ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাসুমা সিদ্দিকা

নিত্যদিনের দুর্ভাবনা

প্রকাশিত: ২১:০৬, ২৭ আগস্ট ২০২০

নিত্যদিনের দুর্ভাবনা

বছরের পর বছর গণপরিবহন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে আমাদের দুর্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছে, কখনও এটি মানুষকে মারছে আবার কখনও বা পরিবহন শ্রমিকরা যাত্রীদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করছেন। আর বর্তমান সময়ে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নামে তা ভঙ্গের ব্যাপার। সাধারণ যাত্রীরা অনেকটা নিরুপায় হয়েই এই গণপরিবহনগুলোতে উঠতে বাধ্য হন। আর নীতি নির্ধারকরাও যেন এ ব্যাপারে অনেকটাই উদাসীন। দীর্ঘ করোনা চলাকালীন কিছুটা ভীত হয়ে অনেকে এই বাস- মিনিবাসে ওঠা এড়িয়ে চলেছেন ঠিকই কিন্তু বর্তমান সময়ে সব অফিস-আদালত শুরু হওয়ায় সাধারণ যাত্রীদের আর উপায় থাকছে না গণপরিবহন এড়িয়ে অন্য কিছুতে যাতায়াত করার। তাই তারা প্রাণের ভয় নিয়েও উঠছেন এই গণপরিবহনগুলোতে। তবে প্রথম দিকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অর্ধেক যাত্রী ওঠানো হলেও বর্তমানে আবার সেই আগের গাদাগাদির চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করছেন। এই করোনাকালে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসে উঠতে হবে, আর সেজন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনকে বাস মালিকদের ভর্তুকি দিতে হবে যেন তারা অর্ধেক সিটে যাত্রী নেবার পরও তাদের ক্ষতিটা না হয় বা ক্ষতির অজুহাতে তারা অনিয়ম করতে না পারেন। কেননা দেশের অধিকাংশ মানুষই যদি করোনা সংক্রমিত হয়, তবে আমাদের দেশের অবস্থা যে কী হবে তা সহজেই অনুমেয়। অর্ধেক সিটে যাত্রী নেবার জন্য প্রচুর মানুষজন ভোগান্তিতে পড়বেন কিন্তু করোনাকালে তো আর সেটা ছাড়া গত্যন্তর নেই। আর বাসের ওপর চাপ কমানোর জন্য, মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজনে বিভিন্ন অফিস ৫০ ভাগ করে চলতে পারে- সপ্তাহের তিনদিন ৫০ ভাগ কর্মকর্তা- কর্মচারী আর বাকি দিনগুলোতে বাকি ৫০ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিস করবেন। এভাবে হলেও তো পরিবহনের ওপর চাপ কমবে আর মানুষজনেরও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা কিছুটা হলেও সম্ভব হবে। আর তা না করে যদি সপ্তাহের প্রতিটি দিনই পুরোপুরি জনবল নিয়ে অফিস চলতে থাকে তবে তো পরিবহনে চাপ বাড়বে বৈ কমবে না। এছাড়া বর্তমান ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে পুরোপুরি জনবল নিয়ে অফিস কোনভাবেই ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সড়ক দুর্ঘটনাগুলোকে আমরা অনেকে দুই ধরনের চরমপন্থামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে থাকি। আমরা অনেকে এটিকে কেবলই দুর্ঘটনা বলে মেনে নিই এবং এতে মানবীয় ভুলের দিকগুলো অগ্রাহ্য করি। আবার অনেকে সড়ক দুর্ঘটনাকে সবসময় পুরোপুরি অপরাধের মতো দেখে কোনকিছু বাছ-বিচার না করেই ড্রাইভার বা পরিবহন শ্রমিকদের গণধোলাই দিতে উদ্যত হই। যার ফলে দেখা যায় দুর্ঘটনা ঘটলেই তারা পালানোতেই ব্যস্ত থাকেন এবং এর ফলে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকে। এ ধরনের একটি অতি সরলীকরণ কোন সভ্য সমাজে কাম্য হতে পারে না। প্রতিটি ঘটনাকেই তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করা উচিত। আর দুর্ঘটনার পরপরই চালক বা পরিবহন শ্রমিককে গণধোলাইয়ের মারাত্মক প্রবণতা তাদেরকে আরও পলায়নপর করে তোলে এবং এতে মূল সমস্যা আরও বেড়ে যায়। বর্তমানে আমরা এক চরম জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। একদিকে যেমন জীবিকার তাগিদ, স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ব্যাপক প্রয়াস, অন্যদিকে জীবনের ঝুঁকি করোনার ছোবল। এই পরিস্থিতি আমরা যেন খুব ভালভাবে কাটিয়ে উঠতে পারি সেজন্য সরকারকে অবশ্যই উদ্যোগ নিতে হবে এবং পাশাপাশি জনগণকেও সাবধান থাকতে হবে যেন এই গণপরিবহনগুলো আমাদের মৃত্যুফাঁদ না হয়, যাত্রী-শ্রমিক যেন পরস্পরের প্রতিপক্ষ না হন। কল্যাণপুর, ঢাকা থেকে
×