ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা হচ্ছে না

প্রকাশিত: ২২:৪২, ২৬ আগস্ট ২০২০

এবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা হচ্ছে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক ও ইবেতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না। মঙ্গলবার এমন ঘোষণা দিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেছেন, সমাপনী পরীক্ষার বদলে স্কুলে স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে সমাপনী পরীক্ষা না হওয়ায় প্রাথমিকে এবার বৃত্তিও দেয়া হবে না। তবে উপবৃত্তি দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের পর মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এবার সমাপনী পরীক্ষা না নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন। এসময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ আকরাম-আল-হোসেন উপস্থিত ছিলেন। করোনার কারণে আগামী নবেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা এবার না নেয়ার জন্য গত ১৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব করে সার-সংক্ষেপ পাঠিয়েছিল মন্ত্রণালয়। সারসংক্ষেপ জমা দিয়ে সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’ সারসংক্ষেপে বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু দেশ কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় খুলেছে। জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও দক্ষিণ কোরিয়া বিদ্যালয় খুললেও সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে আবার বন্ধ করেছে। সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশে এখনও বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি। সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যালয় খুলে দেয়া হলেও অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে না-ও পাঠাতে পারেন। এতে যারা বিদ্যালয়ে যাবে এবং যারা যাবে না, তাদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হবে। সংশোধিত পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা নিতে হলে আরও প্রায় ৫০ কার্যদিবস পাঠদান প্রয়োজন। সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যালয় খোলা না গেলে যে কার্যদিবস পাওয়া যাবে, তাতে নবেম্বর-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পঞ্চম শ্রেণীর অবশিষ্ট পাঠদান সম্ভব হবে না। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দেন। এরপরই ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণে সার্বিক পরস্থিতি বিবেচনা করে এবারের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ না করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। অতএব আমরা পিইসি পরীক্ষাটা নিচ্ছি না, এ বছর স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষাগুলো নেব। পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ায় পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়া হবে না। এবার পঞ্চমের দুই সমাপনী পরীক্ষার ২৯ লাখ শিক্ষার্থীর অংশ নেয়ার কথা ছিল। এমসিকিউ পদ্ধতিতে বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হবে কি না- প্রশ্নে সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, এটা স্কুল কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে, আমরা তাদের দায়িত্ব দেব। শিক্ষকরা যেভাবে প্রশ্ন করবেন, সেভাবেই হবে, স্ব-স্ব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ সিদ্ধান্ত দেবেন। তিনি বলেন, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিকে (নেপ) তিনটি বিকল্প পাঠ পরিকল্পনা করতে বলেছিলাম। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং নবেম্বর মাসের জন্য তিনটি পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছিল। যেহেতু সেপ্টেম্বরে এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি, তাই সেপ্টেম্বরকে বিকল্প হিসেবে ধরছি না। অক্টোবর এবং নবেম্বরকে সামনে রেখে যে পাঠ পরিকল্পনা করেছি, সেটাকে সামনে রেখে, সেটার ভিত্তিতে প্রত্যেকটা স্কুল ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত প্রশ্নপত্র করে পরীক্ষা নেবে। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। কয়েক দফা বাড়িয়ে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একসঙ্গে বসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জানিয়ে আকরাম-আল-হোসেন বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেব কবে স্কুল খুলতে পারব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কীভাবে স্কুল খোলা যায়, সেই নীতিমালা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে আমরা এটা জারি করব। স্কুল রি-ওপেনিং হলে কী কী করতে হবে সেটা ওই নীতিমালার মধ্যে বলা আছে। প্রত্যেকটা স্কুলকে বলেছি নিজেদের মতো করে রি-ওপেনিং প্ল্যান করতে। কারণ একেক স্কুলের ছাত্র সংখ্যা একেক রকম। এসব বিবেচনায় নিয়ে তারা পরিকল্পনা করবেন। এদিকে চলতি বছরের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার বিষয়েও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর উদ্যোগের কথা জানান কর্মকর্তারা। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, জেএসসি ও জেডিসি, এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এ্যাপ্রোপ্রিয়েট অথরিটির এ্যাপ্রুভাল এবং এ্যাপ্রোপ্রিয়েট অথরিটির মাধ্যমেই এ বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হবে। এদিকে করোনার কারণে ঘোষিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ আগস্ট। ফলে আগামী সেপ্টেম্বরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে কিনা সেই প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আলোচনার কেন্দ্রে আছে এ বিষয়টি। একই সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা করোনার মধ্যেই শুরু হবে কিনা সেই প্রশ্নও আছে আলোচনার কেন্দ্রে। ঠিক এক এক অবস্থায় রবিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেপ্টেম্বরে না খোলার পক্ষেই মত দুই মন্ত্রণালয়ের। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ আকরাম-আল-হোসেন বলেছেন, সেপ্টেম্বরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
×