংলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। যে আইন ও অধ্যাদেশ বাংলায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে- তাহলো- দ্য পুলিশ এ্যাক্ট ১৮৬১, দ্য পুলিশ (ইনসাইটমেন্ট টু ডিজাফেকশন) এ্যাক্ট ১৯২২, দ্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬, দ্য পুলিশ অফিসারস (স্পেশালপ্রভিশনস) অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬, দ্য চিটাগাং মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৮, দ্যা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অর্ডিন্যান্স ১৯৭৯, দ্য খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৮৫ এবং দ্যা পুলিশ (নন-গেজেটেড এমপয়ি) ওয়েলফেয়ার ফান্ড অর্ডিন্যান্স ১৯৮৬। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর তৎকালীন সরকার ১৮৬১ সালে এই উপমহাদেশে প্রথম পুলিশ আইন তৈরি করে। উপমহাদেশ থেকে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় এবং ব্রিটিশদের বাণিজ্যিক স্বার্থ সংরক্ষণের হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করা হয় পুলিশ বাহিনী। ওই বাহিনী দিয়েই ব্রিটিশরা ৮৬ বছরের বেশি তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও লালন-পালন করেছে। ১৮৮৪ সালে বেঙ্গল পুলিশ ম্যানুয়াল নামে পুলিশের প্রথম প্রবিধিমালা প্রকাশ করে। তবে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৫ ও ১৯৪৩ সালে আরও দুই দফায় পুলিশ আইনটি সংশোধন করে। তারপর থেকে আরও সংশোধন হয়নি। তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ আইনের ধারা বাংলা করলেই সবকিছু সমাধান হবে না। আইনটি সংস্কার করা জরুরী। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের কাছে আকুতি জানাচ্ছি ব্রিটিশআইনটি সংস্কার করতে। কিন্তু করা হচ্ছে না। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও চেষ্টা হয়েছিল। ওই সময় পুলিশ অধ্যাদেশ ২০০৭’ নামে নতুন আইনের খসড়াও প্রস্তুত করা হয়েছিল। ওই সময় একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটিগুলোর দেয়া প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তাব তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। জানতে চাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিমিনোলজি এ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক উমর ফারুক বলেন, ব্রিটিশ আমলের আইনটি সংশোধন করা উচিত। এতে দেশের মানুষের উপকার হবে। হয়রানি ও দুর্নীতির কারণে পুলিশের ওপর জনগণের আস্থা কম। তবে আগের চেয়ে পুলিশ ভাল কাজ করছে। তারা পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আইনটি সংশোধন করা জরুরী।
×