ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেউ কথা রাখে না

প্রকাশিত: ২১:০৫, ২৭ আগস্ট ২০২০

কেউ কথা রাখে না

বাংলাদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর কয়েক মাস গণপরিবহন বন্ধ ছিল। ঐ সময় পরিবহন শ্রমিকদের খুব কষ্ট হয়েছে। শ্রমিক কল্যাণের নামে শ্রমিক সংগঠনের যে সব নেতারা শ্রমিকদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেছে, দুর্যোগকালে শ্রমিকদের কল্যাণে তাদের এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। আবার শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে আজ যারা পরিবহনের মালিক হয়েছেন তাদেরও কিছু করতে দেখা যায়নি। এমতাবস্থায় শ্রমিকরা সরকারের কাছে দাবি জানাল, পরিবহন খুলে দিলে তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চালাবে। মালিকরাও পিছন থেকে সমর্থন করল। মানবিক দিক বিবেচনা করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে সরকার গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিল। প্রধান শর্ত ছিল বাসের মোট আসনের অর্ধেক সিট খালি রেখে গাড়ি চালাতে হবে। এতে ওদের লোকসান হয়, তাই ভাড়া ষাট শতাংশ বৃদ্ধি করা হলো। যদিও যাত্রীদের অভিযোগ আছে কোন কোন ক্ষেত্রে ভাড়া আশি থেকে একশ শতাংশ বেশি আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু প্রধান শর্তটিই মানা হচ্ছে না। অর্থাৎ অর্ধেক সিট ফাঁকা রাখা হচ্ছে না। প্রথম কয়েকদিন ঠিক থাকলেও এখন সেই চিরচেনা দৃশ্য। গাদাগাদি ঠেলাঠেলি করে গণপরিবহনে চলাচল। যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাও নিশ্চিত হচ্ছে না, আবার ভাড়াও গুনতে হচ্ছে বেশি। শ্রমিক-মালিক কেউ কথা রাখল না। সরকার যেহেতু অফিস-আদালত, মিল-কল কারখানা খুলে দিয়েছে, তাই জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ভিড়ের গাড়িতে উঠতে বাধ্য হচ্ছে। এর অর্থ এই নয় যে, করোনার প্রকোপ কমে গেছে বা চলে গেছে। বরং এই মুহূর্তে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি। তবে মানুষের মন থেকে ভয় চলে গেছে। করোনা নিয়ে মানুষ এখন আর আগের মতো আতঙ্কগ্রস্ত ও উদ্বিগ্ন নয়। না খেয়ে থাকার ভয়টাই বেশি। পেটের দায়ে মানুষ ছুটছে। এই ছুটে চলা মানুষদের মধ্যে অদৃষ্টবাদে বিশ্বাসীরা নিজেদের ভাগ্যের হাতে সঁপে দিয়েছেন। আর যুক্তিবাদীরা যতটা সম্ভব সাবধানে চলার চেষ্টা করছেন এবং হার্ড ইমিউনিটির কথা ভাবছেন। আসল কথা হলো করোনার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে একে সঙ্গে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। করোনার কার্যকর ভ্যাকসিন কবে আসবে তা আমরা জানি না। এলেও তা দেশের প্রায় সতেরো কোটি জনসংখ্যার প্রত্যেকের জন্য নিশ্চিত করতে কত সময় লাগবে তাও আমরা জানি না। আবার অনন্ত সময়ের জন্য সবকিছু বন্ধ করে মানুষকে ঘরে থাকতে বাধ্য করাও সম্ভব না। তাই প্রয়োজন ছিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে অতি প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন কাজগুলো চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু একদিকে কিছু মানুষ যেমন চরম অসচেতনার পরিচয় দিচ্ছে, অন্যদিকে অতি মুনাফালোভী পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে এবং স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাড়ি চালাচ্ছে এবং প্রশাসনকেও মাঝে মধ্যে আইন প্রয়োগে নির্লিপ্ত দেখা যাচ্ছে। দেখে শুনে মনে হচ্ছে, করোনা প্রতিরোধের চেয়ে এর বিস্তারেই যেন সবাই ভূমিকা রেখে চলেছে। এমতাবস্থায় অন্তত আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সরকারকে কঠোর হতে হবে। জনগণের কল্যাণে গৃহীত আইন প্রয়োগে কোন প্রকার শৈথিল্য কাম্য নয়। বিকে মেইন রোড, খুলনা থেকে
×